মিশিগানের যে ‘মৃত ভোটাররা’ এখনও জীবিত!


ইউএনভি ডেস্ক: 

এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে হেরেই কারচুপির নানা অভিযোগ করছেন, দিচ্ছেন মামলার হুমকিও। ট্রাম্পের অভিযোগ, তাকে জালভোট দিয়ে হারানো হয়েছে। আর এই জালভোট দেয়া হয়েছে মৃত ব্যক্তিদের নামেও। খবর বিবিসির।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের একই দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে হাজার হাজার ভোট দেয়া হয়েছে, এমন ব্যক্তির নামে, যারা আসলে মৃত। এই তথাকথিত ‘মৃত ভোটারদের’ একজন হচ্ছেন মারিয়া আরেডোনডো। গণমাধ্যমকর্মীরা যখন তাকে ফোন করেন, তিনি তাদের বলেন, আমার বয়স ৭২, কিন্তু আমি এখনও বেঁচে আছি এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছি। আমার মাথাও ঠিকমতো কাজ করছে এবং আমার স্বাস্থ্য বেশ ভালো।

মারিয়া তাদের জানালেন, নির্বাচনে তিনি জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছেন। তিনি আরও জানালেন, মিশিগানের কথিত মৃত ভোটারদের এক তালিকায় তার নামটি দেখে তিনি খুবই অবাক হয়েছেন।

মারিয়ার মতো আরও অনেকে, যাদের নাম রয়েছে এই কথিত মৃত ভোটারদের তালিকায়, তাদের সঙ্গে সাংবাদিকরা কথা বলেছেন। তাদের বেলাতেও গণমাধ্যমকর্মীরা মারিয়ার মতো একই ধরনের কাহিনি জানতে পেরেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আগের নির্বাচনগুলোতেও এ রকম ঘটনা ধরা পড়েছে, যেখানে মনে হয়েছে যেন কোনো মৃত ব্যক্তি ভোট দিয়েছে।

এ রকম ঘটনা ঘটে মূলত সরকারি নথিপত্রের ভুলে। অথবা এই পরিবারে একই নামে থাকা আরেক ব্যক্তি যখন তাদের ব্যালট পাঠিয়ে ভোট দেন তখন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকরা অভিযোগ করছেন, এবারের নির্বাচনে এটি ব্যাপক হারে ঘটেছে।

তাদের এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ আছে কিনা সেটি জানতে গণমাধ্যম অনুসন্ধান চালায়।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক এক রাজনৈতিক কর্মী ১০ হাজার লোকের নামের একটি তালিকা টুইটারে পোস্ট করেছিলেন। সেখান থেকেই এই বিতর্কের শুরু।
এ তালিকাটি দেখে মনে হবে যেন এরা সবাই মারা গেছে, কিন্তু তাদের নামে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয়া হয়েছে।

মৃত লোকদের নামে ভোট দেয়ার এ দাবি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যারা এসব দাবি করেছেন, তাদের মধ্যে রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত অনেক জনপ্রতিনিধিও আছেন।

টুইটারে শেয়ার করা ১০ হাজার ‘মৃত ভোটারের’ তালিকায় তাদের নাম, পোস্ট কোড এবং যে তারিখে তারা ব্যালট পেপার পেয়েছেন তার উল্লেখ আছে। এর পর সেখানে একটি সম্পূর্ণ জন্ম তারিখ এবং সম্পূর্ণ মৃত্যু তারিখ দেয়া আছে। তালিকা অনুযায়ী কেউ কেউ মারা গেছেন ৫০ বছরেরও বেশি আগে।

মিশিগানে এমন একটি ডেটাবেজ বা তথ্যভাণ্ডার আছে, যেখানে যে কেউ ঢুকে কারও নাম, পোস্ট কোড, জন্ম মাস এবং জন্ম বছর দিয়ে যাচাই করে দেখতে পারেন, তারা এ বছর ‘অ্যাবসেন্টি ব্যালট’, অর্থাৎ অনুপস্থিত ভোটার হিসেবে ডাকযোগে ভোট দিয়েছেন কিনা।

যুক্তরাষ্ট্রে এ রকম কয়েকটি ওয়েবসাইট আছে, যেখানে সব মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড বা নথিপত্র আছে। কিন্তু টুইটারে পোস্ট করা ১০ হাজার মানুষের এ তালিকায় একটা মৌলিক সমস্যা আছে।

এসব তথ্যভাণ্ডার দেখে এভাবে একটা তালিকা তৈরির কাজ করতে গেলে একই নামের দুজন ভিন্ন মানুষকে গুলিয়ে ফেলতে পারেন। যেমন ১৯৪০ সালের জানুয়ারিতে জন্ম, এ রকম এক ভোটার হয়তো মিশিগানে ভোট দিয়েছেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোন জায়গায় হয়তো ঠিক একই নামে আরেকজন আছেন, যারও জন্ম ১৯৪০ সালের জানুয়ারিতে, কিন্তু যিনি এখন মৃত।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি বড় দেশে এটা অহরহই ঘটে। কারণ দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৩৩ কোটি। এবং কিছু নাম আছে বহুল ব্যবহৃত, যে নামের অনেক মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে।

এই কথিত ‘মৃত ভোটারদের তালিকা’ সঠিক না বেঠিক তা যাচাই করার জন্য আমরা দৈবচয়ন ভিত্তিতে ৩০টি নাম বাছাই করা হয়। এর পর এই ৩০ জনের সঙ্গে সাংবাদিকরা যোগ করেন তালিকার সবচেয়ে বয়স্ক মানুষটির নাম।

এই ৩১ জনের মধ্যে ১১ জন যে এখনও বেঁচে আছেন, আমরা তা তারা নিশ্চিত করতে পেরেছেন। বাকি ১৭ জন যে মারা গেছেন এ রকম কোনো সরকারি রেকর্ড নেই।

কথিত ১০ হাজার মৃত ভোটারের তালিকায় যে তারিখে তারা মারা গেছেন বলে বলা হচ্ছে, সাংবাদিকদের কাছে পরিষ্কার প্রমাণ আছে যে, সেই তারিখের পরও তারা বেঁচে আছেন বা ছিলেন।

এই অনুসন্ধান থেকে এটি একেবারে পরিষ্কার যে, কিছু মানুষের তথ্যের সঙ্গে অন্য কিছু ভুল তথ্য জুড়ে দিয়ে এই ‘মৃত ভোটারদের’ তালিকা তৈরি করা হয়েছে।


শর্টলিংকঃ