নওগাঁ-বগুড়া নাটোর- অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ ৬ বছর পর মুক্তি পেতে যাচ্ছে !


রাজেকুল ইসলাম, রাণীনগর :

অবিরাম গতিতে এগিয়ে চলেছে নওগাঁর রাণীনগর হয়ে নাটোর জেলার কালীগঞ্জ যাওয়ার ২২কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং এর কাজ।ইতিমধ্যেই পুরো সড়কের প্রায় ৮০শতাংশ কার্পেটিং এর কাজ শেষ হয়েছে।

নওগাঁ সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় সাংসদের অনেক চেস্টার পর দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর পর নতুন করে কাজের দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঠিকাদার নিযুক্ত হয়। সড়কের কাজ সম্পন্ন হলে নওগাঁসহ বগুড়া, নাটোরসহ কয়েকটি জেলার লাখ লাখ মানুষ নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুব সহজেই চলাচল করতে পারবেন বিশেষ করে ধান অধ্যুষিত অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকরা বেশি উপকৃত হবেন।

নওগাঁ সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর থেকে আবাদপুকুর হয়ে কালীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২২কিলোমিটার সড়ক স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে প্রথম পাকাকরনের কাজ করা হয়। এরপর রাস্তায় যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং এলাকার জনমানুষের জীবনমান উন্নয়নে এলজিইডি থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগে স্থানান্তর করা হয় সড়কটি। গত ২০১৮ইং সালের শেষের দিকে সড়কটি আরো প্রশস্তকরণ, টিকসই ও মজবুতকরণের জন্য নতুন করে পাকাকরণের টেন্ডার দেয়া হয়। এতে ২২কিলোমিটার সড়ক, ২৯টি সেতু-কালভার্ট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০৫কোটি টাকা। ওই বছরই সড়কের সমস্ত কার্পেটিং তুলে কোন রকমে রোলার দিয়ে ফেলে রাখে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। এছাড়া সেতু-কালভার্ট নির্মাণের কাজ অব্যাহত থাকে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ না করে বার বার সময় চেয়ে আবেদন করতে থাকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অতিরিক্ত সময়েও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ না করায় গত ২০২১সালের মে মাসে কাজের চুক্তিপত্র বাতিল করে ৪কোটি টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয় ওই ঠিকাদারের। এরপর নতুন করে আবারো টেন্ডার দেয়া হলে টেন্ডারের বিরুদ্ধে মামলা করেন আগের ঠিকাদার। ফলে আবারো কাজ আটকে যায়। এতে করে নতুন দীর্ঘ ভোগান্তিতে পরে এলাকার লাখ লাখ মানুষ। একপর্যায়ে সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় সাংসদের জোরালো তৎপড়তার কারণে ২০২১সালের নভেম্বর মাসে মামলা নিষ্পত্তি হলে আবারো টেন্ডারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত বছরের ১০আগষ্ট মাসে ২২কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের জন্য ৩৮কোটি ৩৪লক্ষ ২০হাজার ৫শত ৮১টাকা ৮৩ পয়সা ব্যয় ধরে টেন্ডার অন্তে নতুন কার্যাদেশ জারি করার মাধ্যমে নতুন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে এম এ জাহের লিমিটেড এই কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব পায়।

ঈদের আগেই উন্মুক্ত হচ্ছে রাণীনগর-আবাদপুকুর সড়কের পাঁকাকরণের কাজ

সড়কের পাকাকরণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে পথযাত্রী রাকিবুল ইসলাম, সাইম উদ্দীন, জুবায়ের হোসেনসহ আরো অনেক যাত্রীরা বলেন, গত ৬বছর ধরে যে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তা বর্ণনা করার মতো নয়। অবশেষে ভোগান্তি নামক সেই দু:খ্যের আগুনে শান্তির পানি দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে উন্নয়নের মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করতে চলেছেন। সড়ক যখন খারাপ ছিলো তখন রাণীনগর থেকে আবাদপুকুর মাত্র ১৪কিমি রাস্তা যেতে সময় লাগতো ১থেকে দেড় ঘন্টা যেখানে নতুন সড়ক হওয়ার কারণে সময় লাগছে মাত্র ১০-১৫মিনিট। তবে এলাকাবাসীদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সকলের প্রতি বিশেষ ভাবে অনুরোধ করবো যেন সড়কের কাজ যেভাবে কাগজে বলা হয়েছে ঠিক তেমনি ভাবে সম্পন্ন করা হয় যাতে আগামী ৫০বছরের মধ্যে এই সড়কের আর মেরামত কিংবা সংস্কার করার প্রয়োজন না হয়।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এমএ জাহের লিমিটেডের মুখপাত্র ও সাইড ইনচার্জ মো: সাইফুল ইসলাম বলেন দীর্ঘ দুর্ভোগ থেকে এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে মুক্ত করতে আমরা দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে কাজকে এগিয়ে নেয়ার চেস্টা করছি। আমরা আশাবাদি আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে উপজেলা বাসস্ট্যান্ড থেকে আবাদপুকুর পর্যন্ত ১৪কিমি রাস্তার পাঁকাকরণ কাজ শেষ করতে পারবো। আর ঈদের পর আবাদপুকুর থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত কাজ শুরু করা হবে। আমরা সড়ক বিভাগের সার্বিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সিডিউল মোতাবেক কাজ করছি। আমরা আশাবাদি আগামী জুনের মধ্যেই সড়কের সকল কাজ শেষ করে সড়ক বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।

নওগাঁ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হক রাসেল বলেন প্রতিনিয়তই সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা সড়কের পাঁকাকরণের কাজ মনিটরিং করছে। ইতিমধ্যে সড়কের প্রায় ৮০শতাংশ অংশের পাঁকাকরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং চলছে। নতুন চুক্তি অনুসারে চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসের মধ্যে সড়কের সকল কাজ সম্পন্ন করে আমাদের কাছে হস্তান্তরের কথা রয়েছে। আমি আশাবাদি নির্ধারিত সময়ের আগেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সড়কের সকল কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন এবং এলাকাবাসীরা দ্রুতই দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেয়ে যোগাযোগের নতুন ধারার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো: আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন ২০১৯সালের উপ-নির্বাচনে আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এই সড়কের পাঁকাকরনের কাজ আবার নতুন করে শুরু করার জন্য সড়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভাগীয় পর্যায়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দুয়ারে অনেকবার ধর্না দিয়েছি। অবশেষে সকল জটিলতা কাটিয়ে কাজ শুরু করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।


শর্টলিংকঃ