বিল না পেয়ে রাজশাহী চিনিকল অফিসে চাষীদের তালা


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী চিনিকলে আখ বিক্রি করে বিল পাচ্ছেন না চাষীরা। ফলে আখচাষীরা একত্রিত হয়ে গত ২৭ মার্চ সকালে বাঘার আড়ানী সাবজোন অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। গত তিন দিন ধরে ওই সাবজোন অফিস তালাবদ্ধ থাকলেও তা খোলার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

ফলে বাঘা উপজেলার এই সাবজোনের ৮টি আখ ক্রয় কেন্দ্রের চাষীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এ ঘটনার পর আখ ক্রয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাঘা উপজেলার শতাধিক কৃষক আখ কেটে রাখলেও বিক্রি করতে পারছেন না।

চাষীরা বলছেন- কয়েক হাজার মণ আখ কেটে মাঠে ফেলে রাখায়, তা শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে তা বিক্রি করা না গেলে বিক্রয় অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আড়ানী সাবজোনের অধীনে ৮টি আখ ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এ আখ ক্রয় কেন্দ্রে এক হাজার ৫০০ জনেরও বেশি চাষী তাদের আবাদকৃত আখ বিক্রি করে থাকেন।

তারা ম্যাসেজের মাধ্যমে পূর্জি (আখ বিক্রির রশিদ) পেয়ে সেই অনুযায়ী আখ সরবরাহ করেছেন। তাদের আখ দেওয়ার প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হলেও কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। নিরুপায় হয়ে চাষিরা আড়ানী সাবজোন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন।

চিনিকল সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী চিনিকলে গত বছরের ২৩ নভেম্বর থেকে আখমাড়াই শুরু হয়। এর একদিন আগে থেকে আখ ক্রয় কেন্দ্রগুলোতে কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় কার্যক্রম শুরু করে। প্রথম দিকে দুই-একটি বিল চাষীদের দেওয়া হলেও পরে আর কোনো বিল দেওয়া হয়নি।

আড়ানী আখ ক্রয় কেন্দ্রের অধীনস্থ কুশাবড়িয়ার আখচাষী রুবেল আলী, নূরনগরের বজলুর রহমান, পাঁচপাড়া  ইউনিটের আব্দুল মালেক শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরে অভিযোগ করেন, তারা প্রত্যেকেই চিনিকল থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পাবেন। পূর্জি অনুযায়ী আখ বিক্রি করেছেন, তবে কোনো টাকা পাননি। বারবার টাকার জন্য তাগাদা দেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষের কোনো সাড়া মেলেনি। তাই তারা অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

তারা জানান, তারা ধার-দেনা করে আবাদ করেন। আখ বিক্রি করে পাওয়া টাকা দিয়ে ধার পরিশোধ করার প্রত্যাশায় ছিলেন। তা এখন পারছেন না। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। চিনিকল কর্তৃপক্ষ টাকা পরিশোধ না করার পর্যন্ত তারা অফিসের তালা খুলতে দিবেন না বলেও জানান।

আড়ানী আখ ক্রয় কেন্দ্রের সাবজোন প্রধান রুস্তম আলী শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুরে বলেন, পূর্জি অনুয়ায়ী সিআইসি আখ ক্রয় করেছে। সেই মোতাবেক বিলও দিয়েছেন। টাকা পরিশোধ করবেন চিনি কল কর্তৃপক্ষ।

‘অফিসে কাজ করার সময় চাষীরা এসে আমাদের বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা বলেছে, বাড়ি চলে যেতে। এরপর আর কোনো নির্দেশনা না আসায় অফিসে যাচ্ছি না’ বলেন তিনি।

রাজশাহী চিনি কলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশফাকুর রহমান বলেন, রাজশাহী চিনিকলের অধীনে চাষিরা প্রায় ২৬-২৭ কোটি টাকা পাবে। হেড অফিস থেকে আমাদের কাছে টাকা সরবরাহ করা হয়নি। টাকা পেলে তাৎক্ষণিক চাষিদের দেওয়া হবে।

তবে কবে নাগাদ এই টাকা চাষীরা পেতে পারে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছুই জানাতে পারেন নি চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।


শর্টলিংকঃ