ডাকসু নির্বাচনের দিকে চেয়ে রাকসু প্রত্যাশীরা


রাবি সংবাদদাতা:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন প্রত্যাশীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনের দিকে চেয়ে আছেন। ডাকসু নির্বাচনের এই আমেজ রাকসু পুনর্গঠনেও জোরালো হাওয়া বইয়ে দিয়েছে। তাই ডাকসু নির্বাচনকে রাকসু পুনর্গঠনের পূর্বাভাস বলে মনে করছেন রাকসু সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু ভবন। ফাইল ছবি।

দীর্ঘদিন অচল থাকা ডাকসু নির্বাচনে কী হয়, তাই এখন দেখার অপেক্ষায় রাকসু প্রত্যাশীরা। আর ডাকসু নির্বাচনের সফলতা-ব্যর্থতার উপর ভিত্তি করেই মাঠ গোছানোর চিন্তাভাবনা ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের। রাকসু নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। দ্রুত নির্বাচনের জন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আগামী সপ্তাহ থেকেই ধারাবাহিকভাবে আলোচনায় বসবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রাকসু নির্বাচনের হালচাল নিয়ে গত দুইদিন ক্যাম্পাসের ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা হয়। ছাত্র নেতারা জানান, ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে রাকসুর জন্য তা একটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। দীর্ঘ ২৮ বছর বন্ধ থাকার পর ডাকসু নির্বাচনের যেই হাওয়া বইছে সেই হাওয়াতেই এবার রাকসু আদায়ের পরিকল্পনা তাদের। তবে ডাকসু নির্বাচনে কারা প্রার্থী ও ভোটার হতে পারছেন, প্রার্থীদের আচরণ বিধি কি রকম হচ্ছে, গঠনতন্ত্রের সংযোজন-বিয়োজন, গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষক সংস্থার ভূমিকা কি রকম হচ্ছে ও নির্বাচনী তফসিল ঘোষণাসহ সবদিকেই নজর রাখবেন তারা। ডাকসু নির্বাচন রাকসু নির্বাচনের গতিকেও ত্বরান্বিত করবে বলে প্রত্যাশা তাদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক মহব্বত হোসেন মিলন বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন যেহেতু আগে হচ্ছে সেহেতু আমরা এই নির্বাচনের দিকে দৃষ্টি রাখছি। নিবার্চনে কয়টি সংগঠন অংশগ্রহণ করলো, সংগঠনগুলো সমানভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলো কিনা এসব বিষয় আমরা পর্যবেক্ষণ করবো।’

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কারণে আমরা কোণঠাসা হয়ে আছি। রাকসু নির্বাচন হলে আমাদেরকে প্রচার-প্রচারণার সুযোগ করে দিতে হবে। দীর্ঘদিন পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যেহেতু ডাকসু নির্বাচন আগে হচ্ছে তাই আমাদের সেদিকে নজর থাকবে। এরপর পরিস্থিতি বুঝে আমাদেরকে মাঠ গোছাতে হবে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নেবো।’

রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা চাই শীঘ্রই রাকসু নির্বাচন হোক। ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে, রাকসুও হবে বলে আমরা আশাবাদী। আমরা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে স্মারকলিপিও দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন আগে হওয়ার কারণে আমাদের নজর অবশ্যই সেদিকে থাকবে।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘চলতি বছরেই রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব ওঠে আসবে। তারাই আগামীতে দেশের নেতৃত্ব দেবে। তারা নিজেদেরকে যতো দ্রুত গুছিয়ে নিতে পারবে ততো দ্রুত নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হবে।’

১৯৫৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র ১৪ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ১৯৮৯-৯০ সালে রাকসু নির্বাচন হয়েছিলো। এরপর প্রায় তিন দশক পেরিয়ে গেলেও আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রতি বছরই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

গঠনতন্ত্র জমা দিয়েছে দশটি সংগঠন:

গত ২২ জানুয়ারি রাকসু সংলাপ কমিটির সভা শেষে অধ্যাপক লুৎফর রহমান ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর কাছে তাদের নাম, নিবন্ধনপত্র ও গঠনতন্ত্র আহ্বান করেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এসব কাগজপত্র সংগ্রহ শেষ হয়। কমিটির কাছে গঠনতন্ত্র জমা দেয়া ১০টি সংগঠন হলো- বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কস),সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (লেলিন) বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বঙ্গবন্ধু প্রজন্মলীগ, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।

সংলাপ কমিটির আহ্বায়ক প্রক্টও অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘১০টি দলের কাগজপত্র পেয়েছি। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকেই সংগঠনগুলোকে সংলাপের জন্য ডাকা হবে।’

প্রক্টর জানান, কোন শিক্ষার্থী যদি এককভাবে নির্বাচন করতে চায় সেই সুযোগও রয়েছে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বিভাগের অনুমোদন লাগবে। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীকে তার বিভাগের সভাপতি কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি রাকসু সংলাপ কমিটির কাছে জমা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। তবে যদি বিভাগ থেকে সেই শিক্ষার্থীকে অযোগ্য কিংবা অছাত্র ঘোষণা করে তাহলে সে আর প্রার্থী হতে পারবে না।#


শর্টলিংকঃ