‘গরু গন্ডগোলে’ গণভোটে সুইজারল্যান্ড


ইউএনভি ডেস্ক:

মধ্য সুইজারল্যান্ডের আরওয়ানগেন গ্রামের একটি অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়া থাকে এক দম্পতি। পাশেই সবুজ চারণভূমি। সারা রাত ছাড়া থাকে গরু। আর থেমেই থেমেই টুংটাং শব্দ। নিস্তব্ধ নিশুতির নীরবতা ভেঙে ছোট ছোট আওয়াজ একেবারে যেন কানে এসে লাগে! উড়ে যায় শান্তির ঘুম! আর এই নিয়েই বাঁধে ‘গোল’-গড়ায় ‘গন্ডগোলে’। এএফপি।

চলতি বছরের শুরুর দিকের কথা। গ্রামের আবাসিক এলাকার পাশে আল্পাইন পর্বতমালার চারণভ‚মিতে রাতভর গরুর গলায় লাগানো ধাতব ঘণ্টা থেকে আসা ‘বিরক্তিকর’ শব্দ নিয়ে রীতিমতো অভিযোগ করে বসে ওই দম্পতি। এক কান দুকান করে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের সব কানেই। আশু পদক্ষেপ নেই পৌর কর্তৃপক্ষেরও।

মাঠটিতে প্রায় ১৫টি গরুর পাল রাতভর চরতে থাকে। গরুর ঘণ্টা যেন রাতে না বাজে সেজন্য কর্তৃপক্ষকে হস্তক্ষেপ করতে বলেছিল তারা। কিন্তু এই দম্পতির করা অভিযোগে চরম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আরওয়ানগেন গ্রামের বাসিন্দারা।

ঘণ্টার ঐতিহ্যগত ব্যবহার রক্ষায় উঠেপড়ে লেগেছে তারা। গরুর ঘণ্টা নিয়ে শুরু হওয়া এই ‘গন্ডগোলে’ রীতিমতো গণভোটে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড। স্থানীয়ভাবে এই গণভোটের আয়োজন করা হয়েছে।

সোমবার (১১ ডিসেম্বের) সন্ধ্যায় একটি মিউনিসিপ্যাল অ্যাসেম্বলিতে এই উদ্যোগটি আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর এ বিষয়ে ভোটগ্রহণ আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গণভোট উদ্যোগের নেতৃত্ব দিয়েছেন আরওয়ানগেন গ্রামের পেশায় একজন নিউরোলজিস্ট আন্দ্রেয়াস বাউম্যান।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সভায় উপস্থিত ১৬৬ জনের মধ্যে মাত্র চারজন ভোটের ব্যাপারে বিরোধিতা করেছিলেন।

আরওয়ানগেন গ্রামের মোট বাসিন্দা ৪ হাজার ৮০০ জন। সুইজারল্যান্ডের সরাসরি গণতন্ত্র ব্যবস্থার অধীনে এই বিষয়ে ভোটগ্রহণের জন্য পিটিশনকারীদের ৩৮০ জন স্বাক্ষরকারী অর্থাৎ গ্রামের মোট বাসিন্দাদের মাত্র ১০ শতাংশের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মাঠে নামতেই দেখা গেল ভোট আয়োজনের সপক্ষে স্বাক্ষর পড়েছে ১ হাজার ৯৯টি!

গরুর ঘণ্টা নিয়ে বিতর্কিত এই মাঠের পাশেই বাস করেন আরওয়ানগেনের মেয়র নিকলাউস লুন্ডসগার্ড-হ্যানসেন। তিনি বলেন, ‘অভিযোগের কথা শুনে আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া অবাক করার মতো ছিল। গরুও খুব বেশি শব্দ করে অথবা সেই শব্দে কেউ বিরক্ত হতে পারে সেটি আমি জানতাম না!’

সুইজারল্যান্ডের এই গ্রামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘ঘণ্টাগুলো সুইস মানুষের ডিএনএতে (সংস্কৃতি) রয়েছে। আমরা এগুলোকে সংরক্ষণ করতে চাই।’

গরুর ঘণ্টা নিয়ে গ্রামবাসীর এমন প্রতিক্রিয়া আশা করেনি অভিযোগ করা সেই দম্পতি। তাদের মধ্যে একজন অভিযোগ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর আরেকজন গ্রাম থেকে সরে যেতে চাইছেন।

সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন চারণভূমিতে বেড়ানো পশুদের ট্র্যাক করার জন্য এ ধরনের ঘণ্টাগুলো এক সময় খুব অপরিহার্য ছিল। কিন্তু জিপিএস ট্র্যাকার আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে তাদের উপযোগিতা হ্রাস পেয়েছে। যদিও ঘণ্টাগুলো এখনো পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের গ্রামীণ জীবনের একটি শক্তিশালী ঐতিহ্যের প্রতীক হিসাবে রয়ে গেছে।

এমনকি সম্প্রতি আল্পাইনে এই গবাদিপশুর গলায় ঘণ্টা বেঁধে পর্বতের উঁচু চারণভ‚মিতে নিয়ে যাওয়া বিষয়টি ইউনেস্কোর ‘হারিয়ে যাচ্ছে’ এমন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।


শর্টলিংকঃ