এমপি ও জেলা নেতাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ


ইউএনভি ডেস্ক:

এমপি ও জেলা নেতাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ
একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে উদ্বিগ্ন আওয়ামী লীগ ও সরকারের হাইকমান্ড। সম্প্রতি হামলার শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাও। এর মধ্যে আবার কয়েকজন নিহত হয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড দলীয় এমপি ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের বলা হয়েছে চোখ-কান খোলা রাখতে। কারণ, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রতিপক্ষ বিএনপি ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সারা দেশে নাশকতার ছক কষছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র যুগান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছে।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বিএনপি ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সম্পর্কে বলেন, তারা অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটিয়ে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে। মার্কেটসংশ্লিষ্ট সবাইকে নিজস্ব উদ্যোগে পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সব প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী শনিবার যখন গণভবনে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন, তখন পুড়ছিল রাজধানীর নিউমার্কেট সংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেট। সেখানে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনের লেলিহান শিখা নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুতই পদক্ষেপ নেন। কিন্তু এরপরও মার্কেটটির দোকানপাট রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। কদিন আগে একইভাবে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট। এর আগে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার ব্যাপারে আমরা সব সময় সতর্ক রয়েছি। এ ব্যাপারে দলীয় এমপি ও নেতাদের সতর্ক করা হয়েছে। তারা চোখ-কান খোলা রেখে দেশের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের অশুভ তৎপরতা এবং সব ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ যুগান্তরকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে বিএনপির সম্পৃক্ততা নিয়ে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঠিক কথা বলেছেন। সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য তারা যে কোনো কাজ করতে পারে। দলের পক্ষ থেকে আমরা নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছি। দোকান মালিকদেরও সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে।

জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন যুগান্তরকে বলেন, নাশকতার আশঙ্কার বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য দলীয় এমপি ও নেতাদের বলা হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা নয়। বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, যাতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে দলীয় ফোরামে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সবাইকে সতর্ক থাকতে এবং চোখ-কান খোলা রাখতে বলেছেন। নির্বাচনের আগে বিএনপি ও তাদের দোসর স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা যে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেজন্যই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রকাশ্যে অথবা গুপ্তহত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় দলীয় হাইকমান্ড উদ্বিগ্ন। আন্দোলনে সরকারকে টলাতে না পেরে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা এখন টার্গেট করে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাদের হত্যা করছে বলে হাইকমান্ড মনে করে। এ ঘটনা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চলতেই থাকবে বলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা আশঙ্কা করছেন।

দলীয় সূত্রমতে, এ বছরের জানুয়ারিতে বাগেরহাটের কচুয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাহার আলী মোল্লা, লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ওয়াজেদ আলী, সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কুদ্দুস সরকার এবং মার্চে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় নিহত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আনসার আলী।

 


শর্টলিংকঃ