খালেদা জিয়ার ভ্যানগার্ড থেকে বিএনএম নেতা: রাজশাহী-৩ এ চমক মন্টু


নিজস্ব প্রতিবেদক: 

‘আমরা তাকে আদর করে ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) ছেলে’ বলে ডাকতাম। নব্বইয়ের আন্দোলনে তিনি এত বেশি অবদান রেখেছিলেন যে ম্যাডাম নিজে তাকে নামেই চিনতেন। তিনি তখন ছাত্রদলের নেতা। এরপর দীর্ঘ সময় ম্যাডামের বাসায় গিয়ে সরাসরি দেখা করতে পারতেন মন্টু।’ মতিউর রহমান মন্টুকে নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী বিএনপির এক নেতা।

বিএনএম

সে সময় মন্টু রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরপর তিনি দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যও হন।বিএনপি’র ওই নেতা আরও বলেন, নব্বইয়ের আন্দোলনের সময় এবং তার পরেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কয়েকবার রাজশাহীতে মতিউর রহমান মন্টুর বাসায় আসেন।

‘এখন যে মন্টু বিএনপি ছেড়ে বিএনএম নামক দলে যোগ দিয়েছে। আর কি বলব? কে জানে, এটা হয়ত শুরু। ভবিষ্যতে আরও কত কিছু হবে কে জানে,’ ইউনিভার্সাল নিউজকে হতাশার সুরে বলছিলেন বিএনপির ওই নেতা।

এক সময়ের জনপ্রিয় ছাত্রনেতা মতিউর রহমান মন্টু সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) নামে একটি নতুন দলে যোগ দেন এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হন।

এবার তিনি ওই দলের হয়ে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। বিএনএমের ‘রাজশাহী মিশনে’ নামটি বিস্ময়কর হলেও, নতুন দলের নেতারা দাবি করছেন, শিগগিরই আরও কয়েকজন প্রার্থী হতে পারে, যা আরও বেশি চমকপ্রদ হবে।

জানতে চাইলে বিএনএম এর সদস্য সচিব মেজর (অব.) মোঃ হানিফ বলেন, বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ভাই মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনএম এ যোগদানের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। দলে যোগ দিলে তিনি
রাজশাহী-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।

মতিউর রহমান মন্টু বিএনএম’র হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন এমন তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “এ বিএনপি আর ওই বিএনপি সম্পূর্ণ আলাদা। এই দলটি শহীদ জিয়ার বিএনপি, এমনকি খালেদা জিয়ার বিএনপির আদর্শ থেকে দূরে সরে গেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এখন আর দলীয় সিদ্ধান্ত হয় না। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতামতের মূল্যায়ন করা হয় না। তাড়াহুড়ো করে এবং জোরপূর্বক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়। কিছু নেতা ভুল রাজনীতি করে দলকে বিপদে ফেলেছেন। এভাবে রাজনীতি করা সম্ভব নয়। সেজন্য আমরা একই আদর্শ নিয়ে নতুন কিছু করতে এগিয়ে এসেছি।”

বিএনএম’ র একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি ছেড়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর ৬টি আসন থেকে নেতারা অংশ নিচ্ছেন। সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এরই মধ্যে নতুন দলে যোগ দিয়েছেন বিএনপির বর্তমান ও সাবেক নেতারা। কেউ কেউ বিএনএম থেকে মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছেন। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে অন্যরাও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিএনএম সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী-১ আসনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি নেত্রী তাসকিয়া বিনতে নাজিব বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ভাই অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শরীফ উদ্দিন একই দল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বিএনএম এ যোগদানের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। কয়েকদিন আগে শরীফ উদ্দিন বিএনএমের সদস্যপদ ফরম পূরণ করেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো দলে যোগ দেননি তিনি। দু-একদিনের মধ্যে তিনি যোগ দেবেন বলে দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিএনএম’র গোদাগাড়ী উপজেলা সভাপতি সামছুজ্জোহা বাবু বলেন, ‘আমিও নির্বাচনে অংশ নিতাম। কিন্তু এ আসন থেকে বিএনপির একজন বড় নেতা আমাদের দলে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এই কারণে, আমি তাকে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছি।”

এ ছাড়া রাজশাহী-২ (সিটি) আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন ব্যবসায়ী আবদুল বারী, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন শহিদুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম। রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে এবং রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন রায়হান আলী ও আব্দুস সামাদ।

বিএনএম রাজশাহী জেলা সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আমাদের দল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ইতোমধ্যে বিএনপির অনেক নেতা যোগ দিয়েছেন। আরও অনেকে যোগদানের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

এদিকে মতিউর রহমান মন্টুর এই দল পরিবর্তন নিয়ে স্থানীয় বিএনপিতে চলছে তুমুল আলোচনা। বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মতিউর রহমান মন্টু বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। একই সঙ্গে ছাত্র রাজনীতি করেছেন এমন অনেক বিএনপি নেতার সঙ্গে তাদের নিজস্ব বলয় রয়েছে। রাজশাহী ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় বিএনপি থেকে মন্টু বলয়ের যারা মনোনয়ন পাননি তারাও মতিউর রহমান মন্টুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিএনএম এ যোগ দিতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় বিএনপি।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিউর রহমান মন্টুর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন দাবি করেন, যোগদানের আগে মন্টুর সঙ্গে তাদের কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, আমরা শুধু শুনেছি তিনি নতুন দলে যোগ দিয়েছেন এবং আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন। মামুন বলেন, “যেহেতু তিনি দলের সাথে অসৎ আচরণ করেছেন, রাজশাহীর জনগণ তাকে ক্ষমা করবে না।”

আরও পড়তে পারেন রাজশাহী রংপুরে আ.লীগের বেশিরভাগ এমপিই মনোনয়ন পাচ্ছেন


শর্টলিংকঃ