চোরাচালানের স্বর্ণ যাচ্ছে ঢাকার ব্যবসায়ীদের হাতে


ইউএনভি ডেস্ক:

নির্দিষ্ট হারে শুল্ক প্রদানের মাধ্যমে বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু তাতেও বন্ধ হচ্ছে না স্বর্ণ চোরাচালান। অবৈধভাবে দুবাই ও আর্জেন্টিনা থেকে আনা এসব স্বর্ণ কয়েক হাত ঘুরে চলে যাচ্ছে ঢাকার ব্যবসায়ীদের হাতে।

সম্প্রতি রাজধানীর বনানী থেকে অবৈধ স্বর্ণের এমন একটি চালান জব্দের পর এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।কামাল আতাতুর্ক রোডে পুলিশের চেকপোস্টে ৩ ডিসেম্বর অবৈধ স্বর্ণের একটি চালান ধরা পড়ে। গ্রেফতার হন অবৈধ স্বর্ণের বাহক শহীদ হোসেন রায়হান। তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার খায়ের আহম্মেদের ছেলে। তার কাছ থেকে ছয়টি স্বর্ণের বার উদ্ধার হয়। প্রতিটি স্বর্ণের বারের ওজন ১১৬ গ্রাম করে। এর মধ্যে পাঁচটি স্বর্ণের বারের গায়ে খোদাই করে গলফ গোল্ড রিফাইনারি এবং একটি বারের গায়ে এআরজি লেখা রয়েছে। গলফ গোল্ড রিফাইনারি দুবাইভিত্তিক স্বর্ণ শোধনাগার প্রতিষ্ঠান। আর এআরজি আর্জেন্টিনাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। অবৈধ পথে আনা স্বর্ণ বহন ও চোরাচালানের দায়ে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শহীদ হোসেন রায়হানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, চোরাচালানের মাধ্যমে দুবাই থেকে আসা এ স্বর্ণের বার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তিনি গ্রহণ করেন। পরে এ স্বর্ণ পল্টনের ব্যবসায়ী ফয়সাল আহমেদ মুন্নার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। এভাবে এর আগেও বেশ কয়েক দফায় তিনি চোরাই মাধ্যমে আসা স্বর্ণের বার ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

অবৈধ স্বর্ণের চালান জব্দের পর গুলশান থানায় মামলাটি করেন ওই থানার এসআই মো. ফজলুর রহমান। মামলাটি তদন্ত করছেন পরিদর্শক মো. শাহনুর রহমান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, অবৈধ পথে আসা এসব স্বর্ণ কয়েক হাত ঘুরে চলে যাচ্ছে ঢাকার ব্যবসায়ীদের হাতে। জব্দ হওয়া এ চালানটির পেছনে আরো অনেক অপরাধীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে কোন পর্যায়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে অবৈধ স্বর্ণবারের এ চালানটি যাচ্ছিল তা তদন্ত শেষ হওয়ার আগে জানাতে চাননি এ পুলিশ কর্মকর্তা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দরে কর্মরত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যোগসাজশে স্বর্ণের বড় চালান নির্বিঘ্নে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যায়। এ কাজে সহায়তা করেন শুল্ক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও বিমানের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ১০ তোলা ওজনের একেকটি স্বর্ণের বার বিমানবন্দর থেকে বাইরে এনে দিলে চোরাচালানিদের কাছ থেকে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পান তারা। দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে আসার সময় বিমানের কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বর্ণ পরিবহনে সহায়তা করেন। বাহকদের হাতে স্বর্ণ ধরিয়ে দেন দুবাইয়ে অবস্থানরত চক্রের প্রধানরা। বাহক সেই স্বর্ণ বিমানের আসনের নিচে, শৌচাগারে বা অন্য কোনো স্থানে লুকিয়ে রেখে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। পরে বিমানবন্দরে কর্মরত লোকজন নিজ দায়িত্বে সেই স্বর্ণ বের করে বাইরে নিয়ে আসেন।

স্বর্ণের চোরাচালান রোধে নির্দিষ্ট পরিমাণ শুল্ক দিয়ে বৈধ পথে মূল্যবান ধাতুটি আমদানির সুযোগ দিয়েছে সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত এতে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মিলছে না। বৈধভাবে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণের বার আনা হয়েছে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এ বিমানবন্দর দিয়ে সব মিলিয়ে ১৪০ কেজি স্বর্ণবার ব্যাগেজ রুলের আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ মাস করোনার কারণে আকাশপথে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এ

সময় বিদেশ থেকে আকাশপথে কোনো স্বর্ণ আমদানি হয়নি।

নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাগেজ রুলের আওতায় একজন যাত্রী বিদেশ থেকে ফেরার সময় ঘোষণা দিয়ে সর্বোচ্চ ২৩৪ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের বার নিয়ে আসতে পারেন। এতে সর্বোচ্চ দুটি বার আনা যায়। বৈধভাবে স্বর্ণের বার আমদানির জন্য প্রতি ভরিতে (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) শুল্ক-কর ২ হাজার টাকা। তবে বিদেশ থেকে ফেরার সময় একজন যাত্রী ১০০ গ্রাম ওজনের (প্রায় সাড়ে আট ভরি) স্বর্ণালংকার বিনা শুল্কে আনতে পারেন। একই রকমের অলংকার ১২টির বেশি আনা যায় না।


শর্টলিংকঃ