আসামিদের বক্তব্যে অসংগতি


ইউএনভি ডেস্ক:

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) আরও দুই সদস্য গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন এসআই শাহাজাহান ও কনস্টেবল রাজীব।

দুপুরে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এ নিয়ে এপিবিএনের তিন সদস্য সিনহা হত্যায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন। বুধবার এপিবিএনের আরেক সদস্য মো. আব্দুল্লাহ জবানবন্দি দেন।

সূত্র জানায়, এপিবিএনের সদস্যরা বলেছেন- ঘটনার রাতে পরিদর্শক লিয়াকত ও এসআই নন্দ দুলাল ঘটনাস্থলে এসেই চেকপোস্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। তারা সিনিয়র ছিলেন। তাদের প্রতিরোধ করা বা থামানোর ব্যাপারে কিছুই করার ছিল না এপিবিএনের সদস্যদের। লিয়াকত ও নন্দ দুলালকে তখন মারমুখী দেখাচ্ছিল।\হএদিকে সিনহা হত্যার প্রধান তিন আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ\হফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত একেক সময় একেক কথা বলছেন। তাদের বক্তব্যও অসংগতিপূর্ণ। তাদের কথায় গুলি করার কারণ বা প্রেক্ষাপট নিয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।

আবার গুলি করার কারণ নিয়ে তিনটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন লিয়াকত। কখনও ঘটনার ‘দায়িত্ব’ নিচ্ছেন, কখনও নিজেকে বাঁচিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। আজ শুক্রবার ওসি প্রদীপসহ তিন প্রধান আসামির দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড শেষ হচ্ছে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন, নাকি ফের তাদের রিমান্ডে নেওয়া হবে- এটা আজ পরিস্কার হবে।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, গতকাল এপিবিএনের দুই সদস্য তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সিনহা হত্যার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, ওই সময়ে তারা তিনজন চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করছিলেন। চেকপোস্টে তাদের সামনেই সিনহাকে গুলি করা হয়। ঘটনার দিন রাতে লিয়াকতের আচরণ দেখে তাদের মনে হয়েছে কিছু একটার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি।

যেভাবে শিকারি তার শিকার ধরার জন্য অপেক্ষা করে। র‌্যাবের একটি সূত্রও জানিয়েছে, এপিবিএনের তিন সদস্য রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন, যা থেকে এই হত্যাকাণ্ডের একটি পরিস্কার চিত্র পাওয়া গেছে।আদালতে আনা হয়নি প্রদীপ, লিয়াকত ও নন্দ দুলালকে :র‌্যাব হেফাজতে প্রথম দফা রিমান্ড শেষে সোমবার আদালতে নিয়ে আসা হয় ওসি প্রদীপ, লিয়াকত ও নন্দ দুলালকে। ওই দিনই আবার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

তবে আদালত প্রত্যেকের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গতকাল এই তিন আসামিকে আদালতে তোলা হবে- এমন খবর ছিল। এর জন্য আদালত প্রাঙ্গণে ছিল বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আসামিদের পক্ষে লড়ার জন্য বেশ কয়েকজন আইনজীবীও ছিলেন প্রস্তুত।

তবে এদিন আদালতে আনা হয়নি তিন আসামিকে।\হর‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুই দফায় মোট ১১ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সেই হিসাবে শুক্রবার শেষ হচ্ছে এই তিন আসামির রিমান্ড। আজ তাদের আদালতে হাজির করা হবে।এদিকে আসামি প্রদীপের পক্ষে লড়তে চট্টগ্রাম থেকে আসা আইনজীবী আহসানুল হক হেনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইন অনুযায়ী একটি মামলায় একজন আসামিকে সর্বোচ্চ ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া যায়।

এ ক্ষেত্রে আমার মক্কেল প্রদীপ কুমারকে গত ৬ আগস্ট থেকে ২১ দিন র‌্যাব হেফাজতে রাখা হয়েছে। প্রদীপকে বৃহস্পতিবার (গতকাল) আদালতে নিয়ে আসা হবে খবর পেয়ে আমরা এসেছিলাম তার জামিন প্রার্থনা করতে। তাকে আদালতে আনা হয়নি।’এই আইনজীবী জানান, তিনি ও ব্যারিস্টার সাঈদের নেতৃত্বে সাত আইনজীবী ওসি প্রদীপের পক্ষে লড়তে কক্সবাজার আসেন।

জব্দ তালিকায় গরমিল, নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন ওসি :মেজর সিনহার সঙ্গী শিপ্রা রানী দেবনাথের কক্ষ থেকে জব্দ সরঞ্জামের তালিকায় গরমিল থাকায় আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন রামু থানার ওসি মো. আবুল খায়ের। গতকাল দুপুর ১২টায় রামুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থিত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন তিনি। বিচারক মো. দেলোয়ার হোসেন মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে পরে আদেশ দেবেন বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে।


শর্টলিংকঃ