নাটোরে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালকের দৌরাত্ব


নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর:

বখাটে কিংবা ধনীর দুলালের বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ঠতি বয়সী কিশোর, যুবক সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা বেপরোয়া দ্রুত গতিতে বাইক চালিয়ে পথচারি সহ স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীদের আহত করছে। এদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশু সহ বৃদ্ধারাও।

এছাড়া অতিমাত্রায় স্টেডিয়াম পাড়ার শিশু পার্কে হর্ন বাজানোর কারনে শ্রোবন শক্তিতে দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যায় পড়ছে শিশুরা। এমন ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে
উত্তরণে প্রশাসনের কোন নজরদারী নেই বলে অভিযোগ ভুক্তভোগিদের। জানা যায়, এক শ্রেণির উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা মোটরবাইকে চড়েই বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সহ উপজেলার বিভিন্ন জন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় খুব দ্রুত গতিতে আক্রমনত্বক ভাবে বাইক চালিয়ে জনমনে আতংক সৃষ্টি করছে।

এমন বেপরোয়া গতিতে বাইক চালিয়ে নিজে যেমন দূর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে তেমনি পথচারিদেরও প্রতিনিয়িত করছে আহত। বাইক রেসের মত চালকদের হেলে দুলে
চালানোর দৃশ্য দেখে মানুষ হতবম্ভ হয়ে যান। স্থানীয়রা জানায়, নাটোর পৌরশহরের শংকর গোবিন্দ চৌধুরি স্টেডিয়াম সহ শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বেপরোয়া ভাবে মোটরসাইকেল চালায় একশ্রেণীর বখাটে যুবকরা।

এতে রাস্তায় চলাচলকারী নারী-শিশুরা সহ স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থীরা আহত হচ্ছে। বিশেষ করে শুক্রবার এলেই এই বখাটেদের উৎপাত বেশি দেখা যায়
স্টেডিয়াম পাড়ায়। সপ্তাহে একদিন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিনোদনের জন্য শিশু পার্কে নিয়ে যায়। কিন্তু কিছু বখাটে যুবক এবং রাইডার পার্টি বেপরোয়া ভাবে শিশু পার্ক এলাকায় মোটরসাইকেল চালায়।

এতে বেশি দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেল চালায়, অনেক সময় শিশুরা ভয়ে কেঁপে উঠে। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে ওই এলাকায়। সন্তানের মেধা বিকাশের জন্য নাটোর শিশু পার্কে মায়ের সাথে এসেছিলেন শিশু তাহা। সরকারী চাকুরি করার কারণে প্রতিদিন পার্কে নিয়ে আসা সম্ভব না হলেও
সপ্তাহে অন্তত একদিন তাহাকে পার্কে নিয়ে আসেন তার মা মাহমুদা খাতুন। কিন্তু মাঝে মধ্যেই বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় তাকে। বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারনে সন্তানকে ছেড়ে দিতে পারেন না তিনি।

মাহমুদা খাতুন বলেন, পড়া-লেখার চাপের কারনে শিশুরা অনেকটা গৃহবন্দি। বাচ্চাকে একটু বিনোদন দেওয়ার জন্য শুক্রবার করে পার্কে নিয়ে আসি। কিন্তু
এখানে কিছু বখাটে এমনভাবে মোটরসাইকেল চালায়, শিশুরা ভয়ে কেঁপে উঠে। একটু নিরাপদে শিশুকে পার্কে নিয়ে আসতে পারি না। বিষয়টি প্রশাসনের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।

আয়েশা খাতুন নামে এক শিশুর মা বলেন, বখাটেরা যখন রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল চালায়, এতবেশি হর্ন দেয়, মনে হয় কানের পর্দা ফেটে যাবে। আর হর্নের কারনে
বাচ্চা ভয় পায়। অন্তত শিশু পার্ক এলাকায় এই ধরনের মোটরসাইকেল চালানো নিষিদ্ধ করা হোক।

সূত্র জানায়, বেশিরভাগ বাইকাররা সমাজের সম্ভ্রান্ত পরিবারের বখাটে সন্তান হওয়ায় তাদের কেউ কিছুই বলার সাহস পায়না। এদের অধিকাংশরই নেই যান চলাচলের
ড্রাইভিং লাইসেন্স। এরা পুলিশ চেকপোষ্ট ফাঁকি দিয়ে এবং রাজনৈতিক বংশ পরিচয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কেউই এদের ব্যাপারে মুখ খুলে কিছু বলে না, প্রতিবাদও করেনা। আড়ালে তাদের ঘৃণা আর অভিসম্পাত করেই নীরব থাকে ভুক্তভোগী মানুষ।

 

সড়ক দূর্ঘটনায় প্রায় প্রতিদিনই উপজেলার কোথাও না কোথাও বাইকার দূর্ঘটনায় আহতের ঘটনা ঘটলেও থানা পুলিশ কেন এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছে
না বিষয়টি অনেকেরই বোধগম্য নয়। নাটোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল বলেন, বাপের টাকা পয়সা রয়েছে, তাই ছেলেকে যত দামী মোটর বাইক কিনে দেওয়া যায়, এমন ভাব কিছু অভিভাবকদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আপনি মোটরসাইকেল কিনে দিয়ে যে সন্তানের বিপদ ডেকে আনলেন, এই কথা একবারও কেউ ভাবে না। যার কারনে ওই সন্তান বন্ধুদের নিয়ে মহাসড়ক সহ শহেরর বিভিন্ন সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এরআগে শিশু পার্ক এলাকায় একাধিবার বাইক রাইডারদের নিষেধ করা হয়েছে। তারা কোন ভাবেই এই নিষেধাক্কা শুনে না। প্রশাসনকেও একাধিকবার বলেছি। বিশেষ করে শুক্রবার এই রাইডারদের বেপরোয়া প্রবনতা বেশি দেখা যায়। অন্তত শিশু পার্ক এলাকায় বাইক চালানো নিষেধাক্কা করা যায় কিনা, সে ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

নাটোর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর বিকর্ন দাস বলেন, বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝে মধ্যেই আমরা বেপরোয়া চালকদের মামলা দিচ্ছি, কিন্তু কোন
ভাবেই তা নিভৃত করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই চেকপোষ্ট বসিয়ে এ সকল বখাটে ও লাইসেন্স বিহীন মোটরসাইকেল আটক করে মামলা দেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ এ সকল হোন্ডা চালকরা চেকপোষ্ট ফাঁকি দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। পুলিশ এ সকল চালকদের বিরুদ্ধে আগের চাইতে আরো কঠোর অভিযান পরিচালনা করবো।

এদিকে, অতিমাত্রায় স্টেডিয়াম পাড়ার শিশু পার্কে হর্ন বাজানোর কারনে শ্রোবন শক্তিতে দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যায় পড়ছে শিশুরা। তাছাড়া পথচারীদেরও কানে দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব পড়ছে।

এবিষয়ে নাটোর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মাহাবুবুর রহমান বলেন, শব্দ দূষনের একটি মাত্রা রয়েছে। অতিমাত্রায় শব্দ দুষনে মানুষের শ্রোবন
শক্তি সহন ক্ষমতার বাহিরে চলে যায়। যার কারনে দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব পড়ে মানবশরীরে। এছাড়া শিশুদের বিষয়টি আরো ভয়াবাহ। তারা তো একজন পূর্ণ মানুষদের মত শব্দ দূষন সহন করতে পারে না। এজন্য যতটা কম শব্দ দুষন কমানো যায়, ততটাই ভাল।


শর্টলিংকঃ