পাবনায় বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সফল তিন বন্ধু


কলিট তালুকদার, পাবনা:

পাশাপাশি তিনটি ১৩ ফুট প্রস্ত ও সাড়ে তিন ফুট গভীর গোলাকার পানি ভর্তি হাউজ। প্রতিটি হাউজে প্রায় ১০ হাজার লিটার পানি। এই হাউজে করা হচ্ছে মাছ চাষ। ছাড়া হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন সাইজের মাছ। প্রতিটি হাউজে একাধিক পাইপের মাধ্যমে করা হচ্ছে অক্সিজেন সরবরাহ। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মাছ চাষের এই পদ্ধতির নাম বায়োফ্লক।


স্বপ্ন পূরণের নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পাবনা সদর উপজেলার কাশীপুর এলাকার বিল্পব, কবির ও মাসুদ কঠোর পরিশ্রম,ধৈর্য সীমিত জায়গা ও স্বল্প খরচে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন তারা। শখের বশে শুরু করে লাভবান হওয়ায় তিন বন্ধুর এ শখ পরিণত হয় পেশায়। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সম্পূর্ণ নতুন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে তারা অন্যদের কাছে হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয়।

উদ্যোক্তা বিল্পব হোসেন জানান, বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া মাছের অব্যবহৃত খাদ্য, মল-মূত্র থেকে নিঃসৃত অ্যামোনিয়াকে ব্যবহার করে অণুজীব প্রোটিনে রূপান্তর করে। এর ফলে বাড়তি খাবার খরচ কমে, পাশাপাশি খাদ্য অপচয় রোধ হয়। যেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাছ চাষে ৬০ ভাগ খরচই হয় খাবারের পেছনে। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোবায়োটিক সরবরাহই যথেষ্ট। এই পদ্ধতিতে ক্ষতিকর কোন অণুজীব বাসা বাধতে পারে না। ফলে এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদনকৃত মাছ মানুষের শরীরে যথাযথ পুষ্টি যোগায়। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে মাছগুলো। ফলে অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে বায়োফ্লক পদ্ধতি মাছ চাষে সময় লাগে কম পাশাপাশি খাদ্য কম লাগায় লাভ হয় তুলনামূলক বেশি।


উদ্যোক্তা কবির আহমেদ জানান, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে ঝুঁকি কম ও অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। মাছের পোণা ও পরিচর্যাসহ তিন মাসে প্রতি হাউজে খরচ হয় ২৫ থেকে সর্বচ্চ ৩০ হাজার টাকা, একই সময়ে মাছ বিক্রি করা যায় প্রায় ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। চাকরির পিছে না ছুটে শিক্ষিত বেকার যুবকদের বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের আহ্বান জানান তিনি।

উদ্যোগতা মাসুদ জানান, জনপ্রতি মাত্র ৬০ হাজার টাকা করে দিয়ে তিন বন্ধু মিলে তিনটি হাউজে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরুকরি। সব মিলিয়ে আমাদের খরচ হয় প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরুর তিন মাস পর মাছ বিক্রি করে লাভ হয় ৭০ হাজার টাকা। ফলে শখের বসে শুরু করলেও লাভবান হওয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরিকল্পনা করি। পরবর্তীতে আরো ৬ টি হাউজ স্থাপন করা হয়েছে।

এরই মধ্যে তিন বন্ধুর বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ সারা ফেলেছে বিনিয়োগ প্রত্যাশী মানুষের মাঝে। মাছ চাষের অভিনব এ পদ্ধতি দেখে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই।


বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ দেখতে আসা যুবক আহমেদ বলেন, ইউটিউবে দেখে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে আগ্রহ তৈরি হয়। পরিকল্পনা করি এমন একটি মাছের খামার করার। পাবনার কাশীপুরে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ হচ্ছে জানতে পেরে দেখতে এসেছি। এতো অল্প জায়গায় বিপুল পরিমাণ মাছ চাষের এই পদ্ধতি দেখে অবাক হয়েছি। আসা করছি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে আমি সফল হতে পারবো।

পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী ব্যক্তিদের সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হবে। এরই মধ্যে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সরকারি সহযোগিতা, সঠিক নীতিমালা ও সহজ শর্তে স্বল্প পরিমাণে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষিত যুবকেরা বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আরো আগ্রহী হবে। বেকার যুবকেরা মুক্তি পাবে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে। নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অবদান রাখবে জাতীয় অর্থনীতিতে। এই করোনাকালে মৎস্য চাষ, কৃষিসহ সকল উৎপাদনমুখী ক্ষুদ্রশিল্পে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আগামীর বাংলাদেশকে পথ দেখাবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।


শর্টলিংকঃ