ডেঙ্গি পরিস্থিতি মহামারির দিকেই যাচ্ছে


ইউএনভি ডেস্ক: 

কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ বলেছেন, ডেঙ্গি পরিস্থিতিকে এখনো মহামারি বলা যাচ্ছে না। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি মহামারি হওয়ার পর্যায়ে আছে। করোনা মহামারির কারণে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো থেকে বিস্তারিত কোনো তথ্য না আসায় সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।

বুধবার সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।‘ঢাকায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি এবং ডেঙ্গি মহামারি প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সিজিএসের চেয়ারম্যান ও কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী এবং মেডিকেল কীটতত্ত্ববিদ ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিএম সাইফুর রহমান।

এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বক্তারা বলেন, ডেঙ্গির বর্তমান পরিস্থিতি মহামারির দিকেই যাচ্ছে।সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী ডেঙ্গি মহামারির শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, চলমান কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে আরেকটা ডেঙ্গি মহামারি হলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এই মহামারি প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

লার্ভা নিধন না করে পূর্ণাঙ্গ এডিস মশা নিধনের প্রতি জোর দিতে বলেছেন তিনি। বিশ্বের অন্যান্য দেশ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এডিস মশার বিস্তার রোধে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করার দিকে নজর দিয়েছে, সেগুলো আমাদের দেশে প্রয়োগের জন্য তিনি বিশেষ আহ্বান জানান।

তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ ডেঙ্গির সংক্রমণ বিষয়ে পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য জরিপ করার দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ডেঙ্গি সংক্রমণ এক ধরনের ঢেউয়ের মতো। প্রতি বছরই যে একই রকম হবে তা নয়। ২০০০ সালে শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ বছর পর্যন্ত আমরা বিভিন্নভাবে এর সংক্রমণ দেখেছি। কোনো বছর কম, কোনো বছর বেশি। তবে এই বছর করোনা মহামারির সময়ে আগে থেকেই এই বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ ছিল।

বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রার ওপর ভিত্তি করে জরিপ করা উচিৎ ছিল। কেননা, এই বছর অনেক আগে থেকেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে এবং তাপমাত্রাও বেশি ছিল, যা কি না এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য আদর্শ পরিস্থিতি। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কিছুটা জরিপ করা হলেও সিটি করপোরেশনগুলো থেকে কোনো জরিপের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ডেঙ্গি রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ঢাকার কোনো এলাকা থেকে তারা এসেছে সেটি জানা গেলে সেই এলাকাভিত্তিক মানুষকে সচেতন করা যাবে।

তিনিও পূর্ণাঙ্গ এডিস মশা নিধনের প্রতি জোর দিয়ে বলেন, ডেঙ্গি মহামারি প্রতিরোধে কীটতত্ত্ববিদদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারকে কাজ করতে হবে। একইসঙ্গে জনগণকেও সচেতন করতে হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, মশা বেশি থাকে বাড়ির নিচতলা, গ্যারেজ ইত্যাদির মতো পেরিডমেসটিক এলাকায়। সেসব এলাকার দিকে বেশি নজর দিতে হবে। সরকার শুধু নির্মাণাধীন ভবনগুলোকে জরিমানা করে ক্ষান্ত হয়। কিন্তু জরিমানা করার পর লোকবল দিয়ে ভবনগুলোকে পরিষ্কার করতে হবে। সরকারি ভবনগুলোতেও অভিযান চালাতে হবে। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মশা নিধনের প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

একটি পূর্ণাঙ্গ এডিস মশা করোনা রোগীকে কামড়ানোর পর যদি কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায় তাহলে সেই সুস্থ ব্যক্তিটি করোনা আক্রান্ত হবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনা পতঙ্গবাহিত হয়- এমন কোনো ইতিহাস নেই।

ড. জিএম সাইফুর রহমান বলেন, প্রজনন সময়ের আগেই এডিস মশার বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিশেষত ঢাকা শহরে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বছরের শুরু থেকেই বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামা জরুরি। শুধুমাত্র ড্রেনে, ঝোপঝাড়ে কীটনাশক স্প্রে করলে হবে না। বাসা-বাড়ির ভেতরে, আনাচে-কানাচে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

সবশেষে ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী ডেঙ্গি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ব্যক্তিগত সুরক্ষার প্রতি জোর দিতে বলেন। তিনি বলেন, যেহেতু শিশুরা ডেঙ্গি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে সবচেয়ে বেশি, তাই শিশুদের ওপর বেশি যত্ন নিতে হবে। শিশুদের মশারি ছাড়া ঘুমাতে দেওয়া যাবে না। শরীর ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরিধান করাতে হবে। জ্বর হলে অবিলম্বে ডেঙ্গি এবং করোনা দুটোই পরীক্ষা করাতে হবে। সপ্তাহে একদিন শনিবার ঘরের আশেপাশে, ঘরের ভেতরে পরিষ্কার করতে হবে। সিটি করপোরেশনকেও একই উদ্যোগ নিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।


শর্টলিংকঃ