বাংলাদেশের পেঁয়াজে ক্ষতিকর মাত্রায় সিসা


ইউএনভি ডেস্ক:

বাংলাদেশে উৎপাদিত পেঁয়াজে ক্ষতিকর মাত্রায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে কৃষি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ। সেখানকার হেলথ অ্যান্ড মেন্টাল হাইজিন বিভাগের এক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশ থেকে কেনা পেঁয়াজে ক্ষতিকর মাত্রায় সিসার উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশের পেঁয়াজে ক্ষতিকর মাত্রায় সিসা

একইভাবে বাংলাদেশ থেকে রফতানি করা শিম পরীক্ষা করে তাতে ফেনপ্রোপেথিন, অমিথোয়েট, ডাইমোথোয়েটের মতো বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি পেয়েছে যুক্তরাজ্য। বিষয়টি যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনকে লিখিতভাবে জানিয়েছে লন্ডনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে রফতানি করা গুঁড়া মরিচে অননুমোদিত মাত্রায় ইথিয়ন ও ট্রিয়াজোপস কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়ার কথা সরকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন (ইসি)।এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বাংলাদেশী গুঁড়া হলুদে মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতির কথা উঠে আসে। এ তথ্য জানার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গুঁড়া হলুদ রফতানি বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পেঁয়াজ রফতানি করে না। বরং অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর প্রায় সাত-আট লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করে, যার সিংহভাগই আসে ভারত থেকে। তবে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজে এ ধরনের সিসার উপস্থিতি আছে কিনা তা এখনো পরীক্ষা করে দেখা হয়নি বলে জানা গেছে। একইভাবে শিম, গুঁড়া মরিচ ও পেঁয়াজ উল্লেখযোগ্য হারে রফতানি না হলেও এসব পণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতির তথ্য দেশের নাগরিকদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির অশনিসংকেত। খাবারে ভারী ধাতু ও ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি মানবদেহে ক্যান্সার, কিডনির রোগসহ নানা ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধির কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে বারবার জানিয়ে এসেছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের নেতৃত্বে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বাংলাদেশী কৃষিপণ্যে এসব বিষাক্ত ধাতু ও রাসায়নিকের উপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভার কার্যবিবরণী সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৈঠকে চাল, শাকসবজি, ডিম, মুরগিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যে ভারী ধাতু পাওয়ার তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) প্রতিনিধি।মূলত আমদানি করা নিম্নমানের কীটনাশক থেকে এ ধরনের ক্ষতিকর উপাদান বিভিন্ন কৃষিপণ্যে ছড়িয়ে পড়ছে বলে বৈঠকে বিএফএসএর পক্ষ থেকে জানানো হয়।

বিএফএসএর প্রতিনিধি জানান, পরিস্থিতি মোটেই সন্তোষজনক নয়। যেভাবে চাল, শাকসবজি, ডিম, মুরগিসহ বিভিন্ন পণ্যে কীটনাশক, ক্রোমিয়াম ও ক্যাডমিয়াম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এখনই ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। যদি সার আমদানির সময় ভালোভাবে পরীক্ষা করা হয় এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সার খালাস করা হয়, তাহলে তাতে ভারী ধাতু থাকার আশঙ্কা থাকে না। তবে শিল্প এলাকায় ব্যাপক পরিমাণে শিল্প বর্জ্যের উপস্থিতির কারণে ওইসব এলাকার কৃষিপণ্যে বেশি ভারী ধাতু পাওয়া যাচ্ছে।

বৈঠকে সংস্থাটির পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, আমদানি করা কীটনাশকে সিসা, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতু রয়েছে। বিভিন্ন কৃষিপণ্যে তার উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। বাজার থেকে সংগৃহীত ৪৭ ব্র্যান্ডের কীটনাশকের নমুনা পরীক্ষায় এ ভয়াবহ চিত্র পেয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থাকায় আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্দরে পরীক্ষা ছাড়া কোনো কীটনাশকের চালান খালাস না করতে এনবিআরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে থাকা কীটনাশক তুলে নিতেও কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কৃষিপণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি দূর করতে সভায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নিরাপদ সারের মাত্রা নিশ্চিত করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া মাটি, পানি, জৈব-অজৈব পদার্থ, ভারী ধাতু ইত্যাদি নিয়ে পরীক্ষণ তৃণমূল পর্যায়ে সহজ করতে মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটকে চিঠি দেয়া হয়েছে। শিল্প এলাকার কৃষিকে ভারী ধাতুমুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতি অনুসরণ করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে নিম্নমানের সারের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির পাহারা বাড়াতে সীমান্তবর্তী জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ভারী ধাতুমুক্ত নিরাপদ সার আমদানি নিশ্চিত করা এবং কোথাও যাতে কোনোভাবেই ভারী ধাতু মেশানো না হয়, তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।


শর্টলিংকঃ