নামেই ‘বিরতিহীন’ বনলতা!


হাসান আদিব:

রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটে ‘বিরতিহীন’ ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেস যাত্রাপথে ৮/১০ বার থেমে থেমে গন্তব্যে পৌঁছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। এই রেলরুটে আগে থেকে চালু থাকা অন্য তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন ১০ থেকে ১২টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে গন্তব্যে পৌঁছে থাকে। ফলে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে চালু করা ‘বনলতা’ এখন যাত্রীদের কাছে নামেই শুধু ‘বিরতিহীন’। এনিয়ে ক্ষোভ জানাচ্ছেন অনেকে।

জানা যায়, গত ২৫ এপ্রিল গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বনলতা ট্রেনের উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে রাজশাহীবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত দাবি পূরণ হয়। ব্যাপক উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনাও দেখা যায়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে যাত্রীদের প্রত্যাশা ছিল- ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচল করা অন্য আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর থেকে সেবার মানে ব্যতিক্রমী থাকবে বনলতা।

উদ্বোধনী পর্ব শেষে ওই দিন ট্রেনটি রাজশাহী থেকে বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট ছেড়ে যায়। বিরতিহীনভাবেই ট্রেনটি গন্তব্যে পৌঁছে ৪ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে। তবে ২৭ এপ্রিল থেকে বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরু করে বনলতা। প্রথমে সপ্তাহখানেক বিরতিহীনভাবে চলাচল করে ট্রেনটি। যা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন যাত্রীরাও।

তবে গেল সপ্তাহ থেকেই ট্রেনটি স্টেশন ছাড়াই বিভিন্ন স্থানে যাত্রাবিরতি করতে শুরু করে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। প্রথম দিকে ৪ থেকে ৫ বার থেমে গন্তব্যে পৌঁছালেও তা ক্রমে বাড়তে শুরু করে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

যাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার (১৮ মে) ও রোববার (১৯ মে) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দু’দিনই ট্রেনটি গন্তব্যে পৌঁছাতে ৮/৯ বার যাত্রাবিরতি করে। বিরতিহীন হওয়া সত্বেও অন্যান্য আন্তঃনগর ট্রেনকে ক্লিয়ারেন্স দিচ্ছে বনলতা। যা নিয়ে ক্ষোভের অন্তঃ নেই যাত্রীদের।

শনিবার (১৮ মে) বনলতা এক্সপ্রেসে রাজশাহী থেকে ঢাকায় যাত্রা করা চাঁপাইনবাবগঞ্জের তারেক রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সাইফ ও জাহিদুল ইসলাম জয় জানান, নির্ধারিত সময় সকাল ৭টায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে বনলতা ছেড়ে যায়। তবে সরদহ স্টেশন পার হওয়ার পরই ৫ থেকে ৭ মিনিট করে যাত্রাবিরতি শুরু করে ট্রেনটি।

উদ্বোধনের পর প্রথম রাজশাহী ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশে যায় বনলতা। ছবি: সংগৃহিত

তারা জানান, স্টেশন ছাড়াও মাঝপথে অন্য ট্রেনকে ক্লিয়ারেন্স বা পথ ছেড়ে দিতেও দেখা যায় বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেসকে। ফলে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৪৫ মিনিট দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছেন তারা। বিরতিহীন ট্রেনে তাদের প্রথম যাত্রায় প্রত্যাশিত সেবা পাননি বলে অভিযোগ করেন ওই তিনজনসহ আরও অনেক যাত্রী।

এদিকে, রোববার (১৯ মে) রাজশাহীতে থেকে ট্রেনে যাত্রা করা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম সকাল ৭টায় বনলতায় যাত্রা করেন। যাত্রা শেষে তিনি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বিরতিহীন বনলতায় ভয়বহ যাত্রার বিষয় নিয়ে স্ট্যাটাস দেন।

সেখানে অধ্যাপক আবুল কাশেম লেখেন, ‘…বিরতিহীন বনলতা চালু হওয়ার পর আজই প্রথম এভেইল করলাম। কিন্তু অভিজ্ঞতা অত্যন্ত ভয়াবহ। নামেই বিরতিহীন, কাজে লোকালকেও হার মানালো। অন্তত আজ। ধারণা ছিল- বিরতিহীনকে অন্য ট্রেন ক্লিয়ারেন্স দিবে। কিন্তু দেখলাম উল্টোটা। ট্রেনটি অবলীলাক্রমে ৮/৯ জায়গায় থামলো। ফলে অনলাইন রেকর্ডই স্বাক্ষ্য দিচ্ছে- বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছাতে বিরতিহীন বনলতা ১ ঘন্টা ২৯ মিনিট ডিলে। আমাদের (রাজশাহীবাসী) পেটে সম্ভবত বনলতা হজম হবে না।’

বনলতায় ভ্রমণের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেসবুকে রাবি অধ্যাপকের স্ট্যাটাস

রাবি অধ্যাপক আবুল কাশেমের মতো রোববার (১৯ মে) যাত্রা করা আরও তিন/চার জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাব্বির রহমান নামে এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, সিল্কসিটি, পদ্মা ও ধূমকেতু ট্রেন ১০/১২টা স্টেশনে থামে। এজন্য রাজশাহীবাসী বিরতিহীন একটি ট্রেন দাবি করে আসছিল। দাবি পূরণও করেছে প্রধানমন্ত্রী। তবে বিরতিহীন নয়, ট্রেনটি দফায় দফায় যাত্রা বিরতি করে তবেই গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম বলেন, হয়তো দু’একদিন কিছু সময় দেরি করতে পারে। তবে বনলতা এক্সপ্রেস অধিকাংশ দিনই সাড়ে চার ঘণ্টায় গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে। এ নিয়ে আমাদের কাছে কোনো যাত্রী এখনও অভিযোগ করেনি। কেউ যদি অভিযোগ করে, তবে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা হবে।

তিনি আরও বলেন, ঈশ্বরদী থেকে রাজশাহী রেলরুটে লাইন সংস্কারের কাজ চলছে। ফলে ওই রুটে নির্দিষ্ট অংশে (লাইনে) চাইলেই কোনো ট্রেন ক্লিয়ারেন্স দিয়ে বনলতাকে বের করে দিতে পারবে না। সেই পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। খুব দ্রুত লাইন সংস্কার কাজ শেষ হলে নির্দিষ্ট সময়েই বনলতা গন্তব্যে পৌঁছাবে বলে আশা করছেন তিনি।

অত্যাধুনিক বগি সম্বলিত বনলতা এক্সপ্রেসের ভেতরের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহিত

জানা যায়, বনলতার ১২টি বগিতে ৯২৭টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট আসন রাখা হয়েছে। বনলতা এক্সপ্রেস দেশের একমাত্র ট্রেন, যা পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবে না। এই ট্রেনে সংযুক্ত আছে উড়োজাহাজের মতো বায়োটয়লেট। এ কারণে মলমূত্র রেললাইনের ওপরে পড়বে না। রয়েছে রিক্লেনার চেয়ার ও স্লাইডিং ডোর। আছে ওয়াইফাই সুবিধা।

ট্রেনটি বাণিজ্যিকভাবে চালুর পর ১৫০ টাকার বাধ্যতামূলক খাবারের চার্জসহ শোভন চেয়ারে ৫২৫ টাকা এবং এসি চেয়ারে ৮৭৫ টাকা টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। তবে যাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে রেলপথ মন্ত্রণালয় বাধ্যতামূলক খাবার বাতিল করে টিকিটের মূল্য শোভন চেয়ারে ৩৭৫ টাকা এবং এসি চেয়ারে ৭২৫ টাকা করা হয়। যা নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করে যাত্রীরা।


শর্টলিংকঃ