এই তপ্ত রোদে কেমন আছেন ফুড ডেলিভারিম্যানরা?


ইউএনভি ডেস্ক:

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (ইসিই) স্নাতক শেষ করেছেন খুলনার তেড়খাদার মাহিউল সরদার। দুই বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। চাকরি না পেয়ে সংসারের হাল ধরতে প্রায় এক বছর ধরে ফুডপান্ডায় ফুড ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করছেন। পরিবার থাকে গ্রামের বাড়িতে, আর তিনি থাকেন ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে।

মাহিউল বলেন, ‘আমরা আসলে পেটের দায়ে তীব্র রোদের মধ্যেও রাস্তায় বের হচ্ছি। বেকার থাকার কোনও সুযোগ নেই। গত কয়েক দিনের তাপপ্রবাহে জীবন যায় যায় অবস্থা! মাঝে মধ্যে রাস্তায় মাথা ঘুরে পড়ে যাই। অসুস্থ হয়ে পড়ি। বলা চলে অনেকটা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় নামছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোদ হোক আর বৃষ্টি, রাস্তায় নামা ছাড়া তো উপায় নেই। মা-বাবা ও বোনদের খচর চালাতে হবে। চাকরি থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এমন কাজ করতাম না। এখানে তেমন আয় নেই। তবুও কাজ করছি।’

মাহিউলের মতো ফুডপান্ডায় ফুড ডেলিভারির কাজ করছেন ১৯ বছর বয়সী মামুন শেখ। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। পরিবার থাকে বাগেরহাটে। রাজধানীর হাজারীবাগের একটি মেসে থেকে দিনে প্রায় ১২-১৪ ঘণ্টা ফুড ডেলিভারির কাজ করেন তিনি।

মামুন শেখ বলেন, ‘যাদের পরিবারের খরচ চালাতে হয় না তারা দিনে রোদের মধ্যে বের হচ্ছেন না। কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ নেই। কাজ না করলে বাবা-মা, ভাই-বোন না খেয়ে থাকবে। রোদে শরীর পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। সাইকেল চালাতে চালাতে অনেক সময় রাস্তায় পড়ে যাই। প্রচণ্ড কষ্ট হয়। তবে যখন মনে হয় বাড়িতে টাকা পাঠাতে হবে তখন কষ্টের কথা ভুলে যাই। শুধু চিন্তা থাকে আয় করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এই গরমে বেশি কষ্ট হয় যখন ফুড ডেলিভারি দিতে সিঁড়ি বেয়ে পাঁচ-ছয় তলায় উঠি। সারা দিন প্রায় ১০ কিলোমিটারের বেশি সাইকেল চালাতে হয়। এখনে আয় খুব বেশি না হলেও কাজ সহজে পাওয়া যায়। দেশে চাকরির অভাব, চাইলেই ভালো চাকরি পাওয়া যায় না।’

ঢাকাসহ সারা দেশে এপ্রিলের শুরু থেকেই চলছে তাপপ্রবাহ। বিভিন্ন জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙছে-গড়ছে। সারা দেশে টানা তিন বার হিট অ্যালার্ট জারি করে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (১ মে) থেকে ঢাকা বিভাগের পশ্চিমাঞ্চল এবং খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ৪৮ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) পর্যন্ত আগের সাত দিনে হিট স্ট্রোকে অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গরমে নানা রকম অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগী আসার পরিমাণও বেড়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যখন অনেক মানুষই বাসা থেকে বের হচ্ছেন না, এর মধ্যেও কাজ থেমে নেই ফুড ডেলিভারিম্যানদের। সূর্যের প্রখর তাপ উপেক্ষা করে সাইকেল চালিয়ে কিংবা পায়ে হেঁটে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার সরবরাহ করছেন তারা। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। তবু জীবিকার তাড়নায় কিংবা নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে বিরামহীন চলছে তাদের পথচলা।

জাহিদ হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রায় এক বছর ধরে ফুড ডেলিভারির কাজ করছি। আগে সারা দিন কাজ করলে এখন বিকাল থেকে ডেলিভারি করছি। গরমে অর্ডার বেড়েছে, তবে রাস্তায় নামার মতো পরিস্থিতি নেই। রোদ চলে গেলে কাজ শুরু করছি। এই গরমে ডেলিভারি করাটা প্রচণ্ড কষ্টের।’

আরেক শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এই গরমে যেখানে বাসায় থাকাই মুশকিল, সেখানে রোদের মধ্যে রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে ফুড ডেলিভারির কাজ করছি। এটা কতটা কষ্টের তা বুঝতে পারবো না। কয়েকবার অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম, তারপরও কাজ করছি। এছাড়া কোনও উপায় নেই।’


শর্টলিংকঃ