বাংলাদেশ-ভারত নৌ-রুট চালু নিয়ে জটিলতা


ইউএনভি ডেস্ক:

ভারতের সঙ্গে পণ্য আনা-নেওয়া করতে রাজশাহীতে একটি নৌ প্রটোকল রুট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। গেল অক্টোবরে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক নির্ধারিত এলাকা পরিদর্শন করে বলেছিলেন- আগামী এক মাসের মধ্যেই তারা পরীক্ষামূলকভাবে পণ্য আনা-নেওয়া শুরু করবেন

এরপর একমাস পার হয়েছে। এখন সেই নৌ-রুট চালু নিয়ে নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ বলছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ থেকে পদ্মা নদী হয়ে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া পর্যন্ত নৌ প্রটোকল রুট হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি কাস্টম অফিস করে দিলেই পণ্য আনা-নেওয়া শুরু হবে। কিন্তু এনবিআর কাস্টম অফিস করেনি।

এনবিআর বলছে, প্রটোকল রুট নয়, হতে হবে নৌবন্দর। আর তারা অফিসের স্থাপনাও গড়ে তুলতে পারবেন না। অফিসের স্থাপনা বিআইডব্লিউটিএকেই করতে হবে। শুধু তাদের কর্মকর্তারা গিয়ে বসবেন। আর বিআইডব্লিউটিএ কাস্টমেরই অফিস স্থাপনের অপেক্ষা করছে। ফলে নৌ-রুট স্থাপনের আপাতত কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। কবে এই জটিলতা কাটবে সেটিও স্পষ্ট নয়।

বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা একটি নৌ প্রটোকল রুট চালু করতে চাই। যেভাবে স্থলবন্দরের ট্রাক এ দেশ থেকে ওই দেশে যায় বা ওই দেশ থেকে এই দেশে আসে সেভাবেই নৌপথে জলযান পণ্য আনা-নেওয়া করবে। আমরা প্রস্তুত। ভারতও প্রস্তত। কিন্তু এনবিআর একটি কাস্টম অফিস চালু না করার কারণে কাজের আর অগ্রগতি হচ্ছে না। তবে আশা করি দ্রুতই সেটি হয়ে যাবে।

জানতে চাইলে এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (শুল্ক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও চুক্তি) আক্তার হোসেন বলেন, আগে গোদাগাড়ীতে আমাদের একটা কাস্টম অফিস ছিল। এখন বন্ধ। লোকবলও নেই। নতুন অফিস সেটআপ করা মুখের কথা নয়। আর নৌ-প্রটোকল রুটে আমরা কাস্টম অফিস চালু করব না। বিআইডব্লিউটিএ সেটিকে ‘নৌ-বন্দর’ হিসেবে ঘোষণা দেবে, তারা নিজেরা অফিস স্থাপনা গড়ে তুলবে তাহলে আমাদের কর্মকর্তারা গিয়ে বসবেন। সেটাও সময়সাপেক্ষ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নৌ-বন্দর করছি না। সেটা নৌ প্রটোকল রুটই হবে। জটিলতাগুলোও কেটে যাবে। তবে অফিস স্থাপনার বিষয়ে এনবিআর কর্মকর্তার মন্তব্যের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র এই কর্মকর্তা কোন মন্তব্য করেননি।

রাজশাহী থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটারের একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও তা কার্যকর নেই। তাই নতুন পথটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত পণ্য চলাচলের উদ্যোগ নেয় বিআইডব্লিউটিএ। এই পথের দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার। অনেকটা আড়াআড়িভাবে পদ্মা নদী পাড়ি দেবে পণ্যবাহী নৌযান। ভারত-বাংলাদেশ পদ্মা নদীর এই নৌরুট চালু হলে ভারতের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য যোগাযোগ আরও সহজ হবে। কেননা নৌপথে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহন করা যায়। শুষ্ক মৌসুমে প্রতি নৌযানে ২০০-৩০০ টন পণ্য পরিবহন করা যাবে। আর বর্ষা মৌসুমে নাব্যতা বেশি থাকলেও প্রমত্তা পদ্মায় স্রোত বেশি থাকে। তখন অবশ্য পণ্য পরিবহন কিছুটা কঠিন হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় বড় প্রকল্পে মুর্শিদাবাদের ‘পাকুর পাথর’ ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি বেশ উন্নতমানের পাথর। এখন সড়কপথে পাথর আমদানি করতে খরচ বেশি পড়ছে। গোদাগাড়ী-মায়া নৌ-রুটটি মূলত পাকুর পাথর আমদানিতে বেশি ব্যবহার হবে। নৌ-রুট চালুর জন্য বিআইডব্লিউটিএ কাস্টম অফিস স্থাপনের জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করলেও তা হচ্ছে না। শুধু এ কারণেই নৌ-রুট চালু করতে বিলম্ব হচ্ছে।


শর্টলিংকঃ