দুররানি সাম্রাজ্য : আধুনিক আফগানিস্তানের ভিত


মোগল সম্রাট শাহ্জাহানের অসুস্থতার সময় শুরু হওয়া উত্তরাধিকার যুদ্ধের ফলাফল হিসেবে শাহজাদা শুজাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল। পালাতে পালাতে আরাকান পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন তিনি; আর তার পরের ইতিহাস ধোঁয়াটে। পৃথিবীর বড় বড় রাজবংশে এ রকম একেকজন থাকেন যাদের ভাগ্যাকাশে রোদের চেয়ে মেঘের ঘনঘটাই থাকে বেশি।

এই মোগলদেরই একসময় যে নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন আহমদ শাহ্ আবদালি, তারই এক উত্তরসূরি শাহ্ শুজা দুররানির ভাগ্যটাও শাহ্জাহান পুত্র শুজার মতোই হয়েছিল। অবশ্য বলা যায়, শুজা দুররানি কিছু জায়গায় শাহজাদা শুজার চেয়ে ভাগ্যবান ছিলেন।

আহমদ শাহ্ আবদালির উপাধি ছিল দুররানি এবং এ উপাধি থেকে তার রাজবংশের নাম দুররানি রাজবংশ হয়। সেই দুররানি শাসনে শাহ্ শুজা দুররানি ছিলেন আফগানিস্তানের পঞ্চম আমির এবং বংশক্রমে আবদালির দ্বিতীয় অধস্তন পুরুষ; আবদালির জ্যেষ্ঠ পুত্র তৈমুরের সন্তান। নাদির শাহ সেনাবাহিনীর সদস্য আহমদ শাহ্ নিজ গুণে আফগানিস্তানের আমির হয়ে নাদিরের রাজ্য কেবল বর্ধিতই করেননি, নানা অভিযানের মাধ্যমে তা সংহতও করেছিলেন।

কিন্তু উজবেকিস্তান, পারস্য, পাঞ্জাব প্রভৃতি এলাকা দখল করার ফলে অন্যান্য অনেক সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক বিদ্রোহ ধীরে ধীরে আফগান শাসনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই সঙ্গে আফগান, পাঠানদের নানা উপজাতি, গোত্রের মধ্যে বিবাদের কারণে তাদের শক্তি দ্রুত কমতে শুরু করে। তাই আহমদ শাহ্ আবদালির মৃত্যুর ৩০ বছরের মাথায়ই আফগানদের দুররানি শাসনে ঘুণ ধরে যায়। আর সে সময়ই শাহ্ শুজা দুররানি ক্ষমতা লাভ করেন।

শুজার পিতা তৈমুরের সন্তানদের মধ্যে জামান শাহ্ প্রথমে সিংহাসনে আরোহণ করেন। এক্ষেত্রে তিনি সভাসদ-সেনাপতি সর্দার পায়েন্দা খানের সহায়তা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সিংহাসনের প্রতি তৈমুরের অন্য সন্তানদেরও আকাঙ্ক্ষা ছিল। আফগানিস্তানের নীতি অনুসারে কোনো বিকলাঙ্গ ব্যক্তি আমির হতে পারে না। তাই সৎ ভাই মাহমুদ শাহ্ সিংহাসন দখলের লক্ষ্যে শাহ্ জামানের বিরুদ্ধে নানা চেষ্টার পর তাকে অন্ধ করে দেন এবং নিজে ক্ষমতা দখল করেন। শাহ্ জামানকে বালা হিশার দুর্গে আটক রাখা হয়।

এদিকে শাহ্ শুজা প্রথম জীবনে হেরাত ও পেশোয়ারের তত্ত্বাবধায়ক (গভর্নর) ছিলেন। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজেকে আমির ঘোষণা করেন। মাহমুদ শাহেক উত্খাত করে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে তার অভিষেক ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে সম্পন্ন হয়। শুজার ক্ষমতা লাভের আগ পর্যন্ত আফগানিস্তানের গোত্রে গোত্রে নানা বিবাদ চলছিল। মূলত শুজা যে ‘সাদোজাই’ গোত্রের সদস্য, তাদের সঙ্গে ‘বারাকজাই’ গোত্রের শত্রুতা বহুদিনের।

এমনকি জামান শাহ্ যে সর্দার পায়েন্দা খানের সাহায্য নিয়েছিলেন—তিনি নিজে একজন বারাকজাই ছিলেন। শুজা আমির হওয়ার পর যে বারাকজাইদের সঙ্গে আর সংঘর্ষ হয়নি এমন নয়, তবে তিনি এ সংঘর্ষ হ্রাসের চেষ্টা করেছিলেন। বারাকজাই গোত্র থেকে তিনি ওয়াফা বেগম নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করে গোত্রের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনে সচেষ্ট হয়েছিলেন।

শাসনের শুরুর দিকে শাহ্ শুজা নিজের মতো করে আফগানিস্তানের শান্তি আনতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভাগ্য তার সহায় ছিল না। গোত্র দ্বন্দ্বের সাময়িক সুরাহা হলেও তিনি তার ভাই মাহমুদ শাহ্ কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন। যদিও জামান শাহে্র পক্ষে আফগানিস্তানের সিংহাসন দখল তথা শুজার জন্য হুমকি হয়ে আসা সম্ভব ছিল না, কিন্তু মাহমুদ শাহ্ সব ধরনের চেষ্টাই করছিলেন। ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে নিমলার যুদ্ধে তিনি শাহ্ শুজাকে পরাজিত করেন এবং আফগানিস্তানের আমির হন। শাহ্ শুজা পাঞ্জাবে নির্বাসিত হন এবং এ সময় থেকেই শাহ্ শুজার জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। শুজার এ বিপর্যয়ে জড়িয়ে আছে বিখ্যাত ‘কোহ-ই-নূর’-এর ইতিহাস।

গোলকোন্ডার খনি থেকে পাওয়া এ হীরা প্রথমে দাক্ষিণাত্য, পরবর্তী সময়ে আলাউদ্দিন খিলজীর হস্তগত হয়। এরপর মোগল সম্রাট বাবর এবং ক্রমান্বয়ে মোগল সম্রাটদের অধিকারে থাকা হীরাটি নাদির শাহ্ লোপাট করেছিলেন। নাদিরের পর তা স্বভাবতই আহমদ শাহ্ আবদালির হাতে আসে এবং তার উত্তরাধিকারীরা এ হীরার অধিকারী হয়।

জামান শাহ্ পরাজিত এবং অন্ধ হয়ে যখন বন্দি, ওই ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দেরই কোনো একসময় শাহ্ শুজা তাকে কোহ-ই-নূর সম্পর্কে জেরা করেন। জামান শাহ্ বলেছিলেন তিনি বন্দি হওয়ার পরপর হীরাটি দুর্গের একটি ফাটলে লুকিয়ে রাখেন। শুজার আদেশে তার একান্ত বিশ্বাসী লোকরা সেই হীরা খুঁজে পায় একজন শেখের কাছে, যে কিনা হীরাটিকে কাগজ চাপা দিতে (পেপারওয়েট) ব্যবহার করছিল।

পৃথিবীর নানা রত্ন সম্পর্কে নানা অভিশাপের কথা শোনা যায়। কোহ-ই-নূর সম্পর্কেও আছে। বলা হয়ে থাকে এ হীরা যার কাছে থাকবে, দুর্ভাগ্য তার পিছু ছাড়বে না। জ্যোতিষী কিংবা কথকতা-প্রেমীরা এ ধারণাকে আরো পোক্ত করতে পারেন কেননা ওই বছরই মাহমুদ শাহ্ কর্তৃক শাহ্ শুজা পরাজিত হন এবং তাকে পালিয়ে যেতে হয়। হীরাটি এ সময় তার কাছেই ছিল। কেবল কোহ-ই-নূর নয়, মোগল সাম্রাজ্যের আরেক বিখ্যাত হীরা ‘দরিয়া-ই-নূর’ও তার কাছেই ছিল।

পরবর্তী সময়ে তত্কালীন ভারতের অনেক স্থানীয় শাসক তাকে আশ্রয় দেয়া কিংবা হত্যার চেষ্টা করেছে। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ‘কোহ-ই-নূর’ লাভ করা। এ সময় তিনি শিখ মহারাজা রণজিৎ সিংয়ের ‘আশ্রয়ে’ আসেন। কাগজে-কলমে আশ্রয় হলেও মূলত তিনি আটক হয়েছিলেন এবং মহারাজা রণজিৎ সিং তার কাছ থেকে হীরাটি লাভ করতে চাইতেন।

রণজিৎ সিংয়ের আগে কাশ্মীরের শাসক যখন শুজাকে বন্দি করেন তখন ওয়াফা বেগম নিজে রণজিৎ সিংয়ের কাছে স্বামীর মুক্তির আবেদন করলে রণজিৎ সিং তার পরিষদ ফকির আজিজুদ্দিনের কাছে পরামর্শ চাইলেন। দরবারি লেখক সোহন লাল সুরীর মতে, ‘কোহ-ই-নূর হস্তান্তর করা হবে, কেবল এই শর্তে সাহায্য করার ব্যাপারে আজিজুদ্দিন রাজি হন।’

অর্থাৎ, শাহ্ শুজা একজন শত্রুর হাত থেকে অন্য শত্রুর হাতে পড়লেন। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীর আক্রমণ করে তাকে যখন লাহোরে আনা হয় তখন তিনি শৃঙ্খলিত ছিলেন। মুচি দরওয়াজার মুবারক হাভেলিতে থাকা অবস্থায় তাকে নজরবন্দি রাখা হয় এবং বারবার কোহ-ই-নূর হস্তান্তরের জন্য চাপ দেয়া হয়। একসময় তার চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা আসে এবং তার হারেমও সরিয়ে নেয়া হয়। উল্লেখ্য, শাহ্ শুজা আরাম-আয়েশে থাকতে পছন্দ করতেন। তার অনেক পত্নী, উপপত্নী ছিল। এ অবস্থায় একদিন শাহ্ শুজা দেখলেন তার খাদ্যের বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হলো। আত্মজীবনী ‘ওয়াকিয়া-এ-শাহ্ শুজা’য় তিনি লিখেন, ‘এই এক চক্ষু* অভদ্র লোকটি আতিথেয়তার নিয়মনীতি লঙ্ঘন করেছে।’

শাহ্ শুজার লেখা থেকেই আমরা জানতে পারি যে, একদিন তার সামনেই তার পুত্র তৈমুর শাহকে বেধড়ক পেটানো হয় এবং তৈমুর চিত্কার করে পিতাকে বলে সে যেন কোহ-ই-নূরের মোহ ত্যাগ করে তার কাবুলের সিংহাসন দখলের কথা চিন্তা করেন। ঠিক হয় পরদিন তিনি হীরাটি হস্তান্তর করবেন। হেনরি প্রিন্সেপের বর্ণনা অনুসারে, ‘নির্দিষ্ট দিনে তারা প্রায় ১ ঘণ্টা নিঃশব্দে বসে রইলেন। তারপর রণজিৎ সিং একজন ভৃত্যকে বললেন শাহ্ শুজাকে যেন এখানে আসার কারণ মনে করিয়ে দেয়া হয়। এর পরও শুজা নিশ্চুপ বসে রইলেন। অনেকক্ষণ পর শুজা একজন খোজাকে ইশারা করার পর সে একটি ভাঁজ করা কাপড় মেলে ধরলে সেখানে কাঙ্ক্ষিত হীরাটি দেখা গেল।’

এরপর রণজিৎ সিংয়ের ‘আশ্রয়ে’ তিনি মোটামুটি ভালোই ছিলেন। যদিও একবার শুজার তাঁবু ‘লুণ্ঠিত’ হয় এবং তিনি নিজের সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীদের গহনা, অন্যান্য রত্ন হারান। বাহ্যিকভাবে লুণ্ঠন মনে হলেও আসলে এসব ছিল রণজিৎ সিংয়ের চক্রান্ত, কেননা তিনি জেনেছিলেন কোহ-ই-নূর ছাড়াও শুজার কাছে আরো অনেক গহনা ও রত্ন রয়েছে। নিজের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য রণজিৎ সিংয়ের এসব সম্পদের প্রয়োজন ছিল। অবশ্য পরবর্তী সময়ে রণজিৎ সিং তাকে সাহায্য করেছিলেন আফগানিস্তানে শাসন পুনরুদ্ধার করতে। এক্ষেত্রে তার সঙ্গে আরো সহায় হয়েছিল ব্রিটিশ ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়ার সৈন্যবাহিনী। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধের মাধ্যমে শাহ্ শুজা আবার আফগানিস্তানের সিংহাসন ফিরে পান।

এ পর্যায়ে একটু পেছনে ফিরে যাওয়া প্রয়োজন। কেননা যদিও ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের সহায়তায় শুজা আবার আফগানিস্তানে ফিরেছিলেন, ইংরেজদের সঙ্গে তার মৈত্রী আরো আগেই হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে তা রক্ষিত বা কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ হয়নি। ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে কোহ-ই-নূর লাভের সঙ্গে সঙ্গে তিনি ইংরেজদের মৈত্রীর হাতছানি পেয়েছিলেন। তিনি জানতে পেরেছিলেন উপহারসহ ইংরেজদের একটি কূটনৈতিক মিশন এগিয়ে আসছে তার কাছে। শুজার জন্য খবরটি আনন্দদায়ক ছিল, কেননা বিগত দিনগুলোতে ব্রিটিশদের কারণে তার শাসন ও রোজগার কমে এসেছিল।

এখান থেকে আরো পেছনে ফিরে গেলে আমরা দেখব, নাদির ও আহমদ শাহ্ উভয়ই ‘ভারত’ থেকে সম্পদ লুট করে আফগানিস্তানের উন্নতি সাধন করেছিলেন। কেবল এ পর্যন্তই নয়, পরবর্তী সময়ও পাঞ্জাব ও অন্যান্য স্থানে অভিযানের মাধ্যমে আফগানিস্তানের প্রভূত রোজগার হতো। কিন্তু প্রথমে কোম্পানি এবং পরে ব্রিটিশ রাজের সৈন্যবাহিনীর প্রহরার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

এমতাবস্থায় মৈত্রীর এ পদক্ষেপ অবশ্যই সুখকর। উইলিয়াম ড্যালরিম্পলের বর্ণনা থেকে আমরা পাই, ‘ব্রিটিশরা শাহ্ শুজার জন্য সোনালি হাওদাসহ হাতি, চমত্কার ছত্রসহ একটি পালকি, স্বর্ণখচিত বন্দুক এবং ছয় চেম্বারের পিস্তল এনেছিল, যা আফগানিস্তান আগে দেখেনি। এছাড়া মূল্যবান ঘড়ি, দূরবীন এবং রোম ও চীন থেকে আনা সোনার কাজ করা তৈজস, পোরসেলিন প্রভৃতিও উপহার হিসেবে প্রদান করেছিল।’ ঠিক সেই সময় এ সফরের কারণ কী ছিল তা অজানা হলেও পরবর্তী সময়ে আত্মজীবনীতে শুজা লিখেছেন, তিনি জানতেন এ মৈত্রী তার জীবন এবং আফগানিস্তানের ইতিহাস বদলে দেবে।

ভারতের মতো ব্রিটিশরা আফগানিস্তানের ইতিহাসও বদলে দিয়েছিল। শুজা যখন পাঞ্জাবে তখন আফগানিস্তানে প্রথমে মাহমুদ শাহ্ ক্ষমতা লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে বারাকজাইদের হাতে ক্ষমতা সংহত হয় এবং একসময় বারাকজাইদের মধ্যেই অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দোস্ত মোহম্মদ খান এ সময় আফগান দরবারের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হন। ব্রিটিশরা পাঞ্জাব থেকে তাদের যাত্রা শুরু করে। ব্রিটিশ ও ভারতীয়সহ ২১ হাজার সৈন্যের দল নিয়ে জন কীন যাত্রা করেন। তাদের সঙ্গে কাবুলে কলকাতার রিপ্রেজেন্টেটিভ উইলিয়াম হে যোগ দিলে সেনাবল এবং রসদ বৃদ্ধি পায়। ২৫ এপ্রিল কান্দাহার পৌঁছে আবার এগিয়ে যেতে থাকলে প্রথমে গেলজাইদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ হয়। পরবর্তী সময়ে ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুলাই গজনী দখল করার মাধ্যমে খাইবার পাখতুনওয়া দখলে চলে আসে। ব্রিটিশদের বহর দেখে দোস্ত মোহম্মদ খান কোনো প্রতিরোধ না করে শহরের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে রাজি হন। শর্ত থাকে তাকে শাহ্ শুজার উজির করতে হবে।

ব্রিটিশদের সহায়তায় শাহ্ শুজা সিংহাসনে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন কিন্তু সেই সময় থেকে তিনি ব্রিটিশদের পুতুলে পরিণত হন। পাঞ্জাবে নির্বাসনে থাকা বা অন্য নানা কারণে তিনি ততদিনে একজন নৃশংস ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিন। কথিত আছে, পাঞ্জাবে থাকাকালীন তার কোনো ভৃত্য বা কর্মচারী অক্ষত দেহে ছিল না। সামান্য অপরাধেই তাদের নাক, কান কাটা কিংবা খোঁজা করা হতো। আফগানিস্তানের সিংহাসন পুনরায় অধিকার করার পর তিনি এখানকার বাসিন্দাদের ‘কুকুর’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

প্রথম জীবনে শুজা সুশাসক হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি তিনি দেখতেও সুদর্শন ছিলেন। এলফিনস্টোন লিখেছেন, ‘কাবুলের রাজা একজন সুদর্শন ব্যক্তি। স্পষ্ট কণ্ঠস্বর ও ঘন দাড়ির অধিকারী।’ উইলিয়াম ফ্রেজারের মতে, ‘তিনি লম্বায় প্রায় পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি। গায়ের রঙ ফর্সা, তবে ফ্যাকাশে ধরনের। ঘন এবং লম্বা দাড়ি দুদিক থেকে উপরের দিকে ছাঁটা কিন্তু উপরে এসে আবার বাঁকিয়ে রাখা।’ তার ছবি দেখে মনে হয়, দাড়ি ও পোশাকে শিখদের প্রভাব ছিল। এই শাহ্ শুজা দুররানি ৩০ বছর পর সিংহাসন লাভ করে কেবল তিন বছর তা ভোগ করেন এবং বলা চলে ব্রিটিশদের হাতের পুতুলে পরিণত হন। আসলে শাহ্ শুজা ছিলেন বিদেশী শক্তির হাতে আফগানিস্তানের প্রথম পুতুল শাসক।

*অল্প বয়সে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে রণজিৎ সিংয়ের একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়।

 

মাহমুদুর রহমান: লেখক


শর্টলিংকঃ