ডিমেনশিয়া চিকিৎসায় নতুন আশা জাগিয়েছেন বিজ্ঞানীরা


ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিক্ষয় রোগের কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য গত কয়েক দশক ধরেই গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এবার ডিমেনশিয়া চিকিৎসায় বিশেষ ধরনের এক চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে বেশ আশার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। এ বিষয়ে কানাডার টরন্টোর ইউনিভার্সিটি হেলথ নেটওয়ার্কের ক্রেমবিল গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ডন ওয়েভার বলেন, ‘ডিমেনশিয়া চিকিৎসায় নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এই রোগের গবেষণা আগের চেয়ে দ্রুতগতিতে চলার পাশাপাশি আক্রান্ত রোগীদের চিকিত্সায় নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। আলঝেইমার রোগীদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়। যদিও এর কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। আমরা মস্তিষ্কের প্রোটিন সংক্রান্ত ত্রুটি সমাধানে কাজ করছি।’

আলঝেইমার হলো মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত নিঃশব্দ ঘাতক রোগ। আর তাই আলঝেইমারকে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতি হ্রাসের সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের শুরুতে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। পরিবার বা সহকর্মীদের নাম ভুলে যাওয়া বা ফোন নম্বর মনে রাখতে পারেন না তাঁরা। চিন্তাভাবনা, যুক্তি ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও কমে যায়। ফলে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনের শেষ দিকে পুরো ২৪ ঘণ্টা যত্নের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৫০ কোটি মানুষ ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত। গবেষণার তথ্যমতে, ৬৫ থেকে ৬৯ বছর বয়সী মাত্র এক শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে ৬৫ থেকে ৮৪ বছর বয়সীদের মধ্যে রোগটির সংক্রমণের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ। আর তাই ৮৫ বছরের বেশি বয়সী চারজনের মধ্যে একজনের ডিমেনশিয়া দেখা যায়। আক্রান্ত রোগীদের ডিএনএ পরীক্ষা করে তাঁদের মস্তিষ্কে ‘এপিওই৪’ নামের একটি জিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

আমাদের মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে থাকে বিটা-অ্যামাইলয়েড প্রোটিন। এটি মস্তিষ্ক পরিষ্কারের কাজ করে। তবে আলঝেইমারে আক্রান্ত মস্তিষ্ক ভালোভাবে পরিষ্কার করতে পারে না এই প্রোটিন। ফলে মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েড প্লেক নামের ব্লক তৈরি হয়ে কোষের কার্যকারিতা ব্যাহত করে। আরেকটি প্রোটিনের নাম টাউ প্রোটিন। এটি প্রাথমিকভাবে নিউরনের ভেতরে পাওয়া যায়। আলঝেইমারে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে এই প্রোটিন নিউরনের ভেতরে জমা হয়ে ব্লক তৈরি করে। এই দুটি প্রোটিনের মস্তিষ্কের কোষের যোগাযোগের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। ফলে প্রোটিনগুলোর কারণে মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষ নষ্ট হয়ে ব্যক্তির চিন্তা ও স্মৃতিশক্তিকে প্রভাবিত করে।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানী গিল লিভিংস্টোন বলেন, নতুন ধরনের ওষুধ তৈরি হচ্ছে। এসব ওষুধ নিয়ে আমরা খুবই আগ্রহী। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ওষুধটি পরীক্ষা করা হয়। নতুন ওষুধে আলঝেইমারের অগ্রগতি কিছুটা ধীর হয়ে যেতে দেখা গেছে। আরেকটি ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চলছে। এই ওষুধ আলঝেইমার রোগীদের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে দেয়।

২০২০ সালের ল্যানসেটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ডিমেনশিয়াতে শ্রবণশক্তিও হ্রাস পায়, যা অন্যদের সঙ্গে কথা বলার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এতে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্নতার দিকে চলে যায় রোগী। মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে এমন কাজে ব্যস্ত থাকলে এই রোগের ঝুঁকি কমে। ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ডিমেনশিয়া রোগের সমাধান করা সম্ভব।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট


শর্টলিংকঃ