করোনায় অসহায়দের জন্য নিজেদের রেশন বিলিয়ে দিচ্ছে সেনাবাহিনী


ইউএনভি ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলছে লকডাউন। সরকারের ৩১ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা গত ২৪ মার্চ থেকে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন।

করোনায় অসহায়দের জন্য নিজেদের রেশন বিলিয়ে দিচ্ছে সেনাবাহিনী

কক্সবাজার জেলা এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের চারটি উপজেলাকে করোনা মুক্ত রাখতে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন ১০ পদাতিক ডিভিশনের সেনা সদস্যরা।শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি করোনার কারণে চরম বিপাকে পড়া কর্মহীন, দুস্থ ও অসহায় মানুষের মুখে খাদ্য তুলে দিতে সেনা সদস্যরা বাড়ি বাড়ি ছুটছেন। জনসমাগম পরিহার করে নিজেদের রেশনের চাল, ডাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ, তেল, লবণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রীর একটি অংশ অসহায়দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।

এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় উপস্থিত হয়ে যাদের হোম কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে থাকার কথা তাদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। সাধারণ মানুষকে মাইকিং করে নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বিবিধ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানাচ্ছেন সেনা সদস্যরা।

খাবার সহায়তার সঙ্গে কক্সবাজারের অনেক জায়গায় সেনাবাহিনীর মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করা হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেনা চিকিৎসক, নার্সসহ সেনা সদস্যরা করোনা মোকাবিলায় কাজ করছেন।দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে সড়কে জনসাধারণের চলাচল অনেকটা সীমিত হয়ে পড়েছে।

এর মধ্যেও বিভিন্ন প্রয়োজনে যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের প্রায় সবাইকে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় প্রয়োজনীয় দোকানের বাইরে যেসব দোকান-পাট খোলা হয়েছে সেসব দোকানদারকে বুঝিয়ে সেনা সদস্যরা তা বন্ধ করে দিচ্ছেন।রমজান মাসে প্রচণ্ড গরম আর রোদ-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সেনা সদস্যরা নিরলসভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন।

ইফতারির সময় তারা রাস্তার কোনো এক ফাঁকা স্থানে নিজেদের ইফতার ও নামাজ সেরে নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়ছেন দায়িত্বে। এছাড়াও তারাবিহ নামাজ উপলক্ষে যেন বিশৃঙ্খলা এবং অতিরিক্ত জনসমাগম না হয় সে লক্ষ্যে সেনা সদস্যরা তাদের কর্মপরিধি আরও বৃদ্ধি করেছেন।

কক্সবাজার সরকারি কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী সাইফুল মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে বাড়ি থেকে বের হয়ে পথে দুইবার সেনাবাহিনীর চেকপোস্টও টহল দলের কৈফিয়তের মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সেনাবাহিনী আমাদের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছে এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে তাতে আমরা গর্বিত। সেনাবাহিনী শহর থেকে গ্রামে, মাঠ থেকে মফস্বলে করোনা সচেতনতায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে।

রামু সেনানিবাস সূত্রে জানা যায়, লকডাউনে অসহায় হয়ে পড়াদের মধ্যে সমাজের একটা বড় অংশ খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা। পাশাপাশি সেনাবাহিনীও তাদের বরাদ্দকৃত রেশনের একটি অংশ এসব হতদরিদ্র মানুষদের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে।

শুধু তাই নয়, কিছু দুর্গম পাহাড়ি এলাকাতেও হেঁটে কাঁধে করে রেশন বয়ে নিয়ে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। যে কোনো দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে সেনাবাহিনী সার্বক্ষণিক জনগণের পাশে ছিল এবং আগামীতেও থাকবে। এই জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।


শর্টলিংকঃ