রাণীনগরে খালের পানি নিষ্কাশনে উদ্যোগ নেই


রাজেকুল ইসলাম, রাণীনগর (নওগাঁ) :

লিখিত পত্র দেওয়ার প্রায় ৩ সপ্তাহ হলেও রাণীগনর উপজেলার হাতিরপুলের রতনডারি খালসহ রক্তদহ বিলের ৪টি খালের পানি নিষ্কাশনের জন্য ১২টি সেতু-কালভার্টের মুখ থেকে মাটি অপসারণ হয়নি। ফলে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।

৩টি ইউনিয়নের ২লাখ কৃষকের প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষয়তির আশংকা ক্রমেই বাড়ছে।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, কয়েকটি বিল ও খালের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ থাকায় সামান্য বৃষ্টির পানিতে ইরি-বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করে গত ২৩ মার্চ রাণীনগর উপজেলা পরিষদের মাসিক সারধারণ সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৪ মার্চ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওই পরিমান ক্ষতির আশংকা জানিয়ে সেতু-কালভার্টের মুখ থেকে জরুরি ভিত্তিতে ভরাট করা মাটি ও আসবাবপত্র অপসারনের জন্য নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে পত্র দেওয়ার প্রায় ৩ সপ্তাহ হলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় কৃষকরা ফুঁসে উঠছে।

নওগাঁ-৬ ( রাণীনগর-আত্রাই) আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম সাংবাদিকদের নিকট ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, প্রায় ১০০ কোটি ব্যায়ে রাণীনগর-আবাদপুকুর আঞ্চলিক সড়ক সংস্কার কাজের শুরু থেকেই অবহেলা ও গড়িমসি করছে এবং এখনও পর্যন্ত মাত্র ৯/১০ ভাগ কাজ শেষ হলেও তা অত্যন্ত নি¤œ মানের বলে অভিযোগ করেন। কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণে কৃষকের সারা বছরের খাদ্য সঞ্চয় বোরো ধানের ক্ষতি হলে কৃষক ভাইয়েরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবেনা।

অভিযোগ উঠেছে, প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যায়ে রাণীনগর বাসষ্ট্যান্ড থেকে আবাদপুকুর হয়ে কালীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক নতুন করে পাকা করণ, প্রশস্ত করাসহ ৪টি সেতু ও ২৩ টি কালভার্ট ভেঙ্গে নতুন করে নির্মান কাজের দরপত্র দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আন্তরিকতার মনোভাব নেই বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। শুরু থেকেই থেমে থেকে ঢিমেতালে কাজ চলায় জন র্দূভোগের শেষ নেই। কাজের সময়সীমা ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকলেও ৯০ কাজই বাকী রয়েছে। ৪টি সেতু ও ২৩ টি কালভাট নির্মাণের অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে হাতিরপুল নামক স্থানের রতনডারি খালসহ রক্তদহ বিলের ৪টি খালের পানি নিষ্কাশনের প্রায় ১২টি সেতু-কালভার্টের মুখে মাটি ভরাট করে স্থায়ীভাবে বন্ধ রাখায় কৃত্রিম জলাবদ্ধতার আশংকা রয়েছে। শুষ্ক মৌসুম পার হয়ে গেলেও ভরাটকৃত সেতু-কালভার্ট গুলোর মুখে দেওয়া মাটি অপসারণ না করায় সমগ্র উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার আশংকা দেখা দিয়েছে। রক্তদহ বিলের চারিদিকে নওগাঁর রাণীনগর, বগুড়ার আদমদীঘি ও সান্তাহারের অংশ মিলে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান রয়েছে ।

উপজেলার বিলপালশা গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান, বিলকৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুল মমিন, সিম্বা গ্রামের নাছির উদ্দীন, অভিযোগ করে বলেন, রাণীনগর উত্তর-পূর্বাঞ্চল,বগুড়া জেলার আদমদীঘি, সান্তাহারের আশে পাশের এলাকা থেকে পানি এসে রক্তদহ বিলে জমা হয়। এই পানি ৪টি খাল এবং ১২টি সেতু-কালভার্ট দিয়ে বের হয়ে যায় কিন্তু পানি বের হওয়ার সবগুলো পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যে কোন সময় বৃষ্টিপাত হলে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে যাবে।কৃষকদের বাঁচাতে দ্রুত সেতু-কালভার্টের মূখ খুলে দেয়ার দাবিসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার শহিদুল ইসলাম কৃষকদের আশংকার কথা স্বীকার করে বলেন, খুব দ্রæততম সময়ের মধ্যে সেতু-কালভার্টের মূখ খুলে না দিলে বৃষ্টিপাতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

নওগাঁ জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল হক দায়সাড়া ও গতানুগতিক বক্তব্যে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে কাজ পিছিয়ে গেছে। প্রতিটি সেতু-কালভার্টের মূখে মাটির নিচ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপ দেয়া আছে।


শর্টলিংকঃ