নয়া আইনে লাভ চাষিদেরই: মোদী


ইউএনভি ডেস্ক:

সংসদে পাশ হওয়া বিতর্কিত তিনটি কৃষি বিলে রবিবার সিলমোহর দিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এর ফলে বিলগুলি আইনে পরিণত হল। এর জন্য সরকারি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। তার আগে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ বিভিন্ন রাজ্যের ‘বাছাই করা’ উদাহরণ তুলে ধরে বোঝানোর চেষ্টা করেন, সরাসরি বাজারে কৃষিপণ্য বিক্রির স্বাধীনতায় কতখানি লাভবান হতে পারেন কৃষক।

বিরোধীদের বক্তব্য, মিথ্যে ‘আশার গল্প’ না-শুনিয়ে বরং ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি)-এর নীচে ফসল কিনতে না-দেওয়ার বিষয়টি আইনেই বেঁধে দিক কেন্দ্র। বিল তিনটিতে সই না-করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন বিরোধীরা।

তা খারিজ হওয়ার পরেও বিরোধী দলগুলি তো বটেই, সদ্য এনডিএ থেকে বেরিয়ে আসা শরিক শিরোমণি অকালি দলও সরব রয়েছে ওই তিন আইনের বিরুদ্ধে। ভারত বন্‌ধ ডেকেছে কিসান সংগঠনগুলি। বিলের বিরোধিতায় হরিয়ানা, পঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের একাংশ উত্তাল। তার রেশ ছড়িয়েছে দেশের অন্যত্রও।

এই চাপের মুখে মোদী যে আজ তাঁর রেডিয়ো-অনুষ্ঠানে ওই বিলের প্রসঙ্গ তুলবেন, তা প্রায় প্রত্যাশিতই ছিল। যদিও সেই প্রসঙ্গে তিনি ঢুকেছেন ‘মন কি বাত’ মিনিট কুড়ি গড়ানোর পর। বলেছেন, “কৃষি, কৃষক এবং গ্রামই আত্মনির্ভর ভারতের ভিত।” দাবি করেছেন, চাষে ব্যাপক বদল আসছে। চাষিদের এবং বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের কাছ থেকেই তা জেনেছেন তিনি। এই পরিবর্তন ও সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে আইন পাল্টানো জরুরি ছিল।

বিরোধীদের প্রশ্ন, যে চাষিরা মধ্যস্বত্বভোগীদের সঙ্গেই দর কষাকষিতে পেরে ওঠেন না, কর্পোরেট দৈত্যদের সঙ্গে দামের সওদা কী ভাবে করবেন? অনেকের আশঙ্কা, নতুন আইনে সুবিধা হবে শুধু বড় চাষি এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলির। জলের দরে ফসল বেচতে বাধ্য হয়ে চরম দুর্দশায় পড়বেন ছোট-মাঝারি চাষিরা। জমি থাকতেও কার্যত ওই সব সংস্থার কম মজুরির কর্মীতে পরিণত হবেন তাঁরা।

প্রধানমন্ত্রীর দাবি, এই আশঙ্কা অমূলক। মোদী শুনিয়েছেন, এক সময়ে মান্ডিতে ফল-আনাজ বেচতে গিয়ে প্রবল সমস্যার মুখে পড়তেন হরিয়ানার সোনীপতের কনওয়ার চৌহান। সরাসরি বাজারে বিক্রির পথ খুলে যাওয়ায় বিভিন্ন হোটেল ও রিটেল চেনকে সুইট কর্ন আর বেবি কর্ন বিক্রি করে মোটা টাকা আয় করেন তিনি। তুলেছেন মহারাষ্ট্রের চাষিদের প্রসঙ্গ।

জানিয়েছেন, আনাজ ও ফল এপিএমসি আইনের আওতার বাইরে আসার পরে নিজেরাই সাপ্তাহিক বাজার বসিয়ে পণ্য ভাল দরে বিক্রি করছেন ৭০টি গ্রামের প্রায় সাড়ে চার হাজার চাষি। লখনউয়ের কৃষি সমবায় ‘ইরাদা’, গুজরাতের কৃষক ইসমাইল ভাই, তামিলনাড়ুর কলা চাষিদের উদাহরণও উঠে এসেছে মোদীর মুখে। শুনিয়েছেন মণিপুরের বিজয় শান্তির পদ্মের বৃন্ত থেকে সুতো তৈরির সংস্থা গড়ার কথাও।

বিরোধীদের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী যদি চাষিদের আয় বাড়াতে এতই তৎপর, তবে এমএসপি-র কমে কৃষিপণ্য না-কেনার আইনি ব্যবস্থা করতে নারাজ কেন? সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদবের বক্তব্য, হয় সরকার এমএসপি-র কমে কৃষিপণ্য কেনাকে বেআইনি ঘোষণা করুক, নয়তো এই নিশ্চয়তা দিক যে, তার থেকে কমে বেচতে হলে, সেই ‘ক্ষতি’ সরকার পুষিয়ে দেবে। নইলে শুধু ‘বাছাই করা সাফল্যের গল্পে’ কৃষকদের ক্ষোভের আগুন নিভবে না।


শর্টলিংকঃ