সবার চোখ আটকে আছে সাধারণ সম্পাদক পদের দিকেই


নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে শেষ সময়ে এখন ঘরোয়া রাজনীতি তুঙ্গে। সভাপতি পদে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে এবারো অপ্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু সবার চোখ এখন আটকে আছে সাধারণ সম্পাদকের দিকেই। আসন্ন সম্মেলনে এ পদে কার ভাগ্য খুলছে-ঘুরে ফিরে এমন প্রশ্নই নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। তবে রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে অতীতে যারা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন-এমন কাউকেই এ পদে  রাখা উচিত।

দলের নেতাকর্মীরা জানাচ্ছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তিন বছর পর অবেশেষে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে আগামীকাল রোববার। এজন্য ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে গোটা নগরী। এরইমধ্যে শেষ হয়েছে সকল প্রস্তুতিও। তবে এবার সাধারণ সম্পাদক পদটি যাচ্ছে কার দখলে- তা নিয়ে সরগরম দলীয় রাজনীতি। কারণ, এই শীর্ষ পদটি পেতে চান অন্তত এক ডজন নেতা। তবে এদের মধ্যে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে ঘিরেই তৃণমূলে আলোচনা বেশি। কারণ,  ২০১৪ সালের সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ডাবলু সরকার। এই ভোটে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাও তার কাছে পরাজিত হন। যা মহানগর আওয়ামী লীগের স্মরণকালের রাজনীতিতে রেকর্ড।

তার অনুসারীরা বলছেন, ডাবলুর  সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে রাজশাহীতে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ চাঙ্গা  হয়েছে। তিনি প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে শক্তিশালী সাংগঠনিকভিত্তি গড়ে তুলেছেন। নেতাকর্মীদের  ব্যক্তিগত সুখে-দুঃখেই পাশে আছেন। তার সঙ্গে দেখা সাক্ষাতে কোনো রকমেরই বাধায় পড়তে হয় না। একজন সাধারণ সমর্থকও তাকে সব সময়ই ফোনে পান। কথা বলতে পারেন।  ফলে ডাবলুকে ঘিরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ ও উদ্দীপনা বেশি। এ জন্য এবারের সম্মেলনে তাকে আবারো সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পেতে চান।

ডাবলু সরকার

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নিজের প্রার্থিতার কথা জানিয়ে ডাবলু সরকার ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের কাজ শুধু মিটিং-মিছিল করাই নয়। প্রধান কাজ হলো আদর্শভিত্তিক কর্মী তৈরি করা। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কাজ হলো সরকারের ভাল ভাল কাজগুলো জনগণের সামনে প্রচার করা। দলের পক্ষে জনমত তৈরি করা। সম্প্রতি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। যা দিয়ে বদলে যাবে রাজশাহী নগরীর চেহারা। এসব সুফলের কথা সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে। তাদের পাশে যেতে হবে। সময় দিতে হবে।বিগত সময়ে এই কাজটিই আমি করেছি। নেতা সেজে এসি রুমে বসে থাকলে তো চলবে না। আওয়ামী লীগের রাজনীতি কখনো বিলাসিতা পছন্দ করে না।বিলাসিতাকে আমিই প্রশ্রয় দিই না।   অঅমি পরিশ্রম করছি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে’।

সাম্প্রতিক সময়ে ওঠা নানা অভিযোগ সম্পর্কে ডাবলু সরকার বলছিলেন, ‘রাজশাহী এক সময় বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত ছিল। তাদের আগুন সন্ত্রাস ও রগ কাটার রাজনীতি দেখেছে সাধারণ মানুষ। ওই আমি রাজপথে থেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে এই অপশক্তিকে মোকাবেলা করেছি। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে খোদ মুক্তিযোদ্ধারাই এই অপপ্রচারের প্রতিবাদ করেছেন। একটি মহল আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এগুলো করছে। যার কোনো ভিত্তি নেই’।

আহসানুল হক পিন্টু

সাধারণ সম্পাদকের পদে এবার আলোচনায় আছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আহসানুল হক পিন্টুর নামও। পিন্টু এক সময়  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ক্লীন ইমেজ রয়েছে তার। তরুণ নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় আছেন।

আহসানুল হক পিন্টু বলেন, ‘আমি কখনো চাঁদাবাজি বা টেন্ডারবাজির মধ্যে ছিলঅম না। সব সময় ক্লিন রাজনীতি করেছি। তাই সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে আমি কাজ করতে চাই। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আর্শিবাদে রাজশাহীকে উন্নত শহরে পরিণত করেছেন তা সারাদেশে দৃষ্টান্ত। আমি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হলে দল আরো শক্তিশালী করবো। লিটন ভাইয়ের বিশ্বস্ত সহযোগীর মত কাজ করতে চাই’।

এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন

আর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে এবারো থাকতে চান সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।তবে রানিংমেট হিসেবে  সাধারণ সম্পাদক পদে কাকে চান- তা নিয়ে এখনো প্রকাশ্যে মুখ খোলেন নি। তবে ব্যক্তিগতভাবে গভীর সম্পর্ক আছে- এমন কাউকেই এ পদে দেখতে তিনি আগ্রহী বলে জানাচ্ছেন লিটনের ঘনিষ্ঠরা।  এরই মধ্যে তিনি ঢাকা গিয়ে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সাথে একান্তে কথা বলেছেন। তাদেরকে জানিয়েছেন, নিজের মতামতের কথাও। ঢাকা থেকে ফিরেই শুক্রবার সন্ধ্যায় মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সবশেষ সভায় যোগ দেন।

এ বিষয়ে খোলামেলা কিছু বলতে চান না মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন । তবে তিনি জানান,  ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে দলে যারা অনুপ্রবেশ করেছিল, তাদের আর ঠাঁই হবে না এবারের কমিটিতে।

অধ্যাপক ড. শাহ আজম শান্তনু

এদিকে রাজনীতি  বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. শাহ্ আজম শান্তনু বলছেন, এদেশের একটা বিরাট অংশই তরুণ। এই তরুণ প্রজন্মকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আকৃষ্ট করতে হলে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও তৃণমূলে জনপ্রিয় ব্যক্তিকেই নেতৃত্বে রাখা জরুরি। কারণ,  প্রযুক্তিনির্ভর এই প্রজন্ম নতুন কিছু চায়। তারা রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে বিমুখ হয়ে যাচ্ছে। কাজেই আওয়ামী লীগের উচিত হবে রাজশাহীতে এক সেট তরুণ ও অভিজ্ঞ নেতা বাছাই করা।

পহেলা মার্চ মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ এ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের  উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।


শর্টলিংকঃ