ভোলা সাইক্লোন: ভয়াল সেই স্মৃতি আজও কাঁদায়


ইউএনভি ডেস্ক:

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ভোলা সাইক্লোনে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূল। সেদিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। মধ্যরাতে ৩-১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মারা যায়। ভয়াল সে দিনটির আজ ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। আজ ১২ নভেম্বর, আজও সেই বৃহস্পতিবার। প্রতি বছর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকারীরা এখনো দিনটিতে আঁতকে উঠেন। ভয়াল সেই স্মৃতি মনে করে কাঁদেন।

স্বজনহারাদের তথ্যমতে, ১৯৭০ সালে উপকূলীয় চরাঞ্চলে পর্যাপ্ত রেডিও ছিল না। তবে ঘটনার দিন রেডিওতে উপকূলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু কেউ তা জানতে পারেনি। যে কয়েকজনের কাছে রেডিও ছিল তারা শুনতে পেরেও বিশ্বাস করেনি। আবার ওইদিন সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছিল। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় হালকা বাতাস। গভীর রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে পড়েছিল তখনই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। ঝড় আর পাহাড়সম স্রোতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূল।

সূত্র জানায়, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর দিবাগত রাতে ভোলা জেলায় ২৪০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে এসেছিল ভোলা সাইক্লোন। সেদিন লক্ষ্মীপুরের মেঘনা ও ভুলুয়া নদী উপকূলে ঘূর্ণিঝড়টি ১৮৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হেনেছে। প্রায় ১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে হাজার হাজার মানুষ ও গবাধি পশু। সেদিনের জলোচ্ছ্বাসে মেঘনা উপকূলীয় এ অঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মারা যায়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী সাইক্লোনটিতে ৫ লাখ মানুষ মারা যায়। তবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে ওইদিন প্রায় ১০ লাখ মানুষ মারা গিয়েছে।

জানা গেছে, দেশের ইতিহাসে ভোলা সাইক্লোনটি সবচেয়ে বড় প্রলয়ংকারী ঘটনা। ওইদিন লক্ষ্মীপুরের রামগতির মেঘনা উপকূলীয় চরআবদুল্লাহ, কমলনগরের ভুলুয়ানদী উপকূলীয় চরকাদিরাসহ নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় এটি হানা দেয়। দিনের আলোয় চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ দেখা যায়। লাশের গন্ধে মানুষ কাছে যেতে পারেনি। ৩-১০ ফুটের জলোচ্ছ্বাসের কারণে মাটি দেয়া যায়নি মৃত মানুষগুলোকে। প্রায় ২৩ দিন লেগেছে রামগতি-কমলনগরে মারা যাওয়া মানুষের লাশ দাফন করতে। তাও একই গর্তে ১৫-২০ জনকে কবর দেওয়া হয়েছিল। লাশ পচে খসে খসে পড়েছে মাংস। উদ্ধারকারীরা অনেক কষ্টে লাশগুলো কবর দিয়েছে।

এদিকে দিনটিকে উপকূল দিবস দাবির লক্ষ্যে উপকূল বন্ধু নামে পরিচিত সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৭ সাল থেকে উপকূলের অর্ধশতাধিক স্থানে উপকূল দিবস পালন করা হচ্ছে। তবে এটি সরকারিভাবে পালন করার দাবি জানাচ্ছেন ভোলা সাইক্লোনের প্রত্যক্ষদর্শীরা। লক্ষ্মীপুরের কমলনগর প্রেসক্লাব ও সদর উপজেলায় উপকূল দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।


শর্টলিংকঃ