অবৈধভাবে চাকরি করছেন ড. বিজন


ইউএনভি ডেস্ক:

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্যোগে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি টেস্টের উদ্ভাবক দলের প্রধান অণুজীববিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল নাগরিকত্ব জটিলতায় পড়েছেন। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করলেও তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই।

২০০২-০৩ সালের দিকে তিনি বাংলাদেশি পাসপোর্ট সমর্পণ করে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। কোনো ধরনের ওয়ার্ক পারমিট বা এমপ্লয়মেন্ট ভিসা ছাড়াই গণস্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত আছেন বিজন কুমার। একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজন কুমার শীলের এমপ্লয়মেন্ট ভিসার মেয়াদ গত ১৬ মে শেষ হয়। এরপর গত ৮ জুলাই টিএফ (পরিবারসহ ভ্রমণ) ভিসার আবেদন করেন বিজন। তিনি টিএফ ভিসা পেয়েছেনও; যার মেয়াদ ২০২১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত। দেশের আইন অনুযায়ী টিএফ ভিসাধারী কেউ কোনো সংস্থার কাজ করতে পারেন না। ফলে এখন অননুমোদিতভাবে গণস্বাস্থ্যে চাকরি করছেন তিনি।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ড. বিজনের উদ্দেশে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. এস তাসাদ্দেক আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বলা হয়, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক কিনা তা সংশ্নিষ্ট তথ্যপ্রমাণসহ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র ও সব সনদের অনুলিপি চাওয়া হয় ওই চিঠিতে।

এরপর ১২ এপ্রিল গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত আরেকটি চিঠি বিজন কুমারকে প্রদান করা হয়। সেই চিঠিতে বলা হয়, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে বিজন কুমারকে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের সময় তিনি জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে পাসকৃত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সনদ ও বায়োডাটা ব্যতীত কোনো কাগজপত্র জমা দেননি।

জন্মনিবন্ধন সনদে বলা হয়, বিজনের জন্ম নাটোরের বড়াই গ্রামের কালিকাপুর। তার বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করা হয়- ২৮৮, বি, বুটিক বাটুক, সিঙ্গাপুর। চিঠিতে এও বলা হয়, ড. বিজন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠিতে জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিক। সিঙ্গাপুরের নাগরিক বিধায় ওয়ার্ক পারমিটের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন তিনি। তবে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদনের স্বপক্ষে কোনো কাগজপত্র জমা দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠিতে তাকে এটা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে এও জানান, তার দুটি ভিসা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এমপ্লয়মেন্টের ব্যাপারে কোনো তথ্য সেখানে নেই। তাই এ দেশে অবস্থানকালীন তিনি কোনো চাকরি করতে পারবেন না। এই তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, গত ১ জুলাই থেকে বিজন কুমারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেতন-ভাতাদি প্রদান ও তার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে ওয়ার্ক পারমিট পেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পারে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ড. বিজন কুমার শীল গতকাল শনিবার সমকালকে বলেন, আমার আদি বাড়ি বাংলাদেশে। নাটোরের বনপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছি। বাংলাদেশে পড়াশোনা করেছি। এখানে এক সময় চাকরিও করতাম। ২০০২-০৩ সালের দিকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট সমর্পণ করে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েছি। ওই দেশের নিয়ম অনুযায়ী একজন নাগরিকের দুই দেশের পাসপোর্টধারী হওয়ার সুযোগ নেই। তাই বাংলাদেশি পাসপোর্ট সারেন্ডার করতে হয়েছে। আমার স্ত্রী-সন্তানসহ তিনজন সিঙ্গাপুরের পাসপোর্টধারী। তবে আমার আরেক ছেলে বাংলাদেশি নাগরিক।

বিজন কুমার আরও বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশে আসেন তিনি। ট্যুরিস্ট ভিসায় দেশে এসেছিলেন। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হন। এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় গণস্বাস্থ্যের করোনা প্রজেক্টে কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার ওয়ার্ক পারমিটের জন্য সরকারের সংশ্নিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছে। ওয়ার্ক পারমিট বা এমপ্লয়মেন্ট ভিসা না মিললে সিঙ্গাপুরে ফেরত যাবেন তিনি।


শর্টলিংকঃ