রাজশাহীর ৭৬ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ৬৬টিতেই নেই চিকিৎসক


ডেস্ক নিউজ:

রাজশাহী জেলার নয়টি উপজেলায় মোট ৭৬টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি করে সহকারী সার্জনের পদ রয়েছে। তবে ৭৬টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ৭৬ পদের বিপরীতে ৬৬টি পদই শূন্য রয়েছে। মাত্র চারটি উপজেলার ১০টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন করে চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। বাগমারা উপজেলায় ১৭টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ১৭টিতেই চিকিৎসকের পদই শূণ্য।

গোদাগাড়ী ৩১ শয্যবিশিষ্ট হাসপাতাল

রাজশাহীর উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত চিকিৎসক থাকেন না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আছে। তার ওপর এসব সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের চিকিৎসক ও নার্সের অর্ধেকেরও বেশি পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। মাঝে মধ্যে এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক বদলি করা হলেও কেউ বেশিদিন সেখানে থাকেন না।

তদবির করে বদলি নিয়ে চলে যান শহরে অথবা পছন্দের কোনো জায়গায়। কেউ কেউ সংযুক্তি নিয়ে ও প্রেষণে বদলি হয়ে কাজ করছেন অন্য জেলায়। ফলে রাজশাহীর গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার পুরোটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে প্রাইভেট ক্লিনিকের ওপর। বাকিরা হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল চরআষাঢ়িয়াদহ ইউনিয়নের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সহকারী সার্জনের একটি পদ থাকলেও দীর্ঘ ৫ বছর ধরেই শূন্য এ পদটি। একই দশা রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার আরও দশটি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের। অধিকাংশ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পদ থাকলে কোনো চিকিৎসক নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাসুদেবপুর ইউনিয়নের বালিয়াঘাটা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডা. লায়লা রাজ্জাককে কাগজে-কলমে কর্মরত দেখানো হলেও তিনি প্রেষণে বদলি নিয়ে সংযুক্ত রয়েছেন নবপ্রতিষ্ঠিত মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজে। ডা. লায়লা রাজ্জাক বেতন নেন রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিস থেকে। বাসুদেবপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাগজে-কলমে কর্মরত রয়েছেন ডা. তৌহিদা সাবরিন। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে সংযুক্তি বদলিতে কর্মরত আছেন রাজশাহী পুলিশ হাসপাতালে।

বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের দেয়া তথ্যমতে, জেলার ৯ উপজেলায় মোট ৭৬টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি করে সহকারী সার্জনের পদ রয়েছে। কিন্তু এ ৭৬টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ৭৬ পদের বিপরীতে ৬৬টি পদই শূন্য রয়েছে। মাত্র চারটি উপজেলার ১০টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন করে চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। জেলার বাগমারা উপজেলার ১৭টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ১৭টিতেই চিকিৎসকের পদ থাকলেও নেই কোনো চিকিৎসক।

একইভাবে দুর্গাপুরের সাতটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোনোটিতেই চিকিৎসক নেই। তানোরের ৮টির সবটিতে, গোদাগাড়ীর ১১টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ৯টিতে, চারঘাটের ৬টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সবটিতে, পুঠিয়া উপজেলার ৭টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সবটিতে, বাঘার ৫টির মধ্যে ৩টিতে, পবার ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫টিতে ও মোহনপুরের ৬টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে ৪টিতে কোনো চিকিৎসক নেই। এসব উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি করে সহকারী সার্জনের স্থায়ী পদ রয়েছে। সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব মতে, এই ৭৬টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আওতায় রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ভার।

শুধু ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রই নয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও মারাত্মক চিকিৎসক সংকট রয়েছে অনেক দিন ধরে। জেলার বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসকের পদ রয়েছে সবমিলিয়ে ২২টি। তবে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১২টি চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে দুই বছর ধরে। বাঘায় পদ থাকলেও নেই আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার। পদ থাকলেও নেই সার্জারি, গাইনি, মেডিসিন, এনেস্থেসিয়া, চক্ষু, হৃদরোগ, চর্ম ও যৌন এবং অর্থপেডিক বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট।

পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

জেলায় একমাত্র পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রয়েছেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার। এর বাইরে জেলার ৮ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এ পদে কোনো চিকিৎসক নেই। নগরীর উপকণ্ঠ হওয়ায় এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সব পদেই চিকিৎসক রয়েছেন, তবে কেউ নিয়মিত হাসপাতালে যান না বলে জানিয়েছেন এলাকার লোকজন। এখানে সংযুক্ত থেকে চিকিৎসকরা সবাই নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়মিত প্র্যাকটিস করছেন।

জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর মধ্যে পুঠিয়ায় ৬, চারঘাটে ৬, দুর্গাপুরে ৭, বাগমারায় ৪, তানোরে ৭, মোহনপুর ও গোদাগাড়ীতে ৫টি করে চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এলাকাবাসী জানান, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের ওপর অবস্থিত গোদাগাড়ী হচ্ছে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা। এখানে রয়েছে ৩১ শয্যার হাসপাতাল। প্রতিদিনই এখানে ঘটছে ছোটবড় সড়ক দুর্ঘটনা। অথচ জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য এ হাসপাতালে নেই সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ।

৯টি চিকিৎসক পদ থাকলেও এখানে আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ শূন্য আরও ৫ পদ। রাজশাহীর সরকারি হাসপাতাল-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সংকট রয়েছে নার্সের। জেলায় নার্সিং সুপারভাইজারের মঞ্জুরিকৃত ৭ পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ৫ জন। এছাড়া ১৮৬ পদের বিপরীতে সিনিয়র স্টাফ নার্স রয়েছেন ১৭১ জন। আর ১০ পদে সহকারী নার্সের বিপরীতে কর্মরত মাত্র একজন।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. সঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, নতুন চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হলে জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক সংকট থাকবে না।

সূত্র: যুগান্তর


শর্টলিংকঃ