ইউএনভি ডেস্ক:
সোমবার দিনভর মদ নিয়ে বাড়াবাড়ি দেখলো ভারত। গত ৪০ দিন সমস্ত দোকান বন্ধ ছিল। সোমবার তা খুলতেই সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করে রাস্তায় নামলেন মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিলেন মদের জন্য। সঙ্গে বিশৃঙ্খলা।
লোকের মদ-পিপাসা যে কোন জায়গায় পৌঁছেছে তা ভালোভাবেই টের পাওয়া গেল। লকডাউনের কড়াকড়িঅনেকটা কমিয়ে দিয়ে সোমবার থেকে মদের দোকান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তারপরই দেখা গেল এতদিন ধরে মদ খেতে না পারা লোকেরা সামাজিক দূরত্ব, করোনার হওয়া ভয় কোনও কিছুরই তোয়াক্কা না করে বিশাল লাইন লাগিয়েছেন মদের দোকানের সামনে। দেশের কোনও কোনও অঞ্চলে ভিড় সামলাতে লাঠি চালাতে হয়েছে পুলিশকে।
দিল্লিতেও মদের দোকানের সামনে ছিলো ঠাসাঠাসি ভিড় এবং বিশাল লাইন। কোনও কোনও জায়গায় দোকানের তিনটি কাউন্টার থেকে মদ বিক্রি করা হচ্ছিলো। প্রতিটি কাউন্টার থেকে লাইন এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছিল কয়েক কিলোমিটার। একজনের গায়ের ওপরে অন্যজন দাঁড়িয়ে। ৪০ দিন ধরে লকডাউনে থাকার পর মদের জন্য করোনাকে আর পাত্তা দেননি মদ্যপায়ীরা। অবস্থা দেখে কিছুক্ষণের মধ্যেই দিল্লিতে মদের দোকান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা করেন, করোনারখরচ তুলতে মদের ওপর ৭০ শতাংশ শুল্ক বসানো হলো। দিল্লিতে মদ থেকে শুল্কবাবদ রাজ্য সরকারের আয় হয় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এ বার তার পরিমাণ বাড়বে বলে রাজ্য সরকারের আশা। ফলে রাজধানীতে যাঁরা মদ খান, তাঁরা রেগে গেলেও সরকার আপাতত পিছিয়ে আসছে না। তবে এর ফলে হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ থেকে দিল্লিতে মদ নিয়ে আসার প্রবণতা বাড়বে, যদি না বিজেপি শাসিত ওই দুই রাজ্যও কেজরিওয়ালকে অনুসরণ করে শুল্ক বাড়িয়ে দেয়।
Delhi: People queue outside a liquor shop in Laxmi Nagar area. Positions of people in the queue have been written on their hands. #CoronaLockdown pic.twitter.com/6zIZ6dLQbb
— ANI (@ANI) May 5, 2020
শুধুমাত্র দিল্লিতেই ৮৫০টি মদের দোকান আছে। তার মধ্যে কিছু দোকান সরাসরি সরকার চালায়। পুলিশের নির্দেশিকা মেনে সরকারি মদ বিক্রির দোকান সকাল নয়টা থেকেই খুলে যাবে। সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত তা খোলা থাকবে। সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, সোমবার দিল্লিতে ১৫০টির মতো মদের দোকান খুলেছিলো। কিন্তু সেখানে এত ভিড় হয়েছিলো যে এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে তা বন্ধ করে দিতে হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কড়া নির্দেশ আছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাশ্মীরি গেট এলাকায় একটি মদের দোকানের সামনে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। মদের দোকানের মালিকদের বলা হয়েছে, ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক দূরত্বের ব্যবস্থা করে যেন মদ বিক্রি করা হয়।
অন্য রাজ্যের অবস্থাও কম বেশি একই। অন্ধ্র প্রদেশেও মদের দোকানের ভিড় সামলাতে লাঠি চালিয়েছে পুলিশ।
উত্তর প্রদেশেও মদের দোকানের সামনে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়েছে। যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে প্রথম দিনেই রেকর্ড ১০০ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। এমনিতে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ কোটির বিক্রি হয়। সোমবার কম সময়ের জন্য দোকান খুলেছিলো। তা সত্ত্বেও বিক্রির পরিমাণ প্রায় ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। শুধু লখনউতেই ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। কলকাতাতেও মদের দোকানের সামনে বিশাল লাইন ছিলো। সেখানেও পুলিশকে একাধিক জায়গায় লাঠি চালিয়ে ভিড় সামলাতে হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় দুপুর-বিকেলের মধ্যেই দোকানের স্টক শেয হয়ে যায়।
#WATCH Andhra Pradesh: Long queue seen outside a liquor shop in Chittoor; social distancing norms flouted. pic.twitter.com/v9IgIrZGqQ
— ANI (@ANI) May 4, 2020
কর্ণাটকের কোলারে ৭৫ বছর বয়সী লক্ষ্মাম্মাকে দিয়ে মদ বিক্রি শুরু করেন দোকানদার। কারণ, তাঁর নামের অর্থ লক্ষ্মী, তিনি ধন-সম্পদের দেবতা। উত্তর প্রদেশের মির্জাপুরে ক্রেতাদের ওপর ফুলের বৃষ্টি করে মদ বিক্রি শুরু হয়। বেঙ্গালুরুতে প্রচুর মহিলা এসেছেন দেখে, তাঁদের জন্য আলাদা লাইন করে দেওয়া হয়।
মদের দোকানের এই ছবিই বুঝিয়ে দিচ্ছে, লকডাউনের কড়াকড়ি শিথিল হওয়ার পর অধিকাংশ জায়গায় মানুষ কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। রাস্তায় আবার গাড়ি নেমেছে। সবুজ এলাকাগুলিতে বাস চলাচল করছে। লোকে অনেক বেশি রাস্তায় নেমেছেন। সামাজিক দূরত্বও বিশেষ রক্ষিত হচ্ছে না। আর তার মধ্যেই গত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ৯০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ১৯৫ জন। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় রেকর্ড বৃদ্ধি হয়েছে।
তবে অর্থনীতি সচল রাখতে সরকার এখন মরিয়া। আগামী দুই মাস লোকেদের কী করে সাহায্য করা যায়, কাজ দেওয়া যায়, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার একটা বড়সড় পরিকল্পনা তৈরি করছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে বিষয়টি দেখছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছ থেকে ট্রেনের টিকিট নেওয়ার পর যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে এবং লোকেদের সাহায্য করতে এই পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে বলে সূত্র জানাচ্ছে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা