হেরোইনের আসামীর জামিন জালিয়াতি মামলায় আইনজীবী গ্রেফতার


নিজস্ব প্রতিবেদক :

জামিন জালিয়াতির অভিযোগে রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য আইনজীবী সালাহউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকার শাহবাগ থানা পুলিশের একটি দল বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে সালাহউদ্দিনকে তার গোদাগাড়ী পৌর এলাকার গড়েরমাঠ মহল্লার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে।

অ্যাড. সালাহউদ্দিন

হাইকোর্টে একটি মাদক মামলার জামিন জালিয়াতির অভিযোগে শাহবাগ থানায় দায়েরকৃত মামলায় অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌর এলাকার আঁচুয়াভাটা গ্রামের আফজাল হোসেন বিশ্বাসের ছেলে আশরাফুল ইসলাম বাবুকে ৫৫০ গ্রাম হেরোইনসহ তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ।

এ বিষয়ে গোদাগাড়ী থানায় মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা রুজু হয়। একই বছরের ২৯ নভেম্বর পুলিশ আশরাফুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

এদিকে বিভিন্ন বিচারিক আদালত ঘুরে সর্বশেষ রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেও আশরাফুল ইসলাম বাবুর জামিন না হওয়ায় হাইকোর্টে জামিনের জন্য আবেদন করা হয়। ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি শেখ আবদুল আওয়ালের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ আশরাফুল ইসলাম বাবুর জামিন মঞ্জুর করেন।

হাইকোর্টে আসামি বাবুর আইনজীবী হিসেবে মামলাটি উপস্থাপন ও শুনানি করেন অ্যাডভোকেট রিফাত জাহান। হাইকোর্টের জামিনের আদেশ নামাসহ রাজশাহীর বিচারিক আদালতে আসামির পক্ষে জামিননামা দাখিল করেন অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন আহমেদ।

এদিকে নিয়মানুযায়ী হাইকোর্টের জামিনের কাগজপত্র রাজশাহীর বিচারিক আদালতে প্রেরণের পর নথিপত্র যাচাই-বাছাইকালে ধরা পড়ে যে ৫৫০ গ্রাম হেরোইনের মূল মামলাটির জামিনের জন্য হাইকোর্টে দাখিলকৃত অনুলিপি ও কাগজপত্রে মাত্র ৪৮ গ্রাম হেরোইন দেখানো হয়েছে।

মামলা উপস্থাপনকারী আইনজীবী ও তার সহযোগী আইনজীবীদের মাধ্যমে নিম্ন আদালতে থাকা মামলার মূল অনুলিপি জাল করে নকল কাগজপত্র হাইকোর্টে দাখিল করেন বলে ধরা পড়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, রাজশাহীর বিচারিক আদালতে থাকা মামলার মূল কাগজপত্রের অনুলিপি জাল করার বিষয়টি নিশ্চিতের পর বিষয়টি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্টারকে চিঠি দেয়া হয়।

রেজিস্টারের দফতর মামলার মূল কাগজপত্রের অনুলিপি (হুবহু কপি) জামিন প্রদানকারী হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে প্রেরণ করে। পরে একই বছরের ১২ এপ্রিল মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি শেখ আবদুল আওয়াল ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের যৌথ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।

শুনানি শেষে হাইকোর্টের বেঞ্চ মামলার নথি জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে আসামি আশরাফুল ইসলাম বাবুকে দেয়া জামিন বাতিল করেন এবং এই নথি জালিয়াতির ঘটনাটি তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডিকে নির্দেশ দেন।

এদিকে জামিন জালিয়াতির শুনানিতে আসামি বাবুর আইনজীবী রিফাত জাহান হলফনামা দিয়ে জানান যে, তিনি সিনিয়র আইনজীবী শেখ আতিয়ার রহমানের অনুরোধে আসামির জামিনের আবেদন করেছিলেন। শেখ আতিয়ার রহমান মামলাটি ঢাকা জজ আদালতের আইনজীবী শিউলী আক্তারের মাধ্যমে পেয়েছিলেন।

অন্যদিকে সিআইডি তদন্ত করে সম্প্রতি জামিন জালিয়াতির বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্টারের দফতরে।

সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচিত মামলাটির মূল নথির অনুলিপি জালের সঙ্গে রাজশাহী বারের আইনজীবী সালাহউদ্দিন আহমেদ ও তার সহযোগীরা সরাসরি জড়িত।

গত মার্চ মাসে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্টার দফতরের তত্ত্বাবধায়ক মজিবুর রহমান বাদী হয়ে অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি জালিয়াতির মামলা করেন।

সেই মামলার আসামি হিসেবে অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিনকে বৃহস্পতিবার ভোরে তার গোদাগাড়ীর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই অমল কৃঞ্চ দে জানান, আইনজীবী সালাহউদ্দিনকে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হবে। এই জামিন জালিয়াতি মামলার বিষয়ে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন রয়েছে। এই জালিয়াতিতে আর কারা জড়িত সেটিও তদন্তের প্রয়োজনে জানা জরুরি।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আলোচিত এই মাদক মামলাটির শুনানি শেষে সম্প্রতি রায় হয়েছে। এই রায়ে আদালতের বিচারক আসামি আশরাফুল ইসলাম বাবুকে ৫৫০ গ্রাম হেরোইন রাখার অভিযোগে যাবজ্জ্বীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন। বাবু বর্তমানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজা ভোগ করছেন।

অন্যদিকে রাজশাহীর এসপি মো. শহীদুল্লাহ জানান, মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রাজশাহীতে ছয়জন আইনজীবীকে শনাক্ত করা হয়েছে একটি তদন্তের মাধ্যমে। গ্রেফতারকৃত সালাহউদ্দিন তাদের একজন। সূত্র : যুগান্তর


শর্টলিংকঃ