দূরে যাওয়ার ভয় এগারোফোবিয়া


সিলেট থেকে ঢাকা আসার সময় আমজাদ মিয়া তার ছয় বছরের ছেলেকে সঙ্গে করে আসছেন। কারণ পথে যদি পড়ে যাই অথবা অসুস্থ হয়ে যাই, ছেলে ধরতে পারবে। সঙ্গে লোক থাকলে সাহস লাগে তখন চলাফেরা করা যায়। একটি মানুষ কিছুদিন আগেও একা যেখানে খুশি সেখানে যেত পারত এখন সঙ্গে লোক লাগে। দূরে যাওয়ার ভয়, একা কোথাও যেতে পারে না।

বিশেষ করে হাটে, বাজারে, মসজিদে, মন্দিরে কেন যেতে পারে না- যদি কিছু হয়ে যায়। শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হয়, বুক ধরফড় করে, শরীর কাঁপে, মনে হয় অজ্ঞান হয়ে যাবে। রোগীরা ভয়ের উৎস অর্থাৎ যেখানে ভয়ের সূত্রপাত সেগুলো এড়িয়ে চলে। সঙ্গে থাকে অস্বাভাবিক দুশ্চিন্তা, সূচিবাই ও বিষণ্নতা। মজার বিষয় হলো, রোগীরা ভয় পায় কিন্তু অন্যেরা ভয় পায় না। অন্যেরা এসব দেখে হাসে ও ন্যাকামি মনে করে। কেউ কেউ মনে করে, আলগা দোষ কিনা? এ ধরনের ভয় মনে হয় রোগীরা ইচ্ছাতেই করে, আসলে তা নয়। উপরের আমজাদ মিয়া এগারো ফোবিয়া নামক অসুখে ভুগছেন। কম-বেশি ভয় অনেকেরই লাগে কিন্তু এই ভয়ের কারণে যখন কোনো ব্যক্তির কাজের ব্যাঘাত ঘটে, চলাফেরা সীমাবদ্ধ হয়ে যায় এবং নিজের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয় তখনই চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এই ভয়-ভীতি নিয়ে ফকির-কবিরাজ, এই ডাক্তার ওই ডাক্তার দেখাতে দেখাতে সর্বস্বান্ত হয়েছে অনেকে। পুরুষ মহিলা সবারই হতে পারে। তবে মহিলাদের ২-৩ গুণ বেশি হয়।

কিভাবে শুরু হয় : কবরস্থান, মৃত ব্যক্তি, দুর্ঘটনার খবর, রোগী, হাসপাতাল, রক্ত ইত্যাদির ভয়, নিকটাত্দীয় কেউ হার্টের অসুখে মারা গেছে তার পর থেকেও ভয় শুরু হতে পারে। শিক্ষকদের বেতের অথবা মারের ভয়, অফিসে বসের ভয়, পোকামাকড়ের ভয় ইত্যাদি।

কি কি কারণে হয় : দীর্ঘদিন পেনিক ডিজঅর্ডারে ভুগে থাকলে, দীর্ঘদিন ঘুমের ওষুধ খেয়ে থাকলে, শৈশবে কোনো বেদনা-দায়ক ঘটনা, আত্মীয়দের মধ্যে কারও থাকলে এ সব রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেরোটনিন, গাবা ও নরএডরেনলিন তারতম্য এবং ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা।

লেখক: মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল, ঢাকা।

 


শর্টলিংকঃ