রেলের তিন কর্মকর্তা বরখাস্ত ১০ জনের নামে মামলার নির্দেশ


ইউএনভি ডেস্ক:

আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে পশ্চিমাঞ্চল রেলের তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- সাবেক কন্ট্রোলার অব স্টোরস (সিওএস) প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকার, সাবেক চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) এএমএম শাহনেওয়াজ, সাবেক সহকারী কন্ট্রোলার অব স্টোরস (এসিওএস) মো. জাহিদ কাওছার। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত আরও ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

অভিযুক্ত ১০ জন হলেন-পশ্চিমাঞ্চল রেলের এসিসিএমসিআর শেখ আবদুল জব্বার, ডেপুটি সিওপিএস মোছা. হাসিনা খাতুন, ডিএমএ হেডকোয়ার্টার শ্যামলী রানী রায়, এফএএন্ডসিএও মো. শরিফুল ইসলাম, ডেপুটি সিসিএম ফুয়াদ হোসেন আনন্দ, ডিএফএ অর্থ মো. আলমগীর, এফএএন্ডসিএও মো. মসিহ-উল-হাসান, অতিরিক্ত এফএএন্ডসিএও মো. গোলাম রহমান, অতিরিক্ত এফএএন্ডসিও গোলাম রাব্বানী ও সাবেক সিসিএম ও বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম মিহির কান্তি গুহ। ২৯ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলের জন্য ২০টি আইটেম কেনায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি ট্রেন পরিচালনায়ও ঝুঁকি বাড়ে। কেনাকাটার ঘটনা তদন্তে ২০ সেপ্টেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি গত বছরের ৯ ডিসেম্বর রেলপথমন্ত্রীর কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন জানান, দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে আমি জিরো টলারেন্সে বিশ্বাসী। দায়ীদের কেউ রেহাই পাবে না। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যেসব কমিটির রিপোর্টে সুপারিশ এসেছে-সবই কার্যকর করা হবে। বর্তমান সরকার রেলে ব্যাপক উন্নয়ন করছে। দুর্নীতি-অনিয়মে সেই উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ হবে-তা মেনে নেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে রেলওয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে বার্তা পৌঁছেছে-দুর্নীতি-অনিয়ম যারাই করবে-তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

রেলপথ সচিব মো. সেলিম রেজা যুগান্তরকে জানান, রেলে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে যে উন্নয়ন করছেন-তারই ধারাবাহিকতায় রেলে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ-বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দুর্নীতি-অনিয়মের জন্য এমন সফলতা নষ্ট হতে পারে না। আজীবন দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স থাকব। রেলপথমন্ত্রীর নির্দেশনায় রেলে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।

উপসচিব মুহাম্মদ আব্দুস সালাম জানান, তদন্ত রিপোর্ট সুপারিশ অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সাবেক উচ্চমান সহকারী মো. আল আলামিন তালুকদারকে বরখাস্তের জন্য রেলপথ বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলের সাবেক জিএম খন্দকার শহিদুল ইসলাম, একই অঞ্চলের সাবেক জিএম মো. মজিবুর রহমান ও মো. খায়রুল আলম অবসরে চলে যাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কী কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়-সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখিত সাবেক এ তিন জিএমের বিরুদ্ধেও তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে-তারাও অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

উল্লেখিত রেলের ১৭ কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয় তদন্তে রিপোর্টে। রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ১৩৩ টাকার তালা ৫৫০০ টাকা, ২০০ টাকার বালতি ১৮৯০, ৫০ টাকার বাঁশি ৪১৫, ৭৫ টাকার ঝাণ্ডা ১৪৪০ টাকায় ক্রয় করা হয়েছিল। একইভাবে ২০টি পণ্যও কেনা হয়েছে বাজারমূল্যের চেয়ে ১৫ থেকে ৩৩ গুণ বেশি দামে। বেশি দাম দেখানোয় সরকারের ক্ষতি হয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা। এ টাকা পকেটে তুলেছেন রেলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। ২৯ পাতার তদন্ত রিপোর্টে উঠে আসে ১০৮৫ টাকার এক একটি পর্দা কেনা হয় ১৭ হাজার ৯৯০ টাকায়। এদিকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, দুদক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনের আওতায় আনবে। দুদক নিজস্ব উদ্যোগে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে নামবে-এমনটা সাধারণ মানুষেরও প্রত্যাশা।

 


শর্টলিংকঃ