ইবির শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে দুই শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
শিক্ষক নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। বিশ^বিদ্যালয় আজ (শনিবার) অনুষ্ঠিতব্য ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ কেন্দ্র করে এক প্রার্থীর সাথে আর্থিক চুক্তির অভিযোগ উঠেছে। আরিফ হাসান নামের এক প্রার্থীর সাখে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক এ চুক্তি করেন। কথোপকথোনে দুই শিক্ষকের জড়িত থাকার অভিযোগে তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রশাসন। এছাড়া আজ শনিবার অনুষ্ঠিতব্য ওই শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো বহুল আলোচিত ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নিয়োগ বোর্ড। আর এ নিয়োগ বোর্ডকে কেন্দ্র করেই হয়েছে এবারের শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য। ওই বিভাগে নিয়োগ দিতে এক প্রার্থীর সাথে চুক্তি করে একই বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক ড. রুহুল আমীন এবং ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম আব্দুর রহিম। প্রকাশিত কথোপকথোনে প্রার্থীর সাথে চুক্তি হয়েছে ১৮ লাখ টাকায়। এর মধ্যে নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে দিতে হবে অগ্রিম ১০ লাখ টাকা।

আর সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত নিয়োগ হলে বাকি আট লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। দুই শিক্ষকের সাথে মোট ৮ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের দুইটি কথোপকথোন থেকে আরো জানা যায়, চুক্তির টাকা পরিশোধ করতে প্রার্থীকে সময় বেধে দেয় শিক্ষকরা। চুক্তির টাকা পরিশোধ করতে প্রার্থী জমি বিক্রি করে এবং ব্যাংক থেকে লোন নিবেন বলে তাদেরকে জানায়। এছাড়া তারা বোর্ডে থাকবে না তাই তাদের সিন্ডিকেটের (নিজেদের লোক) মাধ্যম নিয়ে চাকরি দিতে হবে বলে জানান রহিম। এদের সাথে তাদের সম্পর্কও অনেক দিনের বলে কথোপকথোনে স্বীকার করেন তিনি। এদিকে রুহুল আমীন বিভাগের প্লানিং তার ইচ্ছামত করে নিতে পারবে বলেও প্রার্থীকে জানায়।

গতকাল শুক্রবার নিয়োগ বানিজ্য সংক্রান্ত দুটি অডিও ফাঁস হলে বিষয়টি আমলে নেয় প্রশাসন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি আজ অনুষ্ঠিতব্য ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড (লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা) স্থগিত করেছে কতৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ বলেন, ‘দুই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বিধির ৩ ‘সি’ ধারা অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দ্রুতই তদন্ত কমিটি করা হবে।

শনিবারের বোর্ডটি স্থগিত করা হয়েছে।’ ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের বিভাগের সভাপতি সুতাপ কুমার ঘোষ বলেন, ‘আমি শুনেছি বোর্ডটি বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ পেলে আমরা বোর্ড করবো।’ প্লানিং কমিটির সভা করার জন্য রুহুল আমিন স্যারের পক্ষ থেকে কোন চাপ ছিলো কিনা জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে লিখিত বিবৃতি দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। সভাপতি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূইয়া স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে অডিওর সাথে জড়িত সকলকে সাময়িক বরখাস্ত ও শক্তিশালী নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এর আগেও (২০১৭ সালের ২ এপ্রিল) শিক্ষক নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কার হয়েছিলেন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সাবেক সভাপতি ড. রুহুল আমীন। পরবর্তীতে নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় সিন্ডিকেট তাকে শাস্তি হিসেবে ৫টি ইনক্রিমেন্ট বন্ধ ও ৫ বছর সকল প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। তবে আইনের আশ্রয় নিয়ে তিনি শাস্তি মওকুফ করেছেন বলে জানা গেছে।

নিয়োগ বাণিজ্যের অডিওর বিষয়ে অভিযুক্তদের ফোনে ৩০ বারের বেশি ফোন দেওয়া হলেও তারা কল রিসিভ করেনি। তবে গতকাল (বৃহস্পতিবার)বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাংবাদিকের সাথে কথা বলেন। এসময় ইইই বিভাগের আব্দুর রহিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে তিনি বলেন, সাবেক প্রক্টরের বাসা আমার এলাকায় এবং আমরা একই বিভাগের (ইইই) হওয়ায় স্যারের সাথে কথা বলে সহযোগীতা করতে চেয়েছিলাম।’ ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিন তখন বলেন, ‘এরকম কোন বিষয় আমি জানি না। পরে অডিও রেকর্ড আছে বললে তিনি বলেন আমি নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কোন কথা বলিনি।’

এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘ব্যাক্তিগতভাবে আমার মনে হচ্ছে বিগত সময়ে তাদের শাস্তি কম হয়ে গেছে। তাই তাঁরা আবারো এই সুযোগ খুঁজছে। এবার আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করবো। ইতিমধ্যে দুই জনের কথোপকথোন আমি শুনেছি এবং তাদের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছি। অভিযুক্তদের তাৎক্ষনিক সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’


শর্টলিংকঃ