লোকসানে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা


ইউএনভি ডেস্ক:

ফেনীতে চামড়ার প্রতি ক্রমশ বিমুখ হয়ে উঠেছেন ফেনীর চামড়া ব্যবসায়ীরা। পাঁচ বছর ধরে লোকসানের কারণে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।অন্যদিকে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকেও বকেয়া টাকা আদায় করতে না পারায় স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে পারছে না। সব মিলিয়ে এবারও ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া কেনা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছেন এ বাজারের ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, বৃহত্তম নোয়াখালীর মধ্যে চামড়ার বড় বাজার হচ্ছে পাঁচগাছিয়া বাজার। এ বাজারে আগের মতো জৌলুস নেই। বছর পাঁচেক আগেও যেখানে কোরবানির সময় ৩শ থেকে ৪শ কোটি টাকার কাঁচা চামড়া বেচাকেনা হতো। বর্তমানে সেখানে ৪-৫ কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়।
কোরবানির ঈদে ফেনী ছাড়াও আশপাশের নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম থেকে চামড়া আসে এ বাজারে।

পাঁচগাছিয়া বাজার বড় চামড়ার ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন ভূঞা। তিনি একাই দশ কোটি টাকার কাঁচা চামড়া কিনতেন। এবারের কোরবানের ঈদে ৫০ লাখ টাকার চামড়া কিনবেন বলে তার প্রস্তুতি রয়েছে। চামড়ার ব্যবসা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।

সোহেল ও মাসুদ মেম্বারসহ এ বাজারের আরও ১৫-২০ জন চামড়া ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। এখন হাতেগোনা কয়েকজনই চামড়ার ব্যবসা করছে। কাঁচা চামড়ার বাজারে কয়েক বছর ধরে বেশ মন্দা চলছে। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে করোনার প্রভাব। করোনার প্রভাবের কারণে শ্রমিক সংকট রয়েছে। গত বছরের সে অবস্থা এই বছর আরো প্রকট হবে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

চামড়া ব্যবসায়ীরা আশংকা, সরকার এ খাতে সহযোগিতা না করলে ব্যবসা টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। এর পাশাপাশি ব্যাংক লোন সহজ করলে ও ট্যানারি মালিকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে বকেয়া টাকা পরিশোধ করলে চামড়া শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। চামড়া বিক্রি করার জন্য ঢাকার ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। তারা বকেয়া টাকা পরিশোধে গড়িমসি করে। এর কারণে পুঁজি না থাকায় তারা ঠিকমতো চামড়া কিনতে পারছে না।

সাহাব উদ্দিন নামে একজন শিক্ষক জানান, এক লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনে চামড়া দুইশ টাকাও বিক্রি করা যায় না। চামড়া বিক্রি করা টাকা মসজিদ, মাদ্রাসা, গরিব ও অসহায় মানুষদেরকে বিতরণ করা হয়। এতে চামড়া ন্যায্যমূল্যে বিক্রি না হওয়ায় গরিবের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্রেতা না পাওয়ায় অনেকে আবার চামড়াগুলো মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দিয়ে দেয়। ছাগলের চামড়াতো বিক্রি না হওয়ায় অনেকে খাল ও নদীর মধ্যে ফেলে দিয়েছেন।

চামড়া ব্যবসায়ী মাসুদ মেম্বার বলেন, কোরবানির সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। চামড়া কেনার চেয়ে শ্রমিকের মজুরি বেশি। করোনার কারণে পরিবহন খরচও অনেক বেড়ে গেছে। এতে চামড়া কিনে তাদের লোকসান হচ্ছে। গত কয়েকবছর ধরে তারা লাভের মুখ দেখছে না।

পাঁচগাছিয়া বাজারের চামড়া ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন ভূঞা জানান, চামড়া ব্যবসা নিয়ে সংশয়ের মধ্যে রয়েছি। পাঁচ বছর ধরে ট্যানারি মালিকদের কাছে কোটি কোটি টাকা আটকে রয়েছে। ট্যানারি মালিকরা টাকা দিচ্ছে না। এতে চামড়াও ক্রয় করা যাচ্ছে না। গত বছর যে চামড়া বিক্রি করা হয়েছে, তার টাকাও এখনও পাওয়া যায়নি। দুইশ টাকার চামড়া কিনলে লবণ খরচ ও শ্রমিক খরচ হয় আরো দুইশ টাকা। চামড়া বিক্রি করতে হয় তিনশ টাকা। দুইশ কোটি টাকার চামড়া বিক্রি করা হয়েছে দুই কোটি টাকা।

তিনি আরো বলেন, এভাবে লোকসানে চামড়া ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারছে না। আগে কোরবানির ঈদে ১০ কোটি টাকার চামড়া ক্রয় করেছি। এখন ব্যবসাটি ধরে রাখা ও ট্যানারি মালিকদের থেকে বকেয়া টাকা আদায় করার জন্য স্বল্প পরিসরে ৫০ লাখ টাকার চামড়া ক্রয় করবো। চামড়া ব্যবসায়ীরা সরকার, ব্যাংক ও ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে কোন সুবিধা পাচ্ছে না।

চামড়া পাচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিজিবির তৎপরতা ও সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কারণে চামড়া পাচার বন্ধ রয়েছে। বর্তমান সময়ে চামড়ার মূল্য কমে যাওয়ায় পাচারকারীরা গা ঢাকা দিয়েছে।

চামড়া পাচার প্রসঙ্গে বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুর রহিম জানান, ঈদের দিন থেকে চামড়া পাচার রোধে সতর্ক অবস্থানে থাকবে বিজিবি সদস্যরা।

তিনি জানান, ফেনীর ১০২ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার মধ্যে দুই স্থানে ৫৭৯ ও ৩৩৪ মিটার সীমানা অরক্ষিত। তবে বিজিবি সদস্যদের তৎপরতায় এ দুই স্থান দিয়ে চামড়া পাচার বন্ধ করতে সক্রিয় থাকবে বিজিবি।

ইতোপূর্বে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনিসুর রহমান জানিয়েছিলেন, ফেনীতে এবার সম্ভাব্য কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৭২ থেকে ৭৫ হাজার। এর বিপরীতে কোরবানি পশু রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার।

উল্লেখ্য, ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। পশু ও আকারভেদে এবার চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে সামান্য বেড়েছে। ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়া কিনতে হবে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়; গত বছর এই দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দাম হবে ৩৩ টাকা থেকে ৩৭ টাকা, গত বছর যা ২৮ থেকে ৩২ টাকা ছিল।

এছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা, আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর খাসির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকায় বেঁধে দিয়েছিল সরকার।


শর্টলিংকঃ