সি আই ডি কিভাবে অপরাধী খুঁজে বের করে


বিপাশা আনজুম ঊষা:

পৃথিবীতে বড় বড় অপরাধীরা অপরাধ করে নিজেদেরকে আড়াল করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই সময়ে অপরাধ করে লুকিয়ে থাকা একদমই অসম্ভব। তাই নিজের ভেতরে অপরাধ করার গোপন ইচ্ছা থাকলে বাদ দিন এখনই। 

Amio Creation

কথায় আছে অপরাধী অপরাধ করার পরে একটি না একটি হলে ক্লু ছেড়ে যায়। কিন্তু সময় বদলেছে, এখন অনেক অপরাধীই প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুব সতর্কতার সাথে অপরাধ করেন। যাতে থাকে না কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ। এমন ক্লুলেস কেসের সুরাহা করতে যখন থানা পুলিশ সহ আইন প্রয়োগকারী অন্যান্য সংস্থার ঘাম ছুটে যায় ঠিক তখন ডাক পড়ে ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট বা সি আই ডি’র । পুলিশের বিশেষায়িত এই শাখার জনবল এত দক্ষ এবং এত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে, একটি গুলির খোসা, ফেলা থুতু, ঘামের কণা এমনকি অপরাধীর জুতার ছাপ থেকেও খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারেন অপরাধীকে।

অপরাধী সনাক্ত করার জন্য বিশ্বব্যাপী যে পদ্ধতিতে সর্বাগ্রে ব্যবহৃত হয় সেটি হচ্ছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিকগনিশন। একজন অপরাধী অপরাধ সংগঠনের সময় কোথাও না কোথাও তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট ছেড়ে যায়। আর এই অদৃশ্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট কে বিভিন্ন কেমিক্যাল এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় ল্যাবে পরে বিভিন্ন ইকুওমেন্ট ব্যাবহার করে ডিজিটালাইজড করা হয়। এরপর ন্যাশনাল ডাটাবেজের সাথে মিলিয়ে বের করে ফেলা হয় অপরাধীকে।

অপরাধী হয়তো গোপনে অপরাধ করে নির্বিঘ্নে হেঁটে বের হয়ে আসছে ঘটনাস্থল থেকে।সে হয়তো জানেনা তার এই পদচিহ্ন ধরেই তাকে খুব দ্রুতই বের করে ফেলা হবে। আপনারা হয়তো ভাবছেন পায়ের ছাপ থেকে কিভাবে একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু প্রযুক্তি আজ এমন জায়গায় পৌঁছেছে শুধুমাত্র পায়ের অথবা জুতার ছাপ দিয়েই একজন অপরাধীকে দ্রুততার সাথে খুঁজে বের করা সম্ভব।

প্রথমে ঘটনাস্থলে বিভিন্ন ধরণের আলো  ব্যাবহার করে খুজে বের করা হয় পায়ের ছাপ। এরপর বিশেষ ধরনের ফিল্ম এর সাহায্যে সেই পদচিহ্ন রেকর্ড করা করা হয়। এছাড়াও বাইরে মাটিতে যে পদচিহ্ন গুলো পাওয়া যায় সেগুলো কে বিশেষ মোল্ডিং কেমিক্যাল এর সাহায্যে স্টাম্প কপি করে নেওয়া হয়। পরে ল্যাবরেটরীতে গিয়ে সেই পদচিহ্ন গুলোকে ডেভেলপ করে ডিজিটালাইজ করা হয়। এরপর জুতার ব্যাক পার্টের প্রিন্টিং প্যাটার্ন সন্দেহভাজনদের জুতার প্যাটার্নের সাথে ম্যাচ করে নির্ণয় করা হয় প্রকৃত অপরাধীকে কে ? একটা জিনিস সবসময় মাথায় রাখতে হবে অপরাধী অপরাধ করে কোনোভাবেই পার পাবে না।


সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি কত দ্রুততার সাথে কয়েকটি ক্লুলেস ধর্ষণের মামলা সুরাহা হয়েছে। একজন ধর্ষক কে সনাক্ত করতে অপরাধ তদন্ত বিভাগ অনেকগুলো প্রযুক্তির সহায়তা নেন।

প্রথমে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত ভিকটিমের ব্যবহৃত পোশাক সহ নানা আলামত ল্যাবরেটরীতে নিয়ে এসে অত্যন্ত সূক্ষ্ম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এরপর সেই পোশাক থেকে ডিএনএ রেকর্ড উদ্ধার করা হয়। যা পরবর্তীতে সন্দেহভাজনের  রেকর্ড এর সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। এছাড়া অন্যান্য আলামত দিয়ে অপরাধীর বডি স্ট্রাকচার সম্বন্ধে খুব ভালোভাবে ধারণা পাওয়া যায়। ধর্ষণের রহস্য সমাধানেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। তবে যখন কোনো কূলকিনারা পাওয়া যায় না তখন ডিএনএ সিকোয়েন্সিং সিস্টেম ব্যবহার করা। আর এই পদ্ধতি গুলো এত সূক্ষ্ম আর অকাট্য যে একজন অপরাধী কোনোক্রমে কৃত অপরাধ অস্বীকার করতে পারে না।

ভিডিও দেখুন এখানে

 


শর্টলিংকঃ