‘মারতে মারতে মেরেই ফেললেন’


ইউএনভি ডেস্ক :

মারতে মারতে মেরেই ফেললেন মানুষকে, চারটি মেয়েকে এতিম করে দিলেন। শুক্রবার জুমার আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে নিহত সানাউলের স্বজনদের আহাজারিতে যখন পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছিল তখন ছোট ভাই মাসুদ রানা বিশ্বাস গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যদের প্রতি এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন।

বৃহস্পতিবার রাতে ভোলাহাটে গোয়েন্দা পুলিশের নির্যাতনে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের অমানবিক নির্যাতনেই মারা গেছেন সানাউল।

তবে পুলিশ বলছে, পালিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পাওয়ায় হাসপাতালে নেয়ার পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে সানাউল।

নিহত সানাউল হক বিশ্বাস ভোলাহাট উপজেলার চাঁনশিকারী গ্রামের মৃত মুর্শেদ বিশ্বাসের ছেলে।

সানাউলের ভাই মাসুদ রানা বিশ্বাস অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার ইফতারের পর সানাউল বাড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী একটি দোকানে ডিম কিনতে যায়। এসময় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে আটক করে। আটকের পর তাকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। এই নির্যাতনের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। নির্যাতনের পরে তার ভাই পানি খেতে চাইলেও পুলিশ দেয়নি।

তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে তার ভাইকে আটক করা হলেও তিনি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না। তবে মাদক সেবন করতেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নিহত সানাউল ও তার পরিবার বংশীয়ভাবে বিত্তশালী ছিলেন। তবে তিনি মাদকসেবীও ছিলেন।

নিহত সানাউলের এক আত্মীয় অভিযোগ করেন, সত্যি কথা হলো সানাউল মাদকাসক্ত ছিল কিন্তু সে মাদকের কোন ব্যবসা করত না। স্থানীয় সোর্সরা মাদক ব্যবসা করে এবং তারাই ডিবি পুলিশের কাছে সানাউলের খোঁজ দেয়। এ কারণে ডিবি পুলিশ মাঝে মধ্যেই তার কাছে টাকা চাইত। গতকাল তাকে ধরার পর ১০ লাখ টাকা চেয়েছিল, এক পর্যায়ে ২ লাখ টাকা দাবি করে এবং তা দিতে অস্বীকার করায় সে এই নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। নির্যাতনের কারণে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সানাউলকে আটকের পর তাকে বেধড়ক মারধর করে। এসময় তার মাথার নিচে এবং কানের কাছে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। এরপর একটি চায়ের দোকানের সামনে নিয়ে আসে। সেখানে ডিবি পুলিশ পানি ও চা খায়। এ সময় সানাউল পানি খাওয়ার জন্য তাদের কাছে বারবার আকুতি জানালেও তাকে পানি খেতে দেয়নি ডিবি পুলিশ। এরপর মারতে মারতে তাকে নিয়ে চলে যায়।

এক নারী প্রত্যক্ষদর্শী জানান, টর্চলাইট এবং ইট দিয়ে আঘাত করা হয় সানাউলকে। সাদা পোশাকে কয়েকজন ডিবি পুলিশ ছিল এবং তারা বয়সে খুব ছোট মানে ইয়ং ছিল।

একপর্যায়ে উপস্থিত সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলে, স্থানীয় মেম্বারকে বলে দিও, একে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডিবি পুলিশ নিয়ে গেছে।

তারা আরও জানান, এরপর তাকে আরেক দফা নির্যাতন করা হয় এবং ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার আগেই তাকে মেরে ফেলে। পরে তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মেডিকেলে নিয়ে গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশের মুখপাত্র এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম খান জানান, মাদক সেবনের সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করে, এসময় পড়ে গেলে পুলিশ তাকে আটক করে। আটকের পর সানাউল বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে প্রথমে ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

তিনি আরও জানান, এখন যেহেতু মারা গেছে এখন অনেক কথায় আসবে। সবগুলি আমলে নেন তাহলে সঠিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে না। এখন ময়নাতদন্ত হবে, মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হয়ে তারপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


শর্টলিংকঃ