চট্টগ্রামে দুঃসাহসী ৭ অপারেশন


ফয়’স লেক, কৈবল্যধাম ও হোটেল আগ্রাবাদে গেরিলা অপারেশনের মাপনীবিহীন চাক্ষুস নকশা (বাঁ থেকে) সূত্র: ‘মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান’ (মে, ২০১৫ সংস্করণ)
স্বল্প জনবল ও নামে মাত্র অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বৃহৎ লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত হানা সহজ নয়। তবে ভৌগোলিক সুবিধা ব্যবহার করতে পারলে অতর্কিত আক্রমণে সন্ত্রস্ত রাখা যায় শত্রুশিবিরকে। সমরশাস্ত্রে এ ধরনের অভিযান পরিচিত গেরিলা যুদ্ধ নামে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে এসব গেরিলা অভিযানের অবদান অনস্বীকার্য। সারা দেশজুড়ে তত্পরতা থাকলেও চট্টগ্রামের অভিযানগুলো লাভ করেছে ভিন্ন মাত্রা। মূলত জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম। পাক বাহিনীর প্রতিরোধে সংগঠিত হতে থাকে গেরিলারা। শত্রু শিবিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে একের পর এক চালিত হয় গেরিলা অভিযান। ছোট-বড় মিলিয়ে চট্টগ্রামের ১৩০টি গেরিলা অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান’ বইয়ের প্রথম খণ্ডে। নেয়া হয়েছে অভিযান পরিচালনাকারী মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার। এসব গেরিলা অপারেশনের বিবরণ যেন সামনে আনে মুক্তির স্বপ্নে বিভোর বাঙালির সাহসকে। ‘মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান’ (মে, ২০১৫ সংস্করণ) গ্রন্থ অবলম্বনে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামে পরিচালিত দুঃসাহসী ৭ টি গেরিলা অপারেশন এখানে তুলে ধরা হল। গ্রন্থণা করেছেন আহমেদ দীন রুমি ও নিজাম আশ শামস

ভোরের বাজার অপারেশন

বারৈয়াঢালা রেলস্টেশনের দক্ষিণে ভোরের বাজার। বাজারের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত টিনের মন্দির। মন্দিরটি ফাঁকাই ছিল। আগস্টের প্রথম দিকে সেখানেই ক্যাম্প স্থাপন করে পাকিস্তানি সৈন্যরা। তাদের সঙ্গে রয়েছে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস মিলিয়ে ২০ জন। তাতে নির্যাতন করা হচ্ছিল নারীদের। মুক্তিযোদ্ধাদের নাকের ডগায় পাকিস্তানি বাহিনীর আস্তানা অস্বস্তিকরও বটে। মুক্তিযোদ্ধা এসএম খুরশিদ আলমকে বিষয়টি চিন্তিত করে। তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেন অপারেশন চালানোর। নারীদের বাঁচানো প্রয়োজন। দূরে সরানো প্রয়োজন পাকিস্তানি সেনাদের। রাত এগারোটার দিকে সহযোদ্ধা শামসুল আলম, আবদুল জলিল ভুঁইয়া ও আবদুল লতিফকে নিয়ে পর্যবেক্ষণে বের হন অধিনায়ক খুরশিদ। মন্দিরের সঙ্গেই বড় বটগাছ। ডাল চলে গেছে মন্দিরের টিনের চাল পর্যন্ত। সেটা বেয়ে উঠেই ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। ভেতরে ৮-৯ জন ব্যক্তির উপস্থিতি চোখে পড়ে। কেউ নেশায় মগ্ন, কেউ বন্দি নারীদের নির্যাতনে। পাক বাহিনীর কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হলেও সে রাতের ফিরে আসেন তারা। প্রস্তুতি নিতে থাকেন মোক্ষম সময়ের অপেক্ষায়। হাতে পর্যাপ্ত অস্ত্র নেই। মুখোমুখি আক্রমণে সুবিধা করা যাবে না। যা আছে তাও ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। পরবর্তী সময়ে কখন প্রয়োজন পড়ে, বলা যায় না। ফলে সিদ্ধান্ত হলো বান্দরওলা ব্যবহার করা হবে। বান্দরওলা এক ধরনের বুনো ফল। তেঁতুলের মতো আঙুল খানেক লম্বা। শরীরে লাগলে তাত্ক্ষণিক আরম্ভ হয় ভয়ানক চুলকানি। যেমন কথা তেমন কাজ। দুদিনের মধ্যে সংগ্রহ করা হলো বান্দরওলা। এক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে কমলদহ গ্রামের আবুল কাশেম। সমস্ত প্রস্তুতি শেষ করে চারদিন পর শুরু হলো অপারেশন। অধিনায়ক খুরশিদ পুরো টিমকে ভাগ করে নিলেন। কোনো বেকায়দায় পড়লে সরাসরি আক্রমণে যেতে হবে। ২টি গ্রেনেড নিয়ে মন্দিরের উত্তর-পশ্চিম কোণে শামসুল আলম, ১টি এসএমসি ও দুটি হ্যান্ড গ্রেনেড নিয়ে পশ্চিম পাশে আবদুল জলিল ভুঁইয়া এবং ১টি .৩০৩ ও দুটি হ্যান্ড গ্রেনেড নিয়ে আবদুল লতিফ দক্ষিণ পশ্চিম পাশে অবস্থান নেন। অধিনায়ক খুরশিদ বটগাছ বেয়ে উঠতে থাকেন মন্দিরের উপরে। হাতে একটি রিভলভার ও জর্দার কৌটায় বন্দরওলা। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া বইছে। ভেতরে তখন ৬-৭ জন পাকিস্তানি সেনা চা-পাউরুটি খাওয়ায় মগ্ন। পাশে অস্ত্র পরিষ্কার করছে ৪-৫ জন। দুজন নারীকে নিয়ে পৈশাচিক উল্লাসে মগ্ন ৪ জন। দেখে নেশাগ্রস্ত মনে হয় অধিনায়ক খুরশিদের। সময় বুঝে জর্দার কৌটা খুলে বন্দরওলার কেশর ফেলতে থাকেন নিচে। প্রায় সঙ্গেই সঙ্গেই দেখা যায় প্রতিক্রিয়া। নিজেদের ঘাড় ও শরীর চুলকাতে শুরু করে পাকিস্তানি সেনারা। অবস্থা বেগতিক দেখে মন্দিরের বাইরে এসে গড়াগড়ি খেতে থাকে কয়েকজন। নীরবে গাছ থেকে নেমে যান অধিনায়ক খুরশিদ। গুলি খরচের প্রয়োজন দেখেন না। সবাইকে নিয়ে ফিরে আসেন আশ্রয় কেন্দ্রে। কিন্তু ততক্ষণে যা শিক্ষা হওয়ার, তা হয়ে গেছে। পরের দিনই পাকিস্তানিরা মন্দিরটি ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। রক্তপাতহীন অভিনব অপারেশনের এই সফলতা চাঙ্গা করে তোলে মুক্তিযোদ্ধা শিবিরকে। প্রশস্ত হয় তাদের চলাচলের পরিধি।

মোহামায়া রেলসেতু অপারেশন

মিরসরাই ও মস্তাননগর রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে মোহামায়া রেলসেতু। এ রেলপথ ধরেই চলাচল করত ঢাকাগামী উল্কা ট্রেন। সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছিল উল্কা। রেল যোগাযোগকে দীর্ঘমেয়াদিভাবে বিচ্ছিন্ন করা ও পাকিস্তানি সেনাদের যুদ্ধ সরঞ্জামাদি নষ্ট করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তাছাড়া শত্রুপক্ষকে তটস্থ রাখতে ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের সামনে মুক্তিবাহিনীর সক্ষমতার জানান দেয়াটাও জরুরি। অধিনায়ক নিজাম শুধু অপেক্ষা করছিলেন যথাযথ সময়ের। জুলাই মাসের ২৯ তারিখ দিনের বেলা প্রথমবারের মতো স্থানটি পর্যবেক্ষণে বের হন। দ্বিতীয় দফা যান ঠিক পরের দিন। সঙ্গে ছিলেন মো. শাহজাহান-১, মো. শাহজাহান-২ (খুলনা), রঞ্জিত কুমার দে, হারুন মিত্র ও মিহির কান্তি দত্ত। দুপুর বারোটার দিকে তারা রেলসেতুর ওপর পৌঁছান। বর্ষাকাল থাকার কারণে ছাতা নেয়া হয়েছিল সঙ্গে। ছাতা দিয়ে ব্রিজের দৈর্ঘ্য ও উচ্চতা মেপে নিলেন অধিনায়ক নিজাম। ১৬ ছাতা হয় ব্রিজের দৈর্ঘ্য। নিচে তখন ৩-৪ ফুট পানি। ব্রিজের পাশ দিয়ে বিপরীত দিকে চলে গেছে দুটি রাস্তা। একটি পূর্ব ও অন্যটি পশ্চিম দিকে। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় আশেপাশের এলাকা। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় অতর্কিত আক্রমণের পর পশ্চিম দিকের পথ দিয়ে পশ্চাদপসরণ করবেন তারা। বিকাল ৫টার দিকে ফিরে আসেন আশ্রয় কেন্দ্রে। অপারেশন শুরু হয় আগস্টের প্রথম দিনে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে অধিনায়ক নিজাম সহযোদ্ধা জাহাঙ্গীর, শাহজাহান-১, শাহজাহান-২ (খুলনা), মো. সফি, সলিমুদ্দিন, লোকমান ও আরো কয়েকজনকে নিয়ে বের হন অপারেশনের উদ্দেশ্যে। সঙ্গে দুটি এলএমজি, চারটি স্টেনগান, চারটি এসএলআর, দুটি গ্রেনেড, একটি পিস্তল ও একটি সিগন্যাল পিস্তল। ছিল ২৫০ পাউন্ড বিস্ফোরক, ১০০ পাউন্ড জিইসি ও পিইকে স্ল্যাভ, পুল সুইচ মার্ক-৪ এবং ৪০০ গজ ডেটোনেটর কর্ড। সবকিছু প্রস্তুত করতে রাত আড়াইটা বেজে যায়। মুক্তিবাহিনীকে চারটি পৃথক উপদলে ভাগ করে নেন অধিনায়ক নিজাম। অপারেশনের স্থান থেকে ২০০ গজ দূরে থাকতেই চোখে পড়ে পাক বাহিনীদের রুটিন টহল। তারা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিজের ওপর ওঠেন মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা। পাথর সরানো ও মাটি খুঁড়ে গর্ত করার জন্য আগেই সংগ্রহ করা হয়েছিল কোদাল ও শাবল। সে সব নিয়ে দ্রুত লেগে যান বিস্ফোরক স্থাপনের কাজে। দুটি কাট অফ পার্টি ব্রিজের দুই পাশে অবস্থান নেয়। পশ্চিম দিক থেকে কোনো মানুষ যেন রেললাইনের দিকে না আসে, এজন্য ব্রিজের ২০০ গজ পশ্চিমে রাখা হয় আরেকটি দল। ভোর পাঁচটার আগেই অধিনায়ক নিজামের নেতৃত্বে ব্রিজের চার কোনায় চারটি বিস্ফোরক স্থাপনের কাজ শেষ হয়। ডেটোনেটর কর্ডগুলো মাটির নিচ দিয়ে নেয়া হয় একশ গজ দূরে পশ্চিম পাশে। সেখানে অবস্থান নেন অধিনায়ক নিজাম ও মুক্তিবাহিনীর একাংশ। বাকি অংশকে পাঠিয়ে দেয়া হয় আশ্রয় কেন্দ্রে।

ততক্ষণে সকাল সাড়ে ৭টা বেজে গেছে। মানুষের উপস্থিতি শুরু হচ্ছে আশেপাশের জমিতে। অধিনায়ক নিজাম কাছাকাছি আসা চাষীদের স্থান ত্যাগ করতে বলেন। তার কিছুক্ষণের মধ্যে একটি শাটল ট্রেন চলে যেতে দেখা যায়। সরাসরি অ্যামবুশে না গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন ঢাকাগামী উল্কা ট্রেনের। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না উল্কার জন্য। দশ মিনিটের মাথাতেই শোনা যায় ঝিকঝিক শব্দ। শব্দের ধরন আর সময় দেখে নিশ্চিত হয়ে নেন উল্কা এক্সপ্রেসের পরিচিতি। সবার মধ্যে তখন চাপা উত্তেজনা। ট্রেনটার অর্ধেক অংশ সবে ব্রিজ অতিক্রম করেছে, তখনই টান দেয়া হয় পুল সুইচে। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড শব্দে ঘটে বিস্ফোরণ। পাথরগুলো ছুটতে থাকে বুলেটের মতো। ধোঁয়া আর চিৎকারে মুখর হয়ে পড়ে এলাকা। অধিনায়ক নিজাম আর দেরি করেন না। সবাইকে নিয়ে গায়ে কাদা মাখেন। তারপর কৃষক সেজে রওয়ানা হন আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে। পরে জানা যায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য। পুরো অভিযানে দশজন পাকিস্তানি প্রাণ হারিয়েছিল। আহত হয় আরো ৫ জন। রেলের চারটি বগি খাদে পড়ে যায়। কয়েকজন সাধারণ জনগণও মারা যান। সার্বিক দিক বিবেচনায় অভিযান ছিল সফল। অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিস্ফোরক ব্যবহারে পারদর্শিতা প্রমাণিত হয়। যদিও প্রতিক্রিয়ায় পরবর্তীকালে স্থানীয় সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। তবে তাদের মনোবল যে ভেঙে পড়েছিল, তা বুঝা যায় পরবর্তী গতিবিধির মাধ্যমে।

ফয়’স লেক অপারেশন

বেশ কয়েকটি গেরিলা দল ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে প্রবেশ করেছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়। তারা পরে স্থানীয়দেরও প্রশিক্ষণ দেন। ফলে বাড়তে থাকে গেরিলাদের আকার ও কাজের পরিসর। নিজেদের মধ্যে সমাঝোতা করেই অপারেশন পরিচালনা করতেন তারা। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বিস্ফোরক স্থাপন করে গুঁড়িয়ে দেয়ার দায়িত্বে ছিল ডা. মাহফুজের নেতৃত্বাধীন কেসি-৩। দালাল হত্যা, পাকিস্তানি বাহিনীর স্থাপনায় সরাসরি সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করত ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ আল হারুনের নেতৃত্বাধীন কেসি-২। ফয়’স লেকের ওপর দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ দিকে তখন বিদ্যুতের পাইলন। পতেঙ্গা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহে কাজ করে। মুক্তিবাহিনী এখানে অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনায় অংশ নেন কেসি-৩-এর দলনেতা ডা. মাহফুজ, কেসি-৩-এর ডা. জাহাঙ্গীর ও কেসি-২-এর দলনেতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ আল হারুন। একদিকে অবাঙালি অধ্যুষিত, অন্যদিকে ব্যাপকভাবে নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকা। ফলে অভিযান বাস্তবায়ন করা ছিল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বিষয়টি বিবেচনা করে গেরিলাদের তিনটি উপদলে ভাগ করা হয়। প্রথম দল বিস্ফোরক বহন করে এনে স্থাপনের কাজ করবে। দ্বিতীয় দল অবস্থান নেবে পাইলনের পশ্চিমে। সেখান থেকে বিস্ফোরক দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তৃতীয় দল নিরাপদ রাখবে ফিরে আসার রাস্তা। সন্ধ্যার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ছোট ছোট দলে এসে পাঞ্জাবি লেনে (বর্তমান শহীদ লেন) জনৈক মুক্তিযোদ্ধার বাসায় অবস্থান নেন। রাত দুইটার দিকে রওয়ানা হন অপারেশনের স্থানে। যেহেতু অঞ্চলটি শত্রুবেষ্টিত। সুতরাং বিস্ফোরণ ঘটে যাওয়ার পর ফেরাটা হবে বিপজ্জনক। আবার যেহেতু মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে টাইম ডিলে ডিভাইস নেই, ফলে বিস্ফোরক ফেলে রেখে ফিরে আসার কোনো পথ নেই। উভয় দিক বিবেচনা করে ঘটনার আগেই অভূতপূর্ব এক পন্থা বের করেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার হারুন। তিনি মশার কয়েলের শেষ অংশের সঙ্গে যুক্ত করে দেন বিস্ফোরকের কর্ড। তারপর জ্বালিয়ে দেয়া হয় কয়েলটি। কয়েল পুড়তে পুড়তে কর্ডের কাছে এলেই আগুন কর্ডে লাগবে। ঘটবে বিস্ফোরণ। এই সময়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারাও চলে যেতে পারবে নিরাপদে। অর্থাৎ মশার কয়েলটিই তখন টাইম ডিলে ডিভাইসের কাজ করবে। মুক্তিযোদ্ধারা রাত তিনটার দিকে বিস্ফোরক স্থাপন করে ফিরে আসেন। বিস্ফোরণ ঘটে সকাল আটটার দিকে। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুতের সরবরাহ। চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পুরো অবাঙালি শিবিরে। পাকিস্তানি আধিপত্যের কেন্দ্রে এমন বিস্ফোরণের সাফল্য ছিল আশাতীত। তাছাড়া টাইম ডিলে ডিভাইস বানানোর বুদ্ধিমত্তা মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে পারদর্শিতাকেই ফুটিয়ে তোলে। যা পরবর্তীতে চট্টগ্রামকে মুক্ত করতে ভূমিকা রাখে।

কৈবল্যধাম রেলসেতু অপারেশন

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনেই অবস্থিত কৈবল্যধাম সেতু। কর্নেলহাট থেকে আনুমানিক ১০০০ গজ দূরে। পূর্বপাশে সীতাকুণ্ড পাহাড়সারি ও পশ্চিমে সমতলভূমি। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ট্রেন মিরসরাই পর্যন্ত চলাচল করে। চলত পাকিস্তানিদের সামরিক তত্পরতাও। পাকস্তানি সেনাদের অবাধ চলাচল ও রসদ সরবরাহে বাধা দেয়াকে জরুরি মনে করেন কেসি-৩-এর অধিনায়ক মাহফুজ। পরিকল্পনা নেয়া হয় ট্রেনটিতে আক্রমণ পরিচালনার। তার জন্য উপযুক্ত স্থান কৈবল্যধাম রেলসেতু। আক্রমণের দায়িত্ব দেয়া হয় কেসি-৪-এর প্রধান রইসুল হক বাহারকে। জাফলং থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরেছেন তিনি। সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মুসা ও শফিক। স্থানীয় রাখালদের সঙ্গে মিশে তারা তিনজন বিকালে দেখে আসেন রেলসেতুর বিদ্যমান পরিস্থিতি। ডা. মাহফুজের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছিল। চলছিল তথ্য আদান-প্রদান। সেখান থেকেই সরবরাহ করা হতো অস্ত্র ও বিস্ফোরক। অপারেশনের সময় নির্ধারিত হয় হাটের বার। স্থানীয় হাটুরেদের ছদ্মবেশে আক্রমণ চালানো যেন সহজ হয়। নির্ধারিত দিনে বিকাল সাড়ে ৪টায় হাটুরেদের সঙ্গে বের হয়ে যান রইসুল হক বাহার, তোফাজ্জল, আনোয়ার, পাশা, মুছা, বাদল, বেলায়েত ও মো. ইলিয়াস। বাজারের ব্যাগে রাখা ছিল অস্ত্র ও গোলাবারুদ। সেতুর কাছে পৌঁছানো মাত্রই চারজন মুক্তিযোদ্ধা চারটি স্টেনগান নিয়ে অবস্থান নেন সেতুর দুই পাশে। অবশিষ্ট দলটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেতুর গার্ডারে একটি টিএনটি স্ল্যাভ ও দুই পাশে ১০০ গজের মধ্যে দুটি জিসি স্ল্যাভ বসিয়ে ফেলে। বিস্ফোরকে লম্বা কর্ড যুক্ত করে টেনে নেয়া হয় পাশের জঙ্গল পর্যন্ত। কাজ শেষ দিকে থাকা অবস্থাতেই শোনা যায় ট্রেনের শব্দ। স্বাভাবিক সময়ের আধা ঘণ্টা আগেই চলে আসে ট্রেন। চালকের দৃষ্টিসীমার মধ্যেই দ্রুত শেষ করেন বাকি কাজ। দৌড়ে সরে যান দূরে। ট্রেনের ইঞ্জিন সেতুর উপরে আসা মাত্রই ঝোপে লুকিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা কর্ডে টান দেন। প্রচণ্ড শব্দে উড়ে যায় ব্রিজ ও সংলগ্ন রেললাইন। বুলেটের মতো ছুটে আসতে থাকে পাথর। নিরাপত্তার জন্য মাটিতে শুয়ে পড়ে পুরো অপারেশন টিম। কেউ কেউ বিভ্রান্ত হয়ে ছুটে আসে অস্ত্র পেছনে রেখেই। হারিয়ে যায় দুটি স্টেনগান। তবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার দিক থেকে অভিযান ছিল সফল। অতর্কিত এ আক্রমণে উড়ে যায় ট্রেনের মালবাহী দুটি বগি। হতাহত ঘটে উল্লেখযোগ্য পাকিস্তানি সেনার। বিধ্বস্ত হয় রেললাইন। পরবর্তী সময়ে বেশকিছু দিন ওই পথে রেল চলাচল স্থগিত থাকে। কৈবল্যধামের অপারেশনে গেরিলাদের সুসংহত সামরিক জ্ঞানের পরিচয় দেয়। যদিও তারা বিপজ্জনক দূরত্বের মধ্যেই অবস্থান করছিল। যথাযথ কাভার না নেয়াতে আহত হতে হয়েছে ছুটে আসা পাথরের আঘাতে। তবু অভিযানের সফলতা তটস্থ করে তোলে পাকিস্তানি বাহিনীকে। মুক্তিযোদ্ধাদের তত্পরতার প্রতি জনগণের আস্থা সম্প্রসারিত হয়। অভিযানের সফলতা পরবর্তী সময়ে অন্য অভিযানের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। ছোট ছোট সে গেরিলা অভিযান একত্র হয়ে তৈরি করেছে স্বাধীনতার সিঁড়ি। বাস্তবায়ন করেছে সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন।

অপারেশন হোটেল আগ্রাবাদ

তখন রোজার মাস। তারাবি নামাজের সময়কে অপারেশনের জন্য বেছে নেয়া হয়। টার্গেট হোটেল আগ্রাবাদ। আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় এর অবস্থান। দক্ষিণ-পূর্ব দিকে চট্টগ্রাম কলেজ। উত্তরে মোগলটুলি বাজার। চট্টগ্রামে আগত বিদেশী প্রতিনিধি দল, সরকারি ও সামরিক প্রতিনিধি, পর্যটক, বিদেশী সাংবাদিকরা এ হোটেলেই অবস্থান করতেন। তাই এ হোটেলকেই আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের গেরিলারা। বিশ্ববাসীকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ব্যাপকভাবে জানান দেয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।

আগ্রাবাদ হোটেলের গুরুত্ব সম্পর্কে পাকিস্তানিরা সচেতন ছিলেন। তাই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের কসুর ছিল না। তথাপি ফাঁক থেকে গিয়েছিল। আর তা খুঁজে বের করতে ছদ্মবেশে পুরো এলাকা রেকি করে গেরিলাদের একটি দল। মুক্তিযোদ্ধা সাইফুদ্দিন খালেদ, ফয়েজ, গরিবুল্লাহ ও জাফরউল্লা বোরহান সে দলের সদস্য ছিলেন। গরিবুল্লাহর বাড়ি ছিল মোগলটুলিতে। পুরো এলাকা তিনি নখের পিঠের মতো চিনতেন। ফলে তথ্য তালাশে দলটিকে তেমন বেগ পেতে হয়নি। পর্যবেক্ষণ করে তারা কাঙ্ক্ষিত পথের হদিস পান। হোটেলের সামনে সর্বদা পাকিস্তানি সৈন্যের কড়া পাহারা থাকলেও পেছন দিকে কোনো প্রহরী ছিল না। পাশেই কচুরিপানায় পূর্ণ একটি ডোবা। আলোও ছিল না। তাই অরক্ষিত ও অন্ধকার দিকটিকেই আসা-যাওয়ার পথ হিসেবে চিহ্নিত করেন গেরিলারা।

পথ চিহ্নিত হলো। এবার পরিকল্পনার পালা। রেকি থেকে প্রাপ্ত সব তথ্য বিশ্লেষণ করেন গেরিলা সদস্যরা। হানাদারদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ তারা এড়াতে চেয়েছিলেন। রক্তপাতও তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। হানাদার বাহিনীর বুকে কাঁপন ধরানো ও হোটেল আগ্রাবাদে অবস্থানরত দেশী-বিদেশী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। সার্বিক বিবেচনায় হোটেলে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ট্রান্সফরমারটি উড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সদস্যরা নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নেন। মোগলটুলিতে গরিবুল্লাহর বাড়িতে স্থাপিত কেসি-৩-এর শেল্টার থেকে নির্দিষ্ট দিনে অভিযান শুরু করে চার সদস্যের গেরিলা দলটি।

প্রধান রাস্তা এড়িয়ে অলিগলি ঘুরে হোটেলের পেছন দিকে পৌঁছান তারা। সঙ্গে ছিল বিস্ফোরক, একটি নাইন মিলিমিটার এসএমসি এবং দুটি পিস্তল। আর প্রত্যেকের সঙ্গে একটি করে গ্রেনেড। হোটেলের উত্তর পাশের একটি কক্ষে ড্রাইভারদের অস্ত্রের মুখে জব্দ করে রাখেন জাফর। বিস্ফোরক লাগানোর দায়িত্ব ছিল ফয়েজের কাঁধে। রিভলবার হাতে তাকে কভার দেন সাইফুদ্দিন। তিনি ডোবার পাশে অবস্থান নিয়েছিলেন। আর সাইফুদ্দিনের কভার হিসেবে ছিলেন স্টেনগান হাতে গরিবুল্লাহ। বিস্ফোরক লাগিয়ে ফিউজে আগুন ধরিয়ে দেন ফয়েজ। তারপর দ্রুত মোগলটুলি বাজারের দিকে সরে যায় দলটি। খানিক পরেই বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো আগ্রাবাদ এলাকা। সফল হয় গেরিলাদের অভিযান।

হোটেল আগ্রাবাদে পরিচালিত গেরিলা অভিযানের সুদূরপ্রসারী প্রভাব ছিল। এর ফলে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দলের পূর্বনির্ধারিত চট্টগ্রাম সফর বাতিল হয়ে যায়। পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধাবস্থার বাস্তব চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত হয়।

পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ে গ্রেনেড চার্জ

অপারেশনটি ছোট। কিন্তু তার গুরুত্ব ছিল ব্যাপক। ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। সে উপলক্ষে সারা শহরে সাজসাজ রব। স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গ্রেনেড চার্জের পরিকল্পনা করেন ক্যাপটেন করিম। আয়োজিত সব অনুষ্ঠান পণ্ড ও পাকিস্তানপন্থীদের মনে ভীতি সৃষ্টি করাই তার উদ্দেশ্য। তার গ্রুপের ৭-৮ জনকে তিনি এ পরিকল্পনায় সংযুক্ত করেন। তারই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ে গ্রেনেড চার্জের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা মনসুর সিদ্দিকীকে এ অপারেশনের দায়িত্ব দেয়া হয়।

বেলা এগারোটা। পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সমবেত জনতা। এর মধ্যেই চুপিসারে চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে উপস্থিত হন মনসুর সিদ্দিকী। তার কোমরে গোঁজা গ্রেনেড। সুযোগ বুঝে তিনি কোর্ট বিল্ডিং মসজিদের দক্ষিণ পাশে গ্রেনেডটি ছুড়ে মারেন। তারপর দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় গ্রেনেড। লোকজন ভয়ে দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য। ব্যাপক হট্টগোলের মধ্যে যে যেদিকে পারল দৌড়ে পালিয়ে গেল। ওইদিন কোর্ট বিল্ডিংয়ে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পূর্বনির্ধারিত সব কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। ক্যাপ্টেন করিমের পরিকল্পনা সফল হয়।

চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় পরিচালিত মনসুর সিদ্দিকীর অপারেশনটি পাকিস্তানপন্থীদের ব্যাপক ধাক্কা দেয়। তাদের মনোবল দুর্বল হয়ে যায়। স্বাধীনতা দিবসে এ অভিযান পরিচালিত হওয়ায় তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিশেষ নজর কাড়তে সক্ষম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের দিনে পরিচালিত এ গেরিলা আক্রমণ ছিল পাকিস্তানপন্থীদের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের প্রতি চরম আঘাত। অন্যদিকে, এ অপারেশনের দিনক্ষণ নির্ধারণে ক্যাপ্টেন করিম বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছিলেন। পরিকল্পনা অনুসারে অপারেশন সফলভাবে সমাপ্ত হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বহুগুণে বেড়ে গিয়েছিল।

পাকিস্তানের সংহতি দিবসে স্টেশন রোডে অপারেশন

অপারেশনটির খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছিল বিবিসি। তা থেকে জানা যায়, পাকিস্তানি বাহিনীর গাড়িতে গ্রেনেড ছুড়েছে চট্টগ্রামের একটি গেরিলা দল। দিনদুপুরেই তারা এমন সাহসী ঘটনা ঘটিয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। হানাদার বাহিনী কিছু বুঝে ওঠার আগেই অপারেশন শেষ করে পালিয়ে যায় আক্রমণকারী দল। রাস্তায় পথচারী ও গাড়ি তল্লাশি করেও কাউকে ধরতে পারেনি পাকিস্তানি বাহিনী।

চট্টগ্রাম শহরের পাথরঘাটায় অবস্থিত নজুমিয়া লেইনের জনৈক আবু তালেবের বাড়িতে অপারেশনটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। দিন হিসেবে পাকিস্তানের সংহতি দিবসকে বেছে নেয়া হয়। ৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের সংহতি দিবস। ১৯৬৫ সালের এ তারিখে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। তার পর থেকে প্রতি বছর পাকিস্তানের সংহতি দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে দিনটি। মুক্তিযুদ্ধের বছরেও পাকিস্তান সরকার দিবসটিকে সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্যোগ নেয়। এ উপলক্ষে চট্টগ্রামেও বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। আর সে দিনটিকেই অপারেশনের জন্য বেছে নিয়েছিল গেরিলারা। সংহতি দিবস উপলক্ষে পাকিস্তান-সমর্থকগোষ্ঠী মিছিল বের করতে পারে বলে তাদের কাছে খবর ছিল। তারা মিছিলে গ্রেনেড চার্জ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দুল হক সৈয়দ ও রফিকুল ইসলামসহ মোট তিনজনের একটি গেরিলা দল এ অভিযান পরিচালনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ সেপ্টেম্বর বেলা এগারোটার দিকে গোপন আস্তানা থেকে বের হয়ে কোতোয়ালি মোড়ে আসেন তারা। সেখান থেকে ট্যাক্সিযোগে নিউমার্কেট-ডিসি হিল-জামাল খান রোড ঘুরে তিন সদস্যের দলটি আন্দরকিল্লা পৌঁছায়। জামে মসজিদের পাশে সমবেত জনতার ঢল। তারা ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে লালদিঘির মাঠের দিকে এগোতে থাকে। গেরিলাদের উদ্দেশ্য ছিল সেনাবাহিনীর গাড়িতে গ্রেনেড নিক্ষেপ করা। তবে মিছিলের মাঝে ও পেছনে গাড়ি থাকায় গ্রেনেড ছুড়তে পারেননি তারা। তখন তারা মিছিলের পরিবর্তে যেকোনো স্থানে পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর আক্রমণের নতুন সিদ্ধান্ত নেন। ঘুরতে ঘুরতে তারা স্টেশন রোডে এসে উপস্তিত হন। সেখানে দুটি মিলিটারি গাড়ি তাদের চোখে পড়ে। রিয়াজউদ্দিন বাজার ও উজালা হলের মাঝামাঝি জায়গায় গাড়ি দুটি দাঁড়ানো ছিল। একটি ট্রাক, অন্যটি জিপ। সুযোগ বুঝে দুটি গাড়ির মাঝখানে গ্রেনেড ছুড়ে মারেন গেরিলারা। পাকিস্তানের সংহতি দিবসে পরিচালিত এ অপারেশন বিশ্ববাসীর কাছে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ধূমায়িত অসন্তোষের বার্তা পৌঁছে দেয়।


শর্টলিংকঃ