সন্ত্রাসীর অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলেই পার ৩১ বছর


ইউএনভি ডেস্কঃ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আমজাদ চেয়ারম্যান হত্যা মামলাসহ দুটি মামলায় দীর্ঘদিন ধরে ওয়ারেন্ট রয়েছে সন্ত্রাসী বশির আহমদ চৌধুরীর। খুনসহ ১০টি মামলার আসামি তিনি। অপকর্মে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেন লাইন্সেস করা একটি পিস্তলকে। একের পর এক অপরাধ করলেও লাইন্সেস করা অস্ত্রটি ছিল তার হেফাজতে।

এটি নিয়ে একাধিক মামলার এই আসামি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বছরের পর বছর। অবশেষে সেই অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করতে প্রশাসনের কেটে গেছে ৩১টি বছর! গত ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইলিয়াস হোসেন সন্ত্রাসী বশিরের অস্ত্রের লাইসেন্সটি বাতিল করেন। বশির বাহিনী নামে একটি বাহিনীও রয়েছে তার।
লাইসেন্স বাতিলের আদেশে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উল্লেখ করেছেন- বৈধ লাইসেন্সভুক্ত আগ্নেয়াস্ত্রটি প্রদর্শনপূর্বক জনমনে ভয়ভীতি সঞ্চার, চাঁদাবাজি অপহরণসহ বেআইনি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকে নিরীহ জনগণের স্থাবর সম্পত্তি জবরদখল করেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া যায়।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বশির আহমদ চৌধুরীর অস্ত্রের লাইসেন্সটি বাতিল করে জব্দ করার জন্য অনুরোধ করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘পুলিশ রিপোর্টের ভিত্তিতে জনৈক বশির আহমদ চৌধুরীর লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়। অস্ত্রটি জব্দ করে চট্টগ্রাম মহানগর সদর কোর্ট মালখানায় জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একাধিক মামলার আসামি বশির আহমদ চৌধুরীর আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল সংক্রান্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনা পেয়েছি। অস্ত্র জব্দ করতে বশিরের ঠিকানায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক অস্ত্রটি জব্দ করে সদর কোর্ট মালখানায় পাঠানো হবে।’

আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ১২ মার্চ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। পুলিশি তদন্তে বশিরের লাইসেন্স বাতিলপূর্বক আগ্নেয়াস্ত্রটি জব্দ করার অনুরোধ করেন। এ প্রতিবেদনের পরই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লাইসেন্সটি বাতিলপূর্বক আগ্নেয়াস্ত্রটি কেন জব্দ করা হবে না, এই মর্মে কারণ দর্শাতে সন্ত্রাসী বশিরকে নোটিশ দেন। কিন্তু বশিরের জবাব জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সন্তোষজনক না হওয়ায় লাইসেন্সটি বাতিল করেন।

১৯৮৯ সালে সাতকানিয়ার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে বশির আহমদ চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালি থানার মাধ্যমে একটি ডিবিবিএল দোনলা বন্দুকের লাইসেন্স নেন। নগরীর কোতোয়ালি থানার আওতায় অস্ত্রের লাইসেন্স হলেও তিনি তা সাতকানিয়ার গ্রামের বাড়িতে ব্যবহার করে আসছিলেন। হাতে লাইসেন্স করা অস্ত্র আসার পর ধীরে ধীরে বেপরোয়া হতে থাকেন বশির।

এলাকায় সৃষ্টি করেন ত্রাসের রাজত্ব। ১৯৯৯ সালের ৪ অক্টোবর সাতকানিয়া থানার মির্জাখীল বাংলাবাজার এলাকার সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বশির আহমদ চৌধুরী। বশিরের অপকর্মের প্রতিবাদ করার কারণেই এ জনপ্রতিনিধিকে হত্যা করা হয় বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলায় চট্টগ্রাম ষষ্ঠ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করেন আদালত।

সেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে এখনও। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকলেও তার হাতে রয়ে গেছে লাইসেন্স করা অস্ত্রটি। আমজাদ হত্যা মামলা ছাড়াও সাতকানিয়ার ডাবল মার্ডার মামলা, ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন হত্যা মামলা, আবদুল হাকিম হত্যা মামলা, আবু তাহের হত্যাচেষ্টা মামলা, নুরুল হক হত্যাচেষ্টা মামলাসহ ১০টি মামলার আসামি বশির আহমদ চৌধুরী। যদিও এরই মধ্যে সাক্ষীর অভাবে আদালতে তার বিরুদ্ধে থাকা ১০টি মামলার মধ্যে পাঁচটি মামলায় খালাস পেয়েছেন তিনি।

শহীদ চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার কামাল বলেন, ‘সন্ত্রাসী বশিরের অত্যাচার ও নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় আমাকে ও আমার বাবাকেও মারধর করেন। লাইসেন্স করা অস্ত্রটি মাথায় ঠেকিয়ে আমাকে অপহরণের চেষ্টা করেন। তার নির্যাতনে গ্রাম থেকে পালিয়ে চট্টগ্রাম শহরে এসে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছি। ২০১৮ সালের ৮ মার্চ নির্যাতনের শিকার হয়ে তার অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করতে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিলাম।’


শর্টলিংকঃ