ইউএনভি ডেস্ক:
বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ বিজি-১৪৭ ফ্লাইট ছিনতাইকারী মাহাদী (২৬) সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মতিউর রহমান।

রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে আইএসপিআর জানায়, অভিযানের পর ছিনতাইকারীকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এ ঘটনার পর ছিনতাইকারী নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয় সাধারণ মানুষের মাঝে। সাংবাদিকদের কাছে দেয়া ব্রিফিংয়ে এ নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মতিউর রহমান।
তিনি বলেন, ছিনতাইকারীর বয়স আনুমানিক ২৫-২৬ বছর। ছিনতাইকারীকে নিবৃত্ত করার জন্য আমাদের কমান্ডো বাহিনী প্রথমে তাকে গ্রেফতার বা আত্মসমর্পণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু সে এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করলে স্বাভাবিকভাবেই যা হওয়ার তাই হয়েছে। আমাদের সঙ্গে গোলাগুলিতে প্রথমে আহত পরে সে নিহত হয়।
মেজর জেনারেল মতিউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় কোনো যাত্রী আহত হয়নি। বিমানে যাত্রী, পাইলট এবং কেবিন ক্রুসহ ১৪৮ জন ছিলেন। তাদের সবাই অক্ষত অবস্থায় বের হয়েছে। এতে যাত্রীদের কোনো ক্ষতি হয়নি। বিমানেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। বিমানটিকে চলাচলের জন্য নিরাপদ ঘোষণা করা হয়েছে।
কেন সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে?
এই অল্প সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে যতটুকু কথোপকথন হয়েছে, সে শুধু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল এবং তার (ছিনতাইকারীর) স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। এরপর আর তার সঙ্গে আমাদের কথা বলার সময় এবং সুযোগ ছিল না। আমরা শুধু দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ঘটনার অবসান ঘটাতে চেয়েছিলাম। এই কমান্ডো সেই কমান্ডো যারা হলি আর্টিজানে অভিযান পরিচালনা করেছিল আমরা তাদেরকেই এখানে পেয়েছিলাম এবং মাত্র ৮ মিনিটে অভিযান শেষ হয়।
ছিনতাইকারী কি দেশি না বিদেশি?
আমাদের পাইলট প্রথমে দেখে মনে করেছিলেন সে বিদেশি। কিন্তু আসলে সে দেশি। তার কাছে একটা পিস্তল ছিল। এছাড়া আমরা তার কাছে কিছু পাইনি।
সে কী যাত্রীদের কোনো ক্ষতি করতে চেয়েছিল?
সে যাত্রীদের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করেনি। তার একটাই দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলার। তাকে আমরা কমান্ডো পরিচালনা করা পর্যন্ত কনটিনিউওয়াসলি (নিয়মিত) ফোনে ব্যস্ত রেখেছিলাম।
তিনি বলেন, যে কোনো বিমান ছিনতাই ঘটনা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম কাজ হলো ছিনতাইকারীর সঙ্গে কথোপকথন করা এবং কথোপকথনের মধ্য দিয়ে ছিনতাইকারীকে ব্যস্ত রাখা। এই কাজটি বিমানবাহিনীর এয়ার ভাইস মার্শাল মুফিদুল আলম অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে করেছেন। যা আমাদের কমান্ডো অভিযান পরিচালনার পেক্ষাপট তৈরি করেছিল। এই অভিযানে ছিল, র্যাব, নৌবাহিনী, সোয়াত ছিল।
তার পরিবার কোথায় ছিল?
সেটা আমরা জানতে পারি নাই। সে ফোন নম্বরটাও দিতে পারেনি। এমন ঘটনার পর বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের প্রথম কাজ ছিল ঘটনার দ্রুত সমাধান করে বিমান চলাচল স্বাভাবিক করা।
বিমান ছিনতাই ঘটনা হলে দুটি কাজ করা করা হয়, ছিনতাইকারীর সঙ্গে কথোপকথন করা এবং পরিকল্পনা করা। সে হয়তো তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনটা আমাদের দিত, তার বাড়ি কোথায়, তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা কত, এগুলো কিছুই জানা যায়নি।
বিমান ছিনতাই হলে যাত্রীদের জিম্মি করা হয়, এখানে তো জিম্মি করা হয়নি। যাত্রীরা নেমে এসেছে।
আপনাদের কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে কিনা?
সে জিম্মি করেছিল। সে কেবিন ক্রুদের জিম্মি করেছিল। তার সঙ্গে কথা বলেছি আপনার সব কথা শোনা হবে। এটা বলে সবাই আমরা ভেতর থেকে বের করে নিয়ে এসেছি।
যাত্রীরা বলেছেন, অপারেশনের আগে সেখানে গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। বিমান ছিনতাই হওয়ার পরে যাত্রীরা অনেক কিছু শুনতে পারেন। এগুলো আমি বলব, মনের মধ্যে আতঙ্ক থেকে হয়।
সে তো যাত্রী ছিল, তার তো পরিচয় আছে?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরও আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। তার ব্যাগ খুঁজে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।
বিমানে ওঠার আগে অনেক পর্যায় পার হতে হয়, সে কী করে অস্ত্রসহ বিমানে উঠল? নিশ্চয়ই দেখা হবে সে কী করে ভেতরে চলে এলো। তদন্ত করলে চলে আসবে।
ছিনতাইকারী কীভাবে মারা গেল?
তিনি বলেন, ভেতরে তার সঙ্গে গোলাগুলি হলে আহত হয়। পরে সে বাইরে মারা যায়।