অভিনেত্রী থেকে নেত্রী তারা


ইউএনভি ডেস্ক:

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বইছে ভোটের হাওয়া। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের এ হাওয়া আগের তুলনায় একটু বেশিই গরম। তৃণমূল কংগ্রেস নাকি বিজেপি? কে জিতবে নির্বাচনে- তা কোটি টাকার প্রশ্ন। তবে আমাদের আলোচনার বিষয়- উভয় দলেই তারকাদের প্রার্থী করার প্রবণতার আধিক্য।

অতীতে ভারতে নারী তারকারা নির্বাচন করেননি বা নেতা হননি তা নয়। তবে সম্প্রতি এ প্রবণতা অনেক বেড়েছে। এটা কি নারী নেতৃত্বকে উৎসাহিত করা নাকি তারকা তকমা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী আসন বাগিয়ে নেওয়ার কৌশল তা নিয়ে তর্ক হতেই পারে।

বিশ্বে ভারত এমন এক দেশ যেখানে নারীদের ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন করতে হয়নি। ফলে শুরু থেকেই দেশটির রাজনীতিতে নারী-পুরুষের অধিকার সমান। তবু ভারতের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ কেন কম? এর অন্যতম কারণ, রাজনীতির সহিংস প্রকৃতি। ভারতে পেশীশক্তির রাজনীতি চর্চা প্রায়ই দেখা যায়। ফলে পুরুষতান্ত্রিক পরিবারগুলো নারীদের রাজনীতি করতে নিরুৎসাহিত করে থাকে। এই যখন চিত্র তখন সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে সারি বেধে গ্ল্যামারাস নারীরা রাজনীতির ময়দানে আসছেন। গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড থেকে রাজনীতিতে আসা কিছু তারকাদের নিয়ে এ লেখা।

হেমা মালিনী

১৯৯৯ সালে পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর আসন থেকে লোকসভা নির্বাচনে বলিউড অভিনেতা এবং বিজেপি প্রার্থী বিনোদ খান্নার পক্ষে প্রচারণা চালান হেমা মালিনী। এর মাধ্যমে প্রথম গ্ল্যামারকন্যা হিসেবে তিনি রাজনীতির ময়দানে পা ফেলেন। এর কয়েক বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।

২০১৩ সালে হেমা মালিনী ভারতীয় সিনেমায় অবদানের জন্য অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার থেকে এনটিআর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত হেমা ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় সংসদের উচ্চ সভায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।

 

স্মৃতি জুবিন

স্মৃতি জুবিন ইরানি হলেন একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং নরেন্দ্র মোদি সরকারে বস্ত্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইরানি একজন প্রাক্তন মডেল এবং বেশ কিছু টিভি সিরিয়ালে কাজ করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি একজন প্রযোজকও। তার ‘উগ্রায়া এন্টারটেইনমেন্ট’ নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা রয়েছে। ইরানি আমেঠি আসন থেকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে পরাজিত করে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে জয় লাভ করেন তিনি। ইরানি ২০০৩ সালে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি মহারাষ্ট্র যুব শাখার সহসভাপতি হন।

 

নুসরাত জাহান

নুসরাত জাহান একজন অত্যন্ত গ্ল্যামারাস ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং রাজনীতিবিদ। বাংলা সিনেমায় তিনি নিজের বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন। তার জন্ম কলকাতায়, ১৯৯০ সালের ৮ জানুয়ারি। ২০১২ সালে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং বসিরহাট থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নুসরাত জাহান ২০১১ সালে রাজ চক্রবর্তীর ‘শত্রু’ ছবির মাধ্যমে অভিনেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার ‘খোকা ৪২০’ ছিল সবচেয়ে ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র। ২০১৯ সালে তিনি নিখিল জৈনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

 

দিব্য স্পন্দনা

দেখতে অত্যন্ত সুন্দরি দিব্য স্পন্দনা চলচ্চিত্র জগতের রাম্যা নামে পরিচিত। তিনি দক্ষিণ ভারতের একজন খ্যাতিমান অভিনেত্রী, যিনি কন্নড় চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তামিল ও তেলেগু ভাষার ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার জন্ম ১৯৮২ সালের ২৯ নভেম্বরে, বেঙ্গালুরুতে। ২০১৩ সালে কর্ণাটকের মান্দ্যা আসন থেকে উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে রাম্যা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সদস্য হিসাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।

 

আলকা লাম্বা

আলকা লাম্বা তার সাবলীল ইমেজ ছাড়াও তার কোমলতা এবং সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি কংগ্রেস স্টুডেন্টস ইউনিয়নে যোগদান করেন। যুবদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে তিনি ‘গো ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’ নামে একটি এনজিও চালু করেন। ২০ বছরেরও বেশি সময় কংগ্রেসে যোগদানের পরে তিনি আম আদমি পার্টিতে যোগ দেন এবং ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে চাঁদনী চৌক থেকে দিল্লি বিধানসভায় নির্বাচিত হন।

 

আঙ্গুরলতা ডেকা

আঙ্গুরলতা ডেকা একজন মডেল এবং অভিনেত্রী, পাশাপাশি ভারতীয় জনতা পার্টির একজন সুন্দরী নেতা। তিনি মূলত বাংলা ও অসমিয়া ছবিতে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেন। তিনি ২০১৬ সাল থেকে আসামের বাটডোবা আসনের ভারতীয় জনতা পার্টির বিধায়ক।

ডিম্পল যাদব

অত্যন্ত কোমল এবং সর্বদা শাড়িতে দেখা যায়, ডিম্পল যাদব আকর্ষণীয় গ্ল্যামারাস রাজনীতিবিদ। তিনি কন্নৌজ থেকে দুবার সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য হয়েছেন। তারা রাজনৈতিক পরিবারের সাথেই সম্পর্কিত। তার স্বামী অখিলেশ যাদব এবং শ্বশুর মুলায়ম সিং যাদব উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

 

গুল পানাগ

গুল পানাগ একজন প্রাক্তন বিউটি কুইন, ভারতীয় অভিনেত্রী এবং রাজনীতিবিদ। ২০০৩ সালে ‘ধুপ’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি বলিউডে পা রাখেন। তিনি অনেক ছবি ও টিভি সিরিয়ালে কাজ করেছেন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে চণ্ডীগড় থেকে আম আদমি পার্টির প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি।

 

মিমি চক্রবর্তী

মিমি চক্রবর্তী কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তিনি মেগা সিরিয়াল ‘গানের ওপারে’তে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। টিভি পর্দায় অভিনেত্রী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পরে, ‘বাপি বাড়ি যা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ২০১২ সালে রূপালী পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন। ২০১০ সালে টিএমসির প্রার্থী হয়ে রাজনৈতিক লড়াইয়ে নামেন তিনি। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে যাদবপুর আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় লাভ করেন মিমি।

স্পষ্টতই, নারীরা রাজনীতিতে আগ্রহী, হোক সে গ্ল্যামারাস তারকা বা সাধারণ নারী। তারা নির্বাচনে জয়ী হচ্ছেন এবং পুরুষদের চেয়ে ভালো নির্বাচনী এলাকার গভর্ন্যান্স পরিচালনা করছেন। তবুও ভারতীয় সংসদে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। এমনকি আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের চেয়েও ভারতে নারী নেতৃত্ব কম। ভারতে নারী নেতৃত্বতে আগ্রহ সৃষ্টি করতে এসব জনপ্রিয় নারী তারকারা ভূমিকা রাখতে পারেন বলে বিশ্বাস ভক্তদের।


শর্টলিংকঃ