প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজ কন্যাকে হত্যা: দেড় যুগ পরে সত্য উদঘাটন


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার নতুন মোড় খুঁজে পেয়েছে পিবিআই। দুপুরে রাজশাহী পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ সাংবাদিকদের জানান, ১৯ বছর আগে করা একটি মামলায় নতুন করে তদন্তে দেখা গেছে যিনি মামলার বাদী, তিনিই মামলার আসামী এবং নিজ সন্তান হত্যাকারী।


ঘটনার শুরু ১০ জুন ২০০৪ সালে। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চর লক্ষীনগর এলাকায় ১৩ বছরের কিশোরী রেবেকা খাতুন হত্যাকান্ড দিয়ে। বাঘা থানায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিপক্ষের সাথে জমিজমা নিয়ে চলা বিরোধের জেরে আকসেদ আলী সিকদারের মেয়ে রেবেকা খাতুনকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। সেদিন রেবেকা খাতুন ছাড়াও হামলায় আহত হন আকসেদ আলী সিকদারের দুই স্ত্রী। এসময় তিনি বাসা থেকে পালিয়ে পাশের ফসলী জমিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে প্রতিপক্ষের ২০ জনকে আসামী করে মামলা করেন আকসেদ আলী।

আপাত দৃষ্টিতে এই এজাহার দিয়ে শুরুতে স্থানীয় থানা পুলিশ ও পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ দীর্ঘ দিন মামলাটি তদন্ত শেষ করেন। এবং জন নিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ চার্জশিট দাখিল করে ৭ এপ্রিল ২০২২ সালে। এতে ২০ জনকে আসামীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বিচার শেষে আদালতের কাছে এটি প্রতীয়মান হয় যে মামলায় জড়িত ২০ আসামী এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নয়। প্রকৃত আসামী খুঁজে বের করা এবং অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি পিবিআই রাজশাহীকে তদন্তের জন্য দেয়া হয় ১৬ মে ২০২২ সালে।

রাজশাহী পিবিআই গত প্রায় ১ বছর তদন্ত শেষে জানতে পারে, প্রকৃতপক্ষে এ মামলায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মামলার বাদি আকসেদ আলী সিকদার নিজেই তার কন্যা সন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় তার দুই স্ত্রী বাধা দিতে গেলে তাদেরও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপ দেন আকসেদ আলী। দীর্ঘ দিন পর গত ৯ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে আকসেদ আলীর স্ত্রীরা ভায়লা বেওয়া (৬৫) এবং আফিয়া বেওয়া (৬০) স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হয়ে ১৬৪ ধারায় সে কথা স্বীকার করেছেন। যদিও পিবিআই এর সাম্প্রতিক তদন্তে বেরিয়ে আসা ফলাফলে একমাত্র আসামী মামলার বাদী আকসেদ আলী সিকদার মারা গেছেন ২০১৯ সালে।

মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসে একই গ্রামের প্রতিপক্ষ মোল্লা বংশকে ফাঁসাতে বাদী নিজেই তার কণ্যাকে হত্যা করে এই বংশের ২০ জনের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। পিবিআই জানায়, এ মামলা পুন তদন্ত করতে গিয়ে তারা মামলা সম্পৃক্ত কোন নথি বা ডকেট কোথাও খুঁজে পায়নি।

বাদি আকসেদ আলী সিকদার এলাকার প্রভাবশালী কৃষক হওয়ায় যে কোন ভাবে তিনি তা আদালত থেকে গায়েব করে দেন। এছাড়াও বেঁচে থাকা পর্যন্ত তিনি নানা ভাবে তার স্ত্রীদের ভয় ভীতি দেখিয়ে ঘটনার আসল তথ্য বেরিয়ে আসা ঠেকান।

আকসেদ আলীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রীরা এ মামলার আসল ঘটনা ফাঁস করেন। খুব দ্রুতই এ মামলার সমাধানের জন্য প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দেয়া হবে বলেও জানান পিবিআই কর্মকর্তা আবুল কালাম আযাদ।

ভিডিও সংবাদ


শর্টলিংকঃ