বাঘার পদ্মা নদীতে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরার অভিযোগ


আমানুল হক আমান, বাঘা:
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মা নদীতে একদিকে চলছে ইলিশ নিধন। অন্যেিদক চলছে অভিযান। এদিকে বাঘা উপজেলার পদ্মার জলসীমায় প্রবেশ করে ভারতের জেলেরা নৌকা নিয়ে ইলিশ শিকার করছেন বলে অভিযোগ করেন উপজেলার মৎস্যজীবীরা।


জানা যায়, পদ্মা নদীতে বিকেল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে এক দফা নদীতে জাল ফেলে সন্ধ্যায় জাল তুলে মাছ বিক্রি করা হচ্ছে। রাতে আরেক দফা নদীতে জাল ফেলে সকালে মাছ নিয়ে তীরে আনা হয়। কেউ নৌকা থেকে নামিয়ে নদীর তীরের ঝোপ-জঙ্গলে ও কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়। কিছু ব্যক্তি মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল গিয়ে এসব মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এ দিকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসন পুলিশ ও বিজিবি সাথে নিয়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।

২৬ কিলোমিটার পদ্মার সীমানা হওয়ায় একদিকে অভিযানে গেলে অন্যদিকে অসাধু জেলেরা জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন বলে জানা মৎস্য কর্মকর্তা। বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ৮টায় সরেজমিন দেখা গেছে, পদ্মা থেকে ইলিশ শিকার করে আসা নৌকাগুলো সারিবদ্ধভাবে কালিদাশখালি মৌজায় চকরাজাপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে নোঙর করে আছে। নোঙর করা প্রতিটি নৌকায় মাছ সংরক্ষণ করার বাক্স আছে। তারা খুব সাবধানে জেলের শিকার করা ইলিশ মাছ বের করে দিচ্ছেন ক্রেতাদের।

আলাইপুর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, নদী পাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমের দিকে পদ্মা নদীতে মা ইলিশ শিকার করছে জেলেরা। অনেক ক্রেতাই ঘাট থেকে এসব ইলিশ কিনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

মৎস্য অধিদপ্তরের অভিযানে জাল ও ইলিশ আটক করলেও থেমে নেই ইলিশ ধরা। অভিযান পরিচালনার আগেই খবর পৌঁছে যাচ্ছে জেলেদের কাছে। নিষিদ্ধ এ সময়ে ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ ও বিক্রি বন্ধে যারা কাজ করবে, তাদের সহযোগিতায়ই নদীতে অবাধে মা ইলিশ শিকার করছে জেলেরা।

এ বিষয়ে রহমান খান নামের এক জেলে জানান, সারা বছর মাছ ধরার কাজ করে সংসার পরিচালনা করি। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া চলে এ মাছ ধরার আয় থেকে। বর্তমানে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় নিরুপায় হয়ে পড়েছি।

সাহাবাজ নামের আরেক জেলে জানান, এলাকার বেশিরভাগ জেলে প্রতিদিনের রোজগার দিয়েই সংসার চালায়। মাছ সরবরাহ ভালো থাকলে আয়ও ভাল হয়। মাছ না ধরলে পরিবার পরিজন নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার যোগাতে হিমশিম খেতে হয়। নিষিদ্ধ সময়ে মাত্র ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

বাঘা উপজেলার সরেরহাট মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতের জেলেরা আমাদের সীমানার মধ্যে এসে মাছ ধরেন। আর আমরা নৌকা তুলে রেখেছি। এ বিষয়ে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে কয়েক বছর ধরে স্বারকলিপি দিচ্ছি। তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

পদ্মার পলামিফতেপুর চরের জেলে শহিদুল হক, গাওপাড়া গ্রামের নুর হোসেন, মুক্তার হোসেন, জহুরুল হক, আলাইপুর-কিশোরপুর গ্রামের মিলন হোসেন, আলেখ আহম্মেদ বলেন, ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত পদ্মায় ইলিশ প্রজনন আসে। তাই সরকার ২২ দিন ইলিশ শিকার, আহরণ, পরিবহন, মজুত ও ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছেণ আমরা এ আইনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পদ্মায় ইলিম মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি। কিন্তু ভারতীয়রা নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করছে।

বাঘা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘হাট-বাজারে কোথাও ইলিশ বিক্রি হচ্ছে না। তবে চুরি করে কিছু জেলে মাছ ধরছে। ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত পদ্মার নদীতে এ অভিযান চলবে। তবে ৯-২৩ অক্টোবর দুপুর পর্যন্ত ১৬টি অভিযান ও ৫টি মোবাইল কোট পরিচালনা করে ৭৪ কেজি ইলিশ মাছ, ৪৭ হাজার মিটার জাল, ১১ জেলের জরিমানা, ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যেই কিছু অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ শিকার করছে। তবে চারঘাটের ঘটনার পর থেকে ভারতীয় জেলেদেও পদ্মা নদীতে আর তেমন দেখা যাচ্ছেনা। তবে এ ঘটনার আগে তারা নির্বিঘ্নে ইলিশ মাছ ধরেছেন।


শর্টলিংকঃ