রাণীনগরে অবাদে কৃষি জমিতে পুকুর খনন


রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি :

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় এক শ্রেণীর পুকুর ব্যবসায়ী স্থানীয় কৃষকদের ধানী জমিতে ফসল চাষের বদলে বড় পুকুরের মালিক বুনিয়ে দেওয়ার লোভনী অফার দিয়ে এবং লীজ প্রক্রিয়া চালু করে জমির মালিককে বোকা বানিয়ে আবাদী জমিতে স্কেবেটার মেশিন দিয়ে আট ফিট গভীর করে জমির চার দিকে বাঁধ দিয়ে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে।

রাত-দিন বিরতিহীন ভাবে পুকুর খনন করে সেই মাটি আবার রাণীনগর, আত্রাই উপজেলা এবং বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহারের বিভিন্ন ইট ভাটাতে মাটি সরবারহ করা হচ্ছে। কৃষকরা না বুঝে একদিকে হারাচ্ছে তাদের পৈতিক ফসলী জমি অন্যদিকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে এক শ্রেণীর তথাকথিত পুকুর ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা এমনকি রাজধানী ঢাকা শহর থেকে এসে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায়এখানে পুকুর কেটে ইট ভাটার মালিকদের সাথে মাটি ব্যবসা চুটিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে এমন কি স্থানীয় কিছু জমির মালিকরাও ধান চাষ বাদ দিয়ে পুকুর খনন করে মাষ চাষের দিকে ঝুকে পড়ছে। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে এই এলাকার কৃষি জমি! ব্যক্তি মালিকানা জমির পাশাপাশি সরকারের ১নং খতিয়ানভূক্ত জমিও এই পুকুর দস্যুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে নদী-নালা খাল-বিল বাদে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর ফসলী জমি রয়েছে। শ্রেণী ভেদে প্রায় সকল জমিতেই সারা বছর কোন না কোন ধরণের ফসল হয়। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত কৃষিজাত পন্যের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় স্থাণীয় এক শ্রেণীর কৃষকরা পুকুর ব্যবসায়ী ও ইট ভাটা মালিকদের লোভনীয় অফারের ফাঁদে পড়ে প্রতি বিঘা জমি বছরে ১২ হাজার টাকা দরে ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদি লীজ প্রক্রিয়া চুক্তিনামা করে চাষযোগ্য ফসলী জমিতে বড় পুকুর করছে আর সেই মাটি প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) সাতশত টাকায় ইট ভাটায় বিক্রয় করছে পুকুর ব্যবসায়ীরা।

জমি গুলো দেখে মনে হচ্ছে এযেন উম্মুক্ত জলাশয়। ভূমি আইনের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে আবাদী কৃষি জমিতে অবাদে পুকুর খনন করায় দিনদিন কমে যাচ্ছে ফসলী জমি অন্য দিকে পাশের জমির মালিকরা পুকুর পাড়ের প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাভাবিক ভাবে পানি চলাচল বন্ধ হওয়ায় বোরো ধান রোপণে অনেক কৃষকরা বাধগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই কেউ চলে যাচ্ছে পুকুর দস্যুদের কাছে আবার কেউ জমি চাষ না করে ফেলে রাখছে। এতে করে পুরো উপজেলায় চলতি মৌসুমেই প্রায় ছয়শত হেক্টর জমিতে বোরো চাষ কম হওয়ার আশংকা রয়েছে।

প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা অবদি স্কেবেটার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ইট ভাটায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পুকুর খননের প্রবনতা লক্ষ্য করা গেলেও বিশেষ করে মিরাট ইউপি’র আয়াপুর ও আতাইকুলা মৌজার এক নাম্বার ও দুই নাম্বার স্লুইচ গেট নামক স্থানে পুকুর খননের প্রবনতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুধুমাত্র মিরাট ইউনিয়নই প্রায় ৫০ টিরও বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে।

কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম জানান, কৃষি জমিতে স্কেবেটার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে পুকুর খননের কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার আশংকায় মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলা মৌজার বেশকিছু জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান না হওয়ার আশংকা রয়েছে। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে পুকুর খনন থেকে বিরত থাকতে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল মামুন জানান, বিষয়টি সম্প্রতি জেনেছি, এদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


শর্টলিংকঃ