পরীক্ষায় নকলে বাধা দেয়ায় শিক্ষককে পেটালো ছাত্রলীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা:
পরীক্ষার হলে নকলের সুযোগ না দেয়ায় পাবনার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজে বাংলা বিভাগের প্রভাষক মাসুদুর রহমানকে মারধর করেছে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা।


গত ১২ মে এ ঘটনা ঘটলেও কলেজের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিষয়টি জানাজানি হয় মঙ্গলবার রাতে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কলেজ গেট থেকে মোটরসাইকেলে করে বের হওয়ার সময় কয়েকজন যুবক এসে অতর্কিত হামলা চালায় শিক্ষক মাসুদুর রাহমানের ওপর।

তাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি,লাথি ও থাপ্পড় মারা হয়। ফেলে দেয়া হয় মাথার পাগড়িও। একপর্যায়ে তিনি বেরিয়ে যেতে চাইলে পেছন থেকে এসে তাকে লাথি মারে এক যুবক। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় একজন শিক্ষকের এ ধরনের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন অনেকে।

শিক্ষক মাসুদুর রহমান বলেন, ৬ মে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী দেদারছে নকল করছে। এজন্য আমি দুই ছাত্রীর খাতা কেড়ে নিই। এরপর থেকে ওই দুই ছাত্রীর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ছাত্র আমার নামে নানা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আসছে। মূলত নকল ধরার জন্যই ক্ষুব্ধ হয় তারা।

১২ মে দুপুরে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার সময় কলেজ গেটের সামনে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী আমাকে বলে এই দাঁড়া। আমি দাঁড়ানোর সাথে সাথে আমার ওপর হামলা চালায়। আমাকে কিল-ঘুষি মারে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় আমার মাথার পাগড়ি খুলে পড়ে।

এছাড়া পেছন থেকে সজোরে লাথি মারে আমাকে। তারা আমাকে বলে তুই আর কলেজে আসবি না, কলেজে আসলে তোর হাত কেটে নেব। বাংলা বিভাগে আগুন ধরিয়ে দেব। এরপর আমার সিনিয়র শিক্ষকরা এগিয়ে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন এবং আমাকে বাড়ি চলে যেতে বলেন। এরপর থেকে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমাকে কিছুদিনের জন্য কলেজে যেতে মানা করেছেন শিক্ষকরা।

সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শামসুদ্দিন আহমেদ জন্নুন বলেন, শিক্ষক মাসুদুর রহমান কলেজের এক ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। সে প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই শিক্ষক নানাভাবে ওই ছাত্রীকে হয়রানি করে আসছেন। গত ১২ মে যারা হামলা করেছে তারা ছাত্রলীগের কেউ নয়, তারা বিক্ষুব্ধ। আমি নিজে এসে ক্ষুদ্ধ ছাত্রদের নিবৃত্ত করেছি এবং ধমক দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে গেছি।

সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের অধ্যক্ষ এম এ কুদ্দুস বলেন, এ ঘটনায় সহযোগী অধ্যাপক ড. কৃষ্ণেন্দু কুমার পালকে প্রধান করে এবং ড. ইসমত আরা ও সহকারী অধ্যাপক হারুনুর রশিদসহ কলেজের কর্মচারী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিয়ে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা সদর থানা পুলিশের ওসি ওবায়দুল হক বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য প্রভাষক মাসুদুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর ৩৬তম বিসিএসের মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দেন।


শর্টলিংকঃ