দোকান বন্ধ রাখতে বলায় আনসার পেটালেন ইউপি সদস্য


দুর্গাপুর প্রতিনিধি:

রাজশাহীর দুর্গাপুরে সরকারি আদেশে ডিউটি করতে গিয়ে সরকার দলীয় ইউপি সদস্য ও তার ক্যাডারদের হামলায় আহত হয়েছে সেলিম রেজা (৩২) নামের এক আনসার সদস্য। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সেলিম রেজা ওই গ্রামের মফিজ উদ্দিনের পুত্র বলে জানা গেছে।

ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন ও গ্রাম পুলিশের সদস্যরা সেলিম রেজাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানা গেছে। জানা গেছে, সরকারি আদেশে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে গ্রাম পুলিশের সহযোগিতায় আনসার বাহিনীর সদস্যরা উপজেলার কিসমত গণকৈড় ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে সচেতনতামূলক প্রচারাভিজান চালান। ওই সময় পাড়া মহল্লার মোড়ে মোড়ে ছোটখাটো মুদি দোকান ও চায়ের স্টল খোলা রাখায় সেগুলো বন্ধের অনুরোধ জানান তারা।

এ সময় ভবানীপুর গ্রামের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ইউপি সদস্য মেহের আলীর ছোট ভাই আমান আলীর স্ত্রী বাড়ির পাশেই দোকান খোলা রেখে ব্যাবসা চালিয়ে আসছিলেন। দোকান খোলা রাখায় গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দোকান বন্ধের জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু বিষয়টি মোটেও ভালো লাগেনি আমান আলীর স্ত্রীর।

আমান আলীর স্ত্রী ঘটনাটি আমান আলীকে জানান। এরপর আমান আলী ঘটনাটি তার ভাই ইউপি সদস্য মেহের আলীকে জানান। খবর পেয়ে ইউপি সদস্য মেহের আলী ও তার ৪/৫ জন ক্যাডার ওই দোকানের সামনে উপস্থিত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ডিউটি শেষ করে ওইপথ দিয়ে বাসায় ফিরছিলেন আনসার সদস্য সেলিম রেজা। এ সময় ইউপি সদস্য মেহের আলী সেলিম রেজাকে ধরে তার ভাইয়ের দোকান কেন বন্ধ করা হয়েছে তার কারণ জানতে চান। এ সময় সেলিম রেজা জানান প্রতিটি দোকান বন্ধ রাখতে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। তারা কেবল সরকারি নির্দেশনা পালন করেছেন।

এ সময় ইউপি সদস্য মেহের আলী সেলিম রেজার কাছ থেকে আনসার বাহিনীর উপজেলা কমান্ডারের মোবাইল নম্বর নিয়ে তাকে ফোন দেন এবং তাকে না জানিয়ে কেন তার এলাকায় লোক পাঠানো হয়েছে সেটাও জানতে চান। একপর্যায়ে ইউপি সদস্য মেহের আলী ক্ষিপ্ত হয়ে আনসার বাহিনীর উপজেলা কমান্ডারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং দেখে নেয়ার হুমকি দেন। সেলিম রেজা এ সময় প্রতিবাদ জানালে ইউপি সদস্য মেহের আলী ও তার ক্যাডাররা সেলিম রেজাকে লাঠিসোঠা দিয়ে বেধড়ক মারপিট শুরু করে।

একপর্যায়ে সেলিম রেজা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ইউপি সদস্য মেহের আলী ও তার ক্যাডাররা সেলিম রেজাকে পা দিয়ে খুঁচতে থাকে। স্থানীয় লোকজন সেলিম রেজাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলেও ইউপি সদস্য মেহের আলীর হুমকি-ধামকির কারণে তারা কেউ সেলিম রেজাকে বাঁচাতে আসতে পারেননি। একপর্যায়ে সেলিম রেজাকে মেরে ফেলে রেখে চলে যায় ইউপি সদস্য মেহের আলী ও তার ক্যাডাররা।

পরে খবর পেয়ে গ্রাম পুলিশের সদস্যরা সেলিম রেজাকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বিষয়টি তাৎক্ষনিক মোবাইল ফোনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসীন মৃধাকে জানানো হয়েছে বলেও জানান স্থানীয় সমাজকর্মী শাহাব উদ্দিন। এর আগেও ইউপি সদস্য মেহের আলীর বিরুদ্ধে সরকারি খাস জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে কথা বলতে ইউপি সদস্য মেহের আলীর মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।


শর্টলিংকঃ