হিট অ্যালার্টেও স্কুল, নগণ্য উপস্থিতির অনেকে অসুস্থ


ইউএনভি ডেস্ক:

দীর্ঘ ছুটি শেষে তাপপ্রবাহের মধ্যে গতকাল রোববার শ্রেণিকক্ষে ফেরে শিক্ষার্থীরা। নতুন করে তিন দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারির মধ্যে উপস্থিতি কম হলেও যারা এসেছে, প্রচণ্ড গরমে তারা নাকাল। সারাদেশে অর্ধশতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় আজ সোমবার এক দিনের জন্য ঢাকাসহ পাঁচ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, চলমান তাপদাহের কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরামর্শে ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোমবার বন্ধ থাকবে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে, তারা চাইলে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারবে। ফলে প্রভাতি শাখা (মর্নিং শিফট) চলা প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে এবং পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বন্ধ থাকবে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির কার্যক্রম।

গতকাল বিদ্যালয়ে এসে বমি করলে ও জ্ঞান হারালে অসুস্থ কয়েকজনকে হাসপাতালে নিতে হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠায় কর্তৃপক্ষ। ডে-শিফটে বেশি অসুস্থতার ঘটনা ঘটে। অভিভাবকরা প্রভাতি বিভাগ না করলে ছুটি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। গতকালও হিট স্ট্রোকে দুই শিক্ষকসহ ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দীর্ঘ বন্ধের পর গতকাল স্কুল খোলার কারণে রাজধানীতে তীব্র যানজট দেখা দেয়। গরমে যানজটে চরম দুর্ভোগ পোহান অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল থেকে নতুন করে তিন দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি হলো। টানা ২৮ দিন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কিছু এলাকায় তাপমাত্রার নতুন নতুন রেকর্ডও হয়েছে। আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আবহাওয়ার বিভিন্ন মডেল পর্যালোচনা ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে প্রতীয়মান, চলমান তাপপ্রবাহ আরও ৭২ ঘণ্টা বিলম্বিত হতে পারে। আগামী ২ মে সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে। তবে গরমের অস্বস্তি থাকবে।

গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি বা তার বেশি হলে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট এলাকার স্কুল বন্ধ ঘোষণা করতে পারবে।

রাজধানীর বিদ্যালয়ের চিত্র
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিকা রহমান ছুটি হওয়ার পরপরই বমি শুরু করে। শিক্ষকরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে সাদিকা বলে, ‘ক্লাস করার সময় অনেক খারাপ লেগেছে। স্কুল ছুটির পর বমি করে ফেলি। এত গরমে ছুটি দিলে ভালো হয়।’ অভিভাবক রাজীব আহমেদ বলেন, ‘আরও এক সপ্তাহ স্কুল বন্ধ রাখলে ভালো হতো।’ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের শিক্ষক প্রতিনিধি মহিউদ্দিন মাহী বলেন, ‘গরমে কষ্ট করে হলেও ৮০ শতাংশের বেশি উপস্থিতি ছিল। শিক্ষার্থীদের কষ্ট কমাতে ফ্যানগুলো ঠিক করা হয়েছে।’

গতকাল সকালে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল শাখার সামনে গিয়ে দেখা যায়, সন্তানদের দিতে এসেছেন অভিভাবক। অসন্তোষ প্রকাশ করেন তারা। বিদ্যালয়ে ঢোকার সময় মেয়েকে ক্লাসের বাইরে বের ও মাঠে খেলাধুলা না করতে সাবধান করেন। ভিকারুননিসার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তাবাসসুম হাসান মৌয়ের মা আবিদা হাসান বলেন, ‘ক্লাসে এসে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছে মেয়ে। আর আনব কিনা, ভাবছি।’ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের শিক্ষক প্রতিনিধি ফারহানা খানম জানান, উপস্থিতি প্রায় শতভাগ। ফ্যানগুলো মেরামত ও একাডেমিক ভবনের প্রতিটি করিডোরে পানি রাখা হয়েছে।

বিদ্যালয় খুলেছে, ফিরেছে যানজট
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে ছিল তীব্র যানজট। চালক ও যাত্রীরা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হওয়ায় যানজট বেড়েছে। সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে আছেন অভিভাবক। এ সময় ওই এলাকায় তীব্র যানজট ছিল। সকাল পৌনে ৮টার দিকে আসাদগেট থেকে মোহাম্মদপুরের টাউন হল এলাকা পর্যন্ত যানজটে স্থবিরতা দেখা দেয়।

গুলিস্তান, পুরানা পল্টন, শাহবাগ ও কলাবাগান এলাকায়ও বেলা ১১টা পর্যন্ত যানজটে ভোগান্তি পোহান মানুষ। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ওয়াহিদ বিন সবুর বলেন, ‘ঈদের পর থেকে নিয়মিত অফিস করলেও যানজট পাইনি। রোববার খিলগাঁও থেকে বাংলামটর আসতে দ্বিগুণ সময় লেগেছে।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় গত সপ্তাহের চেয়ে রোববার ঢাকার সড়কে চাপ একটু বেশি বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের তেজগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার স্নেহাশীষ কুমার দাস।
গতকাল রাজধানীর ঢাকা উদ্যান-সংলগ্ন বেড়িবাঁধ প্রধান সড়কে প্রায় ১ হাজার রিকশাচালক, পথচারীসহ শ্রমজীবীকে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন দেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

কুমিল্লার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘পানি ঘণ্টা’ চালু করা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড গরমে শিক্ষার্থীদের কিছুটা স্বস্তি দিতে এ উদ্যোগ। যত দিন বিরূপ আবহাওয়া থাকবে, পানি ঘণ্টা চলবে।

গতকাল দুপুরে কুমিল্লা সরকারি কলেজে স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার ডিউটিতে থাকা গণিত বিভাগের শিক্ষক ওয়ালী উল্লাহ রিপন জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে যান। পরে তাঁকে নগরীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সারাদেশের চিত্র
গতকাল সন্ধ্যায় গরমে রাজধানীর গুলিস্তানের একটি মসজিদে মিজানুর রহমান শাহিন (৫২) ও ফুলবাড়িয়ায় বজলু মিয়া (৪৫) নামে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। সকালে যাত্রাবাড়ীতে সিএনজি অটোরিকশার ভেতর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে সেলিম মিয়া (৫০) নামে এক মাংস ব্যবসায়ী মারা যান।

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও মোহরা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে সকাল ৯টার দিকে কালুরঘাটে ফেরিতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মাওলানা মোস্তাক আহমেদ কুতুবী আল কাদেরী (৫৫)। পরে চমেক হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মোস্তাক বোয়ালখালীর খিতাপচর আজিজিয়া মাবুদিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক ও আঞ্জুমানে আজিজিয়া মাবুদিয়া সুন্নিয়ার সহসভাপতি ছিলেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সদস্য সচিব কাজী এমরান কাদেরী।

ধান কাটা শেষে বাড়ি ফিরে গতকাল সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন যশোর সদরের দেয়াড়া ইউনিয়নের আমদাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আহসান হাবিব (৩৮)। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এজেডএম পারভেজ মাসুদ এ তথ্য জানিয়েছেন।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হাসিব মোহাম্মদ আল হাসান জানান, হাসপাতালে আনার আগেই হাবিবের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোকে মৃত্যু মনে হচ্ছে না। এদিকে স্থানীয়রা জানান, হাবিব নিয়মিত মাদক সেবন করতেন। তাপপ্রবাহের মধ্যে মাঠে কাজ করার প্রভাবে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

যশোরে গতকাল বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী আসেনি। সদরের বালিয়া ভেকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ৬০ শিক্ষার্থীর ২৩ ও পঞ্চম শ্রেণির ৬৯ জনের মধ্যে এসেছে ২৬ জন।

যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসলিমা নূরার মা তহমিনা ইসলাম বলেন, মেয়েকে নিয়ে এসেছিলাম। ক্লাস শেষ হওয়ার পর মেয়েটা অসুস্থ বোধ করছে। গরম না কমলে আর স্কুলে আনব না।

রাজশাহীতে গতকাল সকালে দিলীপ বিশ্বাস (৩৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন দামকুড়া থানার কাদিপুর গ্রামের গোপাল বিশ্বাসের ছেলে। স্বজনরা জানান, দিলীপ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে তিনি মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গতকাল দুপুরে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার নয়াখালী মাটিভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। আর দশম শ্রেণির ছাত্র মো. রাসেল অসুস্থ হয়ে পড়লে দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। আর ভাণ্ডারিয়া শাহাবুদ্দিন কামিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মারিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন শিক্ষকরা।

জেলার ইন্দুরকানী উপজেলায় ৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে প্রশিক্ষণে থাকায় শুধু পতাকা উড়েছে, ক্লাস হয়নি।
চুয়াডাঙ্গায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে অর্ধেক সংখ্যক শিক্ষার্থীও উপস্থিত হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। বিভিন্ন স্কুলে ছুটি চেয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে দরখাস্ত দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরা প্রভাতি বিভাগ কিংবা বিকল্প পদ্ধতিতে পাঠদানের দাবি জানিয়েছেন।

আলমডাঙ্গার গোকুলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ‘খ’ শাখায় ৭৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৬ এবং অষ্টম শ্রেণির ‘খ’ শাখায় ৫৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত হয় ১৩ জন। ডা. আফছার উদ্দিন কলেজে একাদশ শ্রেণিতে মাত্র দুই শিক্ষার্থী হাজির হয়।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজিত রহমান বলেন, চুয়াডাঙ্গায় এখন ৪১-৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা। সন্তানের ঝুঁকি বিবেচনা করে অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না। চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা রেজাউল করিম বলেন, তীব্র গরমে সন্তানদের ক্লাসে পাঠিয়ে স্বস্তি পাচ্ছি না। হিট অ্যালার্ট জারি রেখে স্কুল চালু ঠিক হয়নি।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। গরমে টিকতে না পেরে প্রাথমিকের মতো মাধ্যমিকেও প্রভাতি শাখা ক্লাস চালুর দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। গতকাল উপজেলার বেরুবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আব্দুল হক গরমে অজ্ঞান হয়ে যান। পরে মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফিরলে বাড়ি পাঠানো হয়।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গতকাল সৈয়দপুর ইউনিয়নের শেখেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে তিন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা হলো দশম শ্রেণির জুঁই দাশ, মরিয়ম আক্তার নিপা ও অষ্টম শ্রেণির মাইসা আক্তার।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় প্রচণ্ড গরমে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উপজেলার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের বন্যাকান্দি এনএম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন জানান, দশম শ্রেণির ছাত্র রিফাত হোসেন শ্রেণিকক্ষে জ্ঞান হারায়। পরে কামারখন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে ভর্তি করা হয়। রিফাত ছাড়াও চার শিক্ষার্থী অসুস্থ বোধ করলে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

উপজেলার ডিগ্রির চর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিন জানান, সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সাথী খাতুন শ্রেণিকক্ষে অসুস্থ হয়ে পড়লে মাথায় পানি ঢেলে সুস্থ করা হয়।খুলনায় তীব্র গরম থাকলেও অসুস্থ হয়ে পড়ার তেমন খবর পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকে গড়ে ৬৫ ও মাধ্যমিকে উপস্থিতি ছিল ৫০ শতাংশ। তবে দৌলতপুর মুহসিন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জোয়ার্দার জানান, বিদ্যালয় খুললেও তাপদাহের কারণে ২৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রীও উপস্থিত হয়নি। খুলনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাশার মোল্লা জানান, তৃতীয় শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ায় বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

নোয়াখালীর হাতিয়া ও বেগমগঞ্জে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত ১৮ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়। হাতিয়া জনকল্যাণ শিক্ষা ট্রাস্ট হাই স্কুলের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক ফাতেমা ইসরাত জানান, ষষ্ঠ শ্রেণির ১১, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির দু’জন করে অসুস্থ হয়। কয়েকজন বমি করে। অন্যদিকে বেগমগঞ্জের আমানউল্যাপুরের জয়নারায়ণপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক জামাল উদ্দিন জানান, সকালে জ্ঞান হারায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আফিফা। মাথায় পানি দিলে সুস্থ হয়। আরও কয়েক শিক্ষার্থী অসুস্থ বোধ করায় ছুটি দেওয়া হয়।

ফরিদপুরের সালথায় রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন শিক্ষক ও ১১ শিক্ষার্থী অসুস্থ হন। তাদের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রানিতা নামে এক শিশুর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রবিউল ইসলাম জানান, স্কুলে এসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শ্রেণিকক্ষ ও মাঠের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেন তিনি। কিছুক্ষণ পর সবাই টিউবওয়েল থেকে পানি পান করলে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

রাজশাহী বিসিএসআইআর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬০১ শিক্ষার্থীর মধ্যে গতকাল মাত্র ১০০ জন এসেছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিল। আর জেলার চারঘাটের মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজে পুরোদমে ক্লাস চলেছে। তবে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল কম।

ময়মনসিংহের নান্দাইলের বেশ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে উপস্থিতি একেবারেই কম দেখা গেছে। কয়েকটিতে শিক্ষার্থী এলেও ক্লাস হয়নি। রাঙ্গামাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সব শিক্ষক এলেও সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী আসেনি। প্রধান শিক্ষক জাকির আহমেদ তুহিন বলেন, গরমের কারণে আসেনি। ধীরে ধীরে হাজিরা বাড়বে।

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর হাসাইল বানারী ইউনিয়নের বানারী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে গতকাল দুপুরে শ্রেণিকক্ষে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সুমি আক্তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে তাকে টঙ্গিবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।


শর্টলিংকঃ