‘এক টাকায় আহার’ দিয়ে নীরবে মানবসেবা করে যাচ্ছে ‘বিদ্যানন্দ’


ইউএনভি  ডেস্ক:

মিরপুরের কালশি বস্তিতে শিশুদের সারিবদ্ধ লাইন। কোনও সোরগোল নেই। তবে আনন্দ উচ্ছ্বাস আছে। তাদের মধ্যে কি যেন এক অজানা খুশির ঝিলিক। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর রাস্তার বিপরীত পাশে দুটি রিকশা এসে থামলো। তখন সবার এক যোগে চিৎকার ‘ঐ যে আইছে খাবার নিয়া।’ রাজধানীর কয়েকটি স্থানে এইরকম অবহেলিত শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার আরেক নাম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বিদ্যানন্দ’।

Biddanondo - Universal

সংগঠনটির মূলমন্ত্র পড়ব, খেলব, শিখব। এই সংগঠন সপ্তাহে দুদিন করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পথশিশুদের ‘এক টাকায় আহার’ দেয়। শনি ও মঙ্গলবার রায়েরবাজার। রোববার ও বৃহস্পতিবার এয়ারপোর্ট রোড। সোমবার ও শুক্রবার মিরপুরের কালশি এবং বুধবার চিড়িয়াখানা এলাকায়। ২০১৬ সাল থেকে তারা এই কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

‘আমি রাস্তায় ফুল-তুল বেচি, ক্ষিধা লাগলে এহানে দৌড়াইয়া আসি। সপ্তাহে দুদিন পেট ঠাণ্ডা থাকে। এক টাকায় খাবার পেয়ে দুদিন নিশ্চিন্ত থাকি।’
এক টাকায় মোরগ পোলাও পেয়ে একটু খুশিতে গদগদ হয়েই শুক্রবার দুপুরে কালশি বস্তিতে এ প্রতিবেদককে কথাগুলো বলছিলেন খুশি। ছয় বছর বয়সী খুশি ফুল বিক্রি করে। বাবা মায়ের সঙ্গে কালশী বস্তিতে থাকে।

বিদ্যানন্দ - ইউনিভার্সাল২৪নিউজ

বিদ্যানন্দের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর সালমান খান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের শুরুটা পথশিশুদের পড়ানোর মধ্য দিয়ে। তখন আমরা দেখতাম খাবারের অভাবে পথশিশুরা পড়তে আসতো না। পরে আমরা বিস্কুট দেয়া শুরু করলাম। এতে দেখলাম শিশুর সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে। একথা শুনে বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা প্রবাসী কিশোর কুমার দাস বললেন, তিনি শিশুদের খাওয়াবেন। এরপর থেকে পথশিশুদের একবেলা খাবারের জন্য এক টাকা করে নেয়া হয়। এটা তাদের মানসিক তৃপ্তির জন্য নেওয়া হয়। যেন তারা না ভাবে যে এটা ভিক্ষার খাবার।

কিভাবে এই খাবার খরচের টাকা আসে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘বেশিরভাগ আয় হয় আমাদের পেইজ থেকে। পেইজে সবাই আমাদের কার্যক্রম দেখে। আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। আমাদের পেইজে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং বিকাশ নম্বর দেয়া আছে। সেটা দেখে অনেকেই আমাদের সাহায্য করে।’

বিদ্যানন্দ একটি শিক্ষা সহায়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বর্তমানে ৪০ জন কর্মকর্তা, কয়েকশ স্বেচ্ছাসেবক আর আটটি আঞ্চলিক শাখা নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে আটটি শাখার ১২০০ এর অধিক শিক্ষার্থী এই কার্যক্রমের সুবিধাভোগী। বিদ্যানন্দ পড়ালেখা নিয়েও নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।
সালমান খান আরও বলেন, ‘বিদ্যানন্দ এখন স্বপ্ন দেখছে নিজস্ব ক্যাম্পাসে অনাথআশ্রম নিয়ে একটি পরিপূর্ণ স্কুলের।

বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস নিজেই উঠে এসেছেন সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণি থেকে। প্রতিষ্ঠাতার নিজ উদ্যোগ আর অর্থায়নে বিদ্যানন্দের সূচনা হলেও এখন এটি অজস্র মানুষের আর্শীবাদে ধন্য। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মৌলিক জ্ঞানে বিকশিত করা বিদ্যানন্দের মৌলিক কার্যক্রমের অন্যতম অংশ।বিদ্যানন্দের ওয়েব পেইজ http://www.onetakameal.org/

 


শর্টলিংকঃ