ধর্ষণের অভিযুক্তকে বাঁচাতে পুলিশ-চিকিৎসকের জালিয়াতি!


ইউএনভি ডেস্ক:

রাজশাহীর একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ধর্ষককে বাঁচাতে পুলিশ ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষককে বাঁচাতে পুলিশ জালিয়াতি করে ঘটনার তারিখ সাত মাস এগিয়ে দিয়েছে, আর চিকিৎসক ধর্ষণ পরীক্ষার তারিখ এগিয়েছেন ১৫ দিন।

এই জালিয়াতির ফলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী বিচার পাবেন কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। অথচ বিচারের আশায় ওই ছাত্রী ছুটছেন আদালত থেকে পুলিশের দুয়ারে।

এ ঘটনার সঙ্গে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রওশন আলম, ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ এবং রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক কফিল উদ্দিন জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই ছাত্রী ও মামলার সাক্ষীদের তথ্য মতে, গত ৫ আগস্ট ধর্ষণের পরদিন ছাত্রীটি থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে ধর্ষণের ঘটনায় নগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকার কামরুজ্জামান দুলালের ছেলে ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান মান্নাকে গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপেই থানায় মান্নার পরিবার মেয়েটিকে সমঝোতার জন্য চাপ দেয়।

কিন্তু ছাত্রীটি জানিয়ে দেন, মান্না তাঁকে বিয়ে করতে রাজি হলেই তিনি সমঝোতা করবেন। অন্যদিকে মান্না বিয়েতে রাজি না হয়ে টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে চান। পরে একটি সাদা কাগজে মেয়েটির স্বাক্ষর নিয়ে তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা করে পুলিশ। গত ৯ আগস্ট রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ওই ছাত্রীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট পরীক্ষা করা হয়।

ছাত্রীর অভিযোগ, ঘটনার তারিখ ৫ আগস্ট উল্লেখ করার পরই ধর্ষণের আলামত সংগ্রহে পুলিশ তাঁকে রামেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পরীক্ষার জন্য। কিন্তু মামলায় পুলিশ ওই তারিখ পরিবর্তন করে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি উল্লেখ করেছে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ওই দিন মেয়েটি নগরীর বেলদারপাড়া এলাকায় মান্নার এক বন্ধুর বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হন। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন মনিরুজ্জামান মান্না। ধর্ষণ ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার মেয়েটি গত ৬ আগস্ট থানায় অভিযোগ করেন।

ছাত্রীর অভিযোগ, ঘটনার এক দিন পরই থানায় গিয়ে অভিযোগ করেছেন তিনি। মৌখিক অভিযোগ পেয়েই পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। কিন্তু প্রভাবশালী আসামিকে বাঁচাতে পুলিশ ও চিকিৎসক ঘটনার তারিখ পরিবর্তন করে দিয়েছেন।

ছাত্রীর আইনজীবী হামিদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মেয়েটি যদি সাত মাস আগে ধর্ষণের শিকার হতো তাহলে থানায় মামলা নিয়ে ধর্ষণের আলামত পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠাত না। কারণ এত দিন ধরে আলামত থাকার কথা নয়। মেয়েটি গত ৫ আগস্ট ধর্ষণের শিকার হয়। কিন্তু পুলিশ আসামিকে বাঁচাতে ইচ্ছা করে এজাহারে তারিখ পরিবর্তন করে ১২ জানুয়ারি উল্লেখ করেছে।’

তিনি আরো জানান, মামলায় যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে, ওই দিন আসামি মালয়েশিয়ায় ছিলেন। আদালতে এ ধরনের একটি পাসপোর্ট ও ভিসার কপি দাখিল করা হয়েছে। এতে প্রমাণ হয়, পুলিশ মামলার তারিখ পরিবর্তন করেছে ধর্ষককে বাঁচাতে। আবার হাসপাতালের চিকিৎসকও তাঁর প্রতিবেদন তৈরির দিন ৯ আগস্টের পরিবর্তে ২৬ জুলাই উল্লেখ করেছেন। অথচ মামলা হয়েছে ৬ আগস্ট। এরপর ৮ আগস্ট মামলার এসআই রওশন আলম ভিকটিমের আলামত পরীক্ষার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেয়েটিকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। পরের দিন ৯ আগস্ট মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।

আইনজীবীর প্রশ্ন, মামলা হওয়ার আগেই চিকিৎসক ধর্ষিত মেয়েটির পরীক্ষা করেন কী করে? আবার পুলিশের প্রতিবেদনেও ওই ছাত্রী সরাসরি ধর্ষিত হয়েছেন এমন উল্লেখ করা হয়নি। উল্লেখ করা হয়েছে—কোনো একসময় মেয়েটির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হয়েছে এমন কথা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রওশন আলম বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ সঠিক নয়। মেয়েটি যেদিন ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে, সেদিনের কথাই মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।’

ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘মামলায় তারিখ পরিবর্তনের ঘটনাটি সঠিক নয়। আসামিকে বাঁচাতে তারিখ পরিবর্তনের অভিযোগও সঠিক নয়। বাদীর দেওয়া তথ্য মতেই মামলা এজাহারভুক্ত করা হয়েছে।’

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক কফিল উদ্দিন বলেন, ‘আলামত সংগ্রহের তারিখ ভুলবশত ২৬ জুলাই হয়েছে। সেটি সংশোধন করা যাবে। আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রতিবেদন তৈরির বিষয়টি সঠিক নয়।’ – কালের কণ্ঠ


শর্টলিংকঃ