থেমে আছে আলী আমজদের ঘড়ির কাঁটা


ইউএনভি ডেস্ক:

সিলেটের নাম উঠলেই যে কয়েকটি স্থাপনার চিত্র চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার মধ্যে অন্যতম আলী আমজদের ঘড়ি। সুরমা নদীর ওপর লোহার সেতু ‘কিন ব্রিজ’ আর তার পাশে ‘আলী আমজদের ঘড়ি’—এ ছবি সিলেটের প্রতীক হয়ে ওঠেছে। তবে কয়েক দিন ধরে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এ ঘড়ি বিকল হয়ে পড়েছে। আটকে আছে ১৪৬ বছরের পুরনো এ ঘড়ির কাঁটা।

আলী আমজদের ঘড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। সিসিকের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাঝেমধ্যেই বিকল হয়ে পড়ে এ ঘড়ি। এর আগে প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর গত বছর ঘড়িটি চালু করা হয়েছিল। তার আগে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বড় সংস্কারকাজ শেষে ২০১৬ সালে ঘড়িটি চালু করে সিসিক।

গত রোববার দুপুরে নগরীর চাঁদনীঘাট এলাকার আলী আমজদের ঘড়িঘরের পাশে গিয়ে দেখা যায়, ৮টা ২০ মিনিটে আটকে আছে ঘড়ির কাঁটা। এরপর সোম ও মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আবার গিয়ে দেখা যায়, একই জায়গায় আটকে রয়েছে কাঁটা। এ ঘড়ি ১ ঘণ্টা পর পর ঘণ্টা বাজিয়ে নগরবাসীকে সময় জানান দিত। অচল হয়ে পড়ার পর থেকে ঘণ্টাও আর বাজছে না। ঘড়িটির সামনেই এবড়ো-থেবড়োভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন গাড়ি। ফলে এ এলাকার সৌন্দর্যহানিও ঘটছে।

চাঁদনীঘাট এলাকার কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, সপ্তাহখানেক আগেও সচল ছিল এ ঘড়ি। এক সপ্তাহ ধরে এটি বিকল হয়ে পড়েছে। তবে নতুন করে ঘড়িটি বিকল হওয়ার তথ্য জানা নেই সিটি করপোরেশনের।

জানা যায়, ১৮৭৪ সালে তত্কালীন বড়লাট লর্ড নর্থব্রুক সিলেট সফরে এসেছিলেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান নগরের প্রবেশমুখ চাঁদনীঘাট এলাকায় ঘড়িটি নির্মাণ করেন। তিনি ঘড়ির নামকরণ করেন নিজের ছেলে আলী আমজদ খানের নামে। সেই থেকে এটি আলী আমজদের ঘড়ি নামে পরিচিত। গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, ভারতের দিল্লির চাঁদনী চক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নবাব ঘড়িটি স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তাদের মতে, সেই সময়ে সিলেটে ঘড়ির প্রচলন তেমন ছিল না। ফলে এ ঘড়ি থেকেই সময় জানতে পারত শহরের বেশির ভাগ মানুষ। সেই সময়ের ছোট্ট ও কোলাহলহীন শহরের দূরদূরান্ত থেকেও ঘড়ির ঘণ্টা শোনা যেত। সময়ের পরিক্রমায় এ ঘড়ি হয়ে ওঠেছে ঐতিহ্যের অংশ। দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরাও বিশাল এ ঘড়ি দেখতে আসেন। এর নান্দনিক স্থাপনা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, আলী আমজদের ঘড়ির দৈর্ঘ্য ৯ ফুট ৮ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি। নিচ থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ১৩ ফুট, ছাদ থেকে ঘড়ি অংশের উচ্চতা ৭ ফুট, ঘড়ির উপরের অংশের উচ্চতা ৬ ফুট। মোট উচ্চতা ২৬ ফুট। ঘড়িটির ডায়ামিটার আড়াই ফুট এবং ঘড়ির কাঁটা ২ ফুট লম্বা। লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির এ ঘড়ি।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা ঘড়িটি বিধ্বস্ত করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের পর কিছুসংখ্যক প্রবাসী, আরো পরে তত্কালীন সিলেট পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এটি সচল করতে উদ্যোগী হয়। তবে এরপর থেকে বারবার অচল হয়ে পড়ছে ঘড়িটি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে ঘড়িঘরের ফাঁকফোকর দিয়ে পাখি প্রবেশ করে অপারেশনাল ডিভাইস নষ্ট করে ফেলত। এ কারণেই ঠিক করার কিছুদিন পর পর ঘড়িটি বিকল হয়ে পড়ত। তবে ২০১৬ সালে পাখি প্রবেশের পথ বন্ধ করে নতুনভাবে সংস্কার করা হয়। তবে এর পরও নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখা যাচ্ছে না ঐতিহ্যের এ স্মারক।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ঘড়িটি আবার বিকল হয়ে পড়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেব। তিনি বলেন, নানা কারণে এটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হয় না। এ কারণে বিকল হয়ে পড়তে পারে।


শর্টলিংকঃ