ভালো টিভি চেনার উপায় কী?


ইউএনভি ডেস্ক:

আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা না থাকলে নতুন ও ভালোমানের টেলিভিশন কেনা কঠিন হতে পারে। কারণ এখন বাজারে নানা রকম সুবিধার, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ও হরেক দামের টিভি পাওয়া যায়। সঠিক দামে সেরা টিভি কেনার ক্ষেত্রে অনেক কিছু কিছু বিষয় যাচাই করে নিতে হয়। ভালো টিভি কিনতে হলে যে দিকগুলো লক্ষ্য রাখা সবচেয়ে জরুরি তা হলো—ব্র্যান্ড, ডিসপ্লে, আইপিএস ও নন-আইপিএস ডিসপ্লে, ডিসপ্লে ভিউ অ্যাঙ্গেল, অ্যান্ড্রয়েড/স্মার্ট টিভি, ফিচার, সাউন্ড কোয়ালিটি।

ভালো টিভি চেনার আরেকটি উপায় আছে। সেটি হচ্ছে অনলাইনে রিভিউ পড়ে নেওয়া। অনলাইনে জরিপের মাধ্যমে বা টেলিভিশন কোম্পানিগুলোর পেজ রিভিউ দেখেও ধারণা করা যাবে কোন টিভিটা ভালো এবং আপনার জন্য প্রযোজ্য।প্রায় এক যুগ ধরে বছর ধরে টেলিভিশনের সেলস সেন্টারে কাজ করেন আনোয়ার হোসেন, তপন বিশ্বাস ও মোস্তফা মিয়াজী। তাদের ভাষ্যমতে, ব্যবসায়ীরা সবসময় তার লাভ যেটায় বেশি থাকবে সেটাই বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। এক্ষেত্রে ক্রেতাদেরই দায়িত্ব বেশি। অল্পস্বল্প করে হলেও নিজেই যাচাই-বাছাই করে এবং খুঁটিনাটি বিষয় দেখে টিভি কেনা উচিত। কারণ এতো টাকা দিয়ে টিভি তো কেউ কিছুদিন পরপরই কিনতে যাবেন না। তাই কোন টিভি ভালো হবে বা ভালো সার্ভিস দেবে তা আগে থেকেই জেনে নেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

কোন ব্র্যান্ডের টিভি ভালো

বর্তমান বাজারে অনেক রকম সুবিধার আলাদা আলাদা ব্র্যান্ডের টিভি দেখতে পাওয়া যায়। তবে কোন ব্র্যান্ডের টিভি ভালো বা কোনটা খারাপ সেটা সরাসরি বলা সম্ভব নয়। কিছু টিভি ব্র্যান্ড আছে যেগুলো অধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আর সেই জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের টিভিই কেনা উচিত বলে মনে করেন অভিজ্ঞ বিক্রেতারা। কারণ যেকোনও ব্র্যান্ড কেবল তখনই জনপ্রিয়তা পায় যখন সেই ব্র্যান্ডের সার্ভিস, প্রোডাক্ট কোয়ালিটি এবং ফিচার অনেক ভালো থেকে থাকে। তাই বাজারে এরকম অনেক জনপ্রিয় টিভি কোম্পানি রয়েছে যেগুলোর সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত।

এছাড়া ইন্টারনেটে আলাদা আলাদা কোম্পানির রিভিউ দেখে কোন কোম্পানি ভালো বা খারাপ সেটা জেনে নিতে পারবেন। এমনিতে বর্তমান সময়ে প্রচুর নতুন নতুন কোম্পানি চলে এসেছে যারা অনেক কমদামে এলইডি, স্মার্ট টিভি বিক্রি করছে। তবে কোনও নতুন কোম্পানির থেকে টিভি নেওয়ার আগে অবশ্যই অনলাইন রিভিউ দেখে নিতে হবে। আপনার শহরে সেই কোম্পানির সার্ভিস সেন্টার আছে কি না সেটাও দেখতে হবে।

ডিসপ্লে

টিভি নিয়ে যখন কথা বলা হয় তখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বা অংশটি হলো ডিসপ্লে। টিভির ডিসপ্লে কেবল এই জিনিসটির ওপরেই নির্ভর করছে যে আপনি কী রকম ডিসপ্লে থাকা টিভি কিনেছেন। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টেলিভিশনে আলাদা রকমের টিভি ডিসপ্লে হতে পারে। ডিসপ্লে টাইপ সেই প্রযুক্তির সঙ্গে জড়িত যার মাধ্যমে টিভি স্ক্রিনে পিকচার প্রডিউস হয়ে থাকে। টিভির ডিসপ্লে কোয়ালিটি যতটা ভালো থাকবে, ততটাই স্পষ্ট, পরিষ্কার এবং আকর্ষণীয়ভাবে পিকচার বা ছবি দেখা যাবে।

বর্তমান সময়ে তিনটি আলাদা রকমের ডিসপ্লে টাইপ টিভি রয়েছে। এলইডি, ওএলইডি, কিউএলইডি। এই তিনটির ক্ষেত্রেই এলইডি টেকনিক ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে এদের মাধ্যমে তৈরি হওয়া পিকচার এবং ইমেজ কোয়ালিটি আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। এলইডি, ওএলইডি, কিউএলইডির কোন কোয়ালিটির ডিসপ্লে রয়েছে সেই হিসেবেই টিভির দাম কম-বেশি হয়ে থাকে।

বেশিরভাগ এলইডি টিভি বাজেটের মধ্যে থেকে ভালো পিকচার কোয়ালিটি দিয়ে থাকে। তবে যদি হাই কোয়ালিটির সিনেম্যাটিক পিকচার কোয়ালিটি চান, তাহলে ওএলইডি বা কিউএলইডি টিভির সঙ্গে যেতে পারেন। কেননা পিকচার কোয়ালিটি, হায়ার ব্রাইটনেস, বেস্ট ভিউইং অ্যাঙ্গেলের ক্ষেত্রে এলইডি ডিসপ্লের তুলনায় ওএলইডি এবং কিউএলইডি সেরা। তাই টিভি কেনার আগেই আপনার টিভিতে কোন ডিসপ্লে টাইপ রয়েছে সেটা দেখে নেবেন।

আইপিএস ও নন-আইপিএস ডিসপ্লে

আইপিএস ডিসপ্লে এমনিতে অধিক দামী হয়ে থাকে। যদিও এর ডিসপ্লে কোয়ালিটি, ভিউইং অ্যাঙ্গেল, কালার কোয়ালিটি বেশ ভালো। আইপিএস ডিসপ্লেগুলো দেখতেও অনেক আকর্ষণীয় এবং স্পষ্ট ছবি দিয়ে থাকে। যদি টিভির ভিউইং অ্যাঙ্গেল নিয়ে চিন্তা হয় তাহলে আইপিএস ডিসপ্লে সবচেয়ে ভালো হবে। কেননা এক্ষেত্রে ভালো ভিউইং অ্যাঙ্গেলের এর সঙ্গে সঙ্গে অধিক ভালো কালার ডেলিভারির সুবিধা পাওয়া যাবে।

তবে নন-আইপিএস ডিসপ্লে প্যানেলগুলোকে টিভির দাম কম রাখার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ বাজেট স্মার্ট টিভিতেই নন-আইপিএস ডিসপ্লে প্যানেল দেখা যায়। আর মনে রাখতে হবে, আইপিএস ডিসপ্লে প্যানেলের তুলনায় নন-আইপিএস ডিসপ্লে প্যানেলগুলো তুলনামূলকভাবে তেমন ভালো কালার ডেলিভারি এবং ভিউইং অ্যাঙ্গেল দিতে পারে না। তাই স্মার্ট টিভি যদি কেনার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে আইপিএস ডিসপ্লে থাকা টিভি কেনাই সবচেয়ে ভালো হবে।

ডিসপ্লে ভিউ অ্যাঙ্গেল

যখন বাজেটের মধ্যে একটি ভালো স্মার্ট টিভি কেনার কথা আসে, তখন বাজারে অসংখ্য টিভির মডেল চোখে পড়বে। তবে প্রত্যেক বাজেট স্মার্ট টিভির মধ্যে আলাদা আলাদা ফিচার, ফাংশন এবং অপশন রয়েছে। এরকম একটি জরুরি ফিচারের নাম হলো ডিসপ্লে ভিউ অ্যাঙ্গেল। যদি টিভির ভিউইং অ্যাঙ্গেল কম থাকে বা উচ্চ মানের থাকে না, তখন কিন্তু টিভির প্রত্যেক সাইড থেকে দেখলে স্পষ্টভাবে ইমেজ বা পিকচারগুলো দেখা যাবে না। যখন ডান বা বাম পাশ থেকে কোনাকুনিভাবে টিভি দেখবেন, তখন অন্ধকার অন্ধকার ভাব হবে। মূলত একেবারে টিভির সোজাসোজি বসে টিভি দেখলেই স্পষ্টভাবে পিকচার ব্রাইটনেস এবং ইমেজ কালারগুলো দেখতে পারবেন।

এক্ষেত্রে যখনই টিভি কিনতে যাবেন তখন সেই টিভিটি চালিয়ে কোনাকুনিভাবে প্রথমেই দেখে নিন। যদি ওপর-নিচ এবং ডান-বাম প্রত্যেক কোনা থেকে টিভির পিকচার , ব্রাইটনেস ও ইমেজ স্পষ্টভাবে দেখা ও বোঝা যায় তাহলে সেই টিভিতে ভালোমানের ভিউইং অ্যাঙ্গেল রয়েছে।

অ্যান্ড্রয়েড ও স্মার্ট টিভি

এখন স্মার্ট টিভি বলতে বাজারে মূলত দুই ধরনের স্মার্ট টিভি দেখা যায়। যেমন— একটি সাধারণ স্মার্ট টিভি এবং একটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি। সাধারণ স্মার্ট টিভিগুলো লিনাক্স-এর অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা কাজ করে থাকে এবং এগুলোতে কেবল কিছু সিলেক্টেড অ্যাপস ইনস্টল করে দেওয়া হয়। কোম্পানির দিয়ে দেওয়া অ্যাপস এবং সেবাগুলো ছাড়া এই সাধারণ টিভিগুলোতে অন্য কোনও ধরনের অ্যাপ বাইরের থেকে ইনস্টল করা যাবে না।

তবে একটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি সম্পূর্ণভাবে একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের মতোই কাজ করে থাকে। এই ধরনের এলইডি স্মার্ট টিভিগুলোতে নিজের থেকে গুগল প্লে স্টোর এর মাধ্যমে যেকোনও অ্যাপ ডাউনলোড করে ইনস্টল করা যাবে। টিভি দেখার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ, অনলাইন স্ট্রিমিং অ্যাপস ডাউনলোড করে সেগুলোর আনন্দ নেওয়া যাবে। তাই আজকাল সবাই স্মার্ট টিভি বলতে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভিই বেশি পছন্দ করে থাকেন।

ফিচার

একটি স্মার্ট টিভির মধ্যে কিছু জরুরি ফিচার থাকা জরুরি এবং একটি বাজেট স্মার্ট টিভিতে এগুলো থাকবে। টিভিতে এইচডিএমআই পোর্ট আছে কি না সেটা দেখতে হবে এবং যদিও আছে তাহলে কয়টা আছে তা দেখতে হবে। এইচডিএমআই এর মাধ্যমে টিভির সঙ্গে মাল্টিপল স্ক্রিন যুক্ত করতে পারবেন। এছাড়া যদি টিভিটি কম্পিউটারের সিপিইউ’র সঙ্গে সংযুক্ত করে মনিটর হিসেবে ব্যবহার করতে চান, তাহলেও এইচডিএমআই পোর্টের প্রয়োজন হবে। টিভিতে পেন ড্রাইভ বা এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ যুক্ত করার জন্য স্লটস রয়েছে কি না সেটা দেখুন। এতে পেন ড্রাইভ বা এক্সটার্নাল হার্ডডিস্কের মাধ্যমে সিনেমা বা কোননও কিছু নিজের টিভিতে দেখা যাবে।

এছাড়া যদি টিভিতে ব্লুটুথের ফিচার দেওয়া থাকে তাহলে সেটাও কাজে আসবে বিভিন্ন ব্লুটুথ ডিভাইসের সঙ্গে টিভিকে কানেক্ট করার ক্ষেত্রে। এছাড়া ক্যাবল বা ডিটিএইচ কানেকশন ছাড়া যাতে প্রচুর মুভি, সিরিজ ভিডিও ইত্যাদি দেখতে পারা যায়। তার জন্য কিছু জরুরি ইনবিল্ড অ্যাপ রয়েছে কিনা সেটা দেখুন। যেমন— নেটফ্লিক্স, প্রাইম ভিডিও, ডিজনি প্লাস হটস্টার, জি ফাইভ, জিও সিনেমা, ইউটিউব ইত্যাদি।

এছাড়া অন্যান্য কিছু ফিচার যেমন— থিন ভেজেল্স, ব্লুটুথ রিমোট, ভয়েস সার্চ উইথ গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, হেডফোন জ্যাক, অ্যানালগ অডিও ইনপুট, বিল্ট ইন ওয়াইফাই, ইথারনেট, স্টেরিও সাউন্ড এই ধরনের কিছু বেসিক ফিচার থাকলে ভালো।

সাউন্ড কোয়ালিটি

যেকোনও স্মার্ট টিভিতে একটি সাউন্ড সিস্টেম থাকে। ছবির সঙ্গে সঙ্গে ভালো মানের সাউন্ড টিভির ভেতর থেকেই শোনা যেতে পারে, আলাদা সাউন্ড বক্স লাগে না। এক্ষেত্রে যেই স্মার্ট টিভি কেনার কথা ভাবছেন, সেই টিভির সাউন্ড কোয়ালিটি আগের থেকেই দেখতে হবে। যদি টিভির মধ্যে থাকা স্পিকার পেছনের দিকে থাকে, তাহলে সেই টিভি থেকে ভালো সাউন্ড নাও পাওয়া যেতে পারে।

এছাড়া অনেক স্মার্ট টিভির স্পিকার টিভির নিচের অংশে থাকে। সামনের দিকে থাকলে ভালো সাউন্ড পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, স্পিকারের ওয়াট যত বেশি থাকবে ততটাই বেশি ও ভালোমানের সাউন্ড সেই স্পিকার থেকে পাওয়া যাবে। তাই এমন টিভি কিনতে হবে যেখানে কমেও ২০ থেকে ৩০ ওয়াটের স্পিকার আউটপুট রয়েছে। এর সঙ্গে স্টেরিও সারাউন্ড সাউন্ড থাকলে আরও ভালো অনুভব হবে।

অনলাইন রিভিউ

ভালো টিভি চেনার ও কেনার ক্ষেত্রে অনলাইন রিভিউ দেখাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেকোনও স্মার্ট টিভির ক্ষেত্রে তার মডেল দেখে সেই টিভির অনলাইন রিভিউ দেখলে ধারণা পাওয়া যাবে সেই টিভিটা কেমন। অনলাইনে সেই টিভির সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটি ফিচার এবং ফাংশন বিষয়ে জেনে নেওয়া যাবে। এছাড়া টিভির ডিসপ্লে কোয়ালিটি ও সাউন্ড নিয়ে মানুষের দেওয়া রিভিউ বা মতামতগুলো দেখেই বোঝা যাবে যে বিক্রেতা ভালো টিভির মডেল দেখাচ্ছেন নাকি খারাপ।

বিভিন্ন অনলাইন ই-কমার্স ওয়েবসাইটে গিয়ে টিভির বর্তমান দাম দেখে নিতে পারবেন। এভাবে অনলাইনে টিভির মডেলের দাম দেখে নিলে সহজেই বোঝা যাবে বিক্রেতা অধিক দাম নিয়ে আপনাকে ঠকাচ্ছেন কিনা। তাই বিক্রেতা যে টিভির মডেল আপনাকে দেখাচ্ছেন সেগুলোর রিভিউ, গ্রাহকের মতামত এবং দাম অনলাইনে অবশ্যই দেখে নিতে ভোলা যাবে না।


শর্টলিংকঃ