চালের মজুদ সাড়ে পাঁচ লাখ টনে নেমে এসেছে


ইউএনভি ডেস্ক:

গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সরকারের চালের মজুদ ছিল ১০ লাখ ৯৪ হাজার টন। অথচ চলতি বছরের একই তারিখে মজুদের পরিমাণ ৫ লাখ ৫১ হাজার টনে নেমে এসেছে। মূলত কভিড প্রেক্ষাপটে বিতরণ বাড়লেও সে অনুযায়ী সংগ্রহ কার্যক্রমে গতি না পাওয়ায় অর্ধেকে নেমে এসেছে চালের মজুদ।

গত ৭ নভেম্বর আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। এতে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৬ হাজার ৬৬৭ টন সেদ্ধ চাল, ৬৬ টন আতপ চাল ও ১২৬ টন আমন ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে সরকার। সংগ্রহ কম হওয়ার পেছনে বড় কারণ সরকারকে চাল সরবরাহে চালকল মালিকদের অনীহা। এছাড়া ধান সংগ্রহ কার্যক্রমেও ছিল ঢিলেমি। এবার সরকারের বেঁধে দেয়া দামে মুনাফা থাকবে না দাবি করে সরকারকে চাল সরবরাহে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকৃতি জানিয়েছে চালকল মালিক সমিতি। এতে অনেকটাই গতিহীন হয়ে পড়েছে সরকারের সংগ্রহ কার্যক্রম। এজন্য এরই মধ্যে তিন লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বণিক বার্তাকে বলেন, কয়েক দিনের ব্যবধানে চালের মজুদ একটু কমতির দিকে। তবে মজুদ বাড়ানোর জন্য আমরা সব ধরনের বিকল্প উপায় সচল রেখেছি। অভ্যন্তরীণ ও আমদানি উভয় বাজার থেকে সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এরই মধ্যে এক লাখ টন চাল আমদানির টেন্ডার হয়েছে। আরো এক লাখ টনের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই কৃষকের কাছ থেকে আমন ধান সংগ্রহ কার্যক্রম আরো বেগবান করা হবে।

তিনি আরো বলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেশে আমদানীকৃত চাল এসে পৌঁছবে। তখন মজুদ পরিস্থিতি যেমন উন্নতি হবে, তেমনি বাজারে চালের দামও কমে আসবে। বেশি চাল আমদানির কারণে কৃষক যেন ক্ষতির শিকার না হন সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। ভোক্তা ও কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করে ঠিক যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই চাল আমদানি করা হবে।

খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ৮ ডিসেম্বর মজুদের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৫৫ হাজার টন, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১০ লাখ ৫৮ হাজার টন। মজুদের পরিমাণ ৩০ নভেম্বর ছিল ৫ লাখ ৬১ হাজার, ২২ নভেম্বর ৫ লাখ ৮৫ হাজার, ৯ নভেম্বর ৬ লাখ ৯২ হাজার ও ১ নভেম্বর ছিল ৭ লাখ ৬৮ হাজার টন। অর্থাৎ দেড় মাসের ব্যবধানে চালের মজুদ প্রায় ২ লাখ ১৭ হাজার টন কমেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আমন সংগ্রহ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বৈদেশিক উৎস থেকে চাল আমদানি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গত সপ্তাহে তুলনায় রাজধানীর বাজারে সরু, মাঝারি ও মোটা চালের পাইকারি ও খুচরা মূল্য অপরিবর্তিত আছে। তবে ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানি হলে প্রতি কেজি সেদ্ধ চালের দাম ৩৪-৪৬ টাকা আসতে পারে।

এ বিষয়ে সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল বলেন, সরকারের মজুদ কমে এলে সব ধরনের চাল ব্যবসায়ী সুযোগের অপব্যবহার করবেন। সেটাই এখন বাজারে দেখা যাচ্ছে। সরকারের সার্বিকভাবে মজুদ কমে যাওয়া এবং আমন মৌসুমে উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্মিলিত প্রভাব হতে পারে চালের দামে ঊর্ধ্বমুখিতা। প্রাকৃতিক কারণে চাল উৎপাদন কমতেই পারে, সেজন্য যথাসময়ে আমদানির ব্যবস্থাটি সক্রিয় করা প্রয়োজন। সেটি আমরা সঠিকভাবে করতে পারিনি। তবে দেরিতে হলেও আমদানির উদ্যোগ একটু স্বস্তি দেবে।


শর্টলিংকঃ