“নেত্রী কী চিন্তা করে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছেন জানি না,” বললেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা


নিজস্ব প্রতিবেদক:

“নৌকা আমাদের প্রতীক। আমরা আশা করেছিলাম যে, এবার এই আসনে নেত্রী আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে মনোনয়ন দেবেন। কিন্তু তা না, মনোনয়ন পেলেন এমন একজন, যাকে আওয়ামী লীগের কেউই চায় না। নেত্রী কী চিন্তা করে নৌকার মনোনয়ন তাকে দিয়েছেন জানি না।” এভাবেই শুক্রবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ অডিটোরিয়ামে সাংবাদিকদের সামনে রাজশাহী-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা দলীয় মনোনয়নের সমালোচনা করেন।


শফিকুর রহমান বাদশা সমালোচনার সুরে আরো বলেন, ফজলে হোসেন বাদশা কেন নৌকা পেয়েছেন সেটা অন্য আলোচনা, যা এখানে করতে চাই না। কিন্তু আমরা কেউই এটা মানতে পারছি না। তাই, আমি প্রার্থী হয়েছি।

এই অডিটোরিয়ামে ওইদিন তার ‘কাঁচি’ প্রতীকের পক্ষে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের একটি অংশ নির্বাচনী সভা করেন। নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে কাঁচি প্রতীকের পক্ষে দলের সবাইকে নির্বাচনে নামার নির্দেশ দিয়ে এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, কেন্দ্র থেকে যাকে খুশি নৌকা দিক, আজ থেকে এই আসনে আমাদের মার্কা কাঁচি। মহানগর আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশা। তিনি আরো বলেন, বিগত সিটি নির্বাচনে যেসব কমিটি কাজ করেছে, সেসব কমিটি এবার কাঁচির পক্ষে কাজ করবে।

কাঁচি প্রতীকের নির্বাচনী কমিটির প্রধান সমন্বয় হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়ে মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, এটা আমাদের উপরে যিনি কেন্দ্রীয় নেতা আছেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য জননেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নির্দেশ। আমরা নৌকার নই, ফজলে হোসেন বাদশার বিপক্ষে কাঁচি প্রতীককে বিজয়ী করতে চাই। তাই আজ থেকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে আপনারা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য ভোট চাইবেন।

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ওয়ার্কার্স পার্টি তিনজনের পার্টি। তাদের কাছে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের যেতে হবে? অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রেসিডিয়াম মেম্বার আমাদের সাথে আছেন। নৌকার বিপক্ষে আছেন কি না জানতে চাইলে বলেন, তা জানি না। তবে ফজলে হোসেন বাদশার বিপক্ষে আছেন। আমরা তাকে হারাতে চাই। নৌকা হারলে মন খারাপ হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কারোরই খারাপ লাগবে না।

তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার দাবি করেন, দলীয় প্রধান যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তার পক্ষেই তারা থাকবেন। কারণ, তারা নৌকা প্রতীকের পক্ষে। নগর সভাপতির আয়োজন বা বক্তব্য নিয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে অন্য প্রশ্নের জবাবে বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের গুটিকয়েক নেতা হয়তো নৌকার বিপক্ষে, কিন্তু বেশিরভাগ নেতাকর্মীই নৌকার পক্ষে।

রাজশাহী-২ আসনে ১৪ দলের মনোনীত প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা দুঃখজনক এবং এই উদ্দেশ্যমূলক বিভাজন বিএনপি জামায়াতকে সুবিধা দেবে। তিনি আরো বলেন, বিএনপি জামাত এখন আবার আগুন দিচ্ছে, মানুষ মারছে। বোঝাই যাচ্ছে যে, নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ী হলেও সেই সরকারকে স্থিতিশীল থাকতে না দেয়ার নীল নকশা আছে তাদের। এই অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য দরকার। অথচ অনৈক্য সৃষ্টি হচ্ছে। তবে তিনিও দাবি করেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতা কর্মীরা তার সঙ্গে আছেন।

এ ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজশাহী-২ আসন নিয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমে কোনো কথা বলবেন না।

আরও পড়তে পারেন মহানগর আ.লীগ সভাপতি, বললেন, ‘নৌকার জন্য কাজ করা ম্যান্ডেটরি নয়’


শর্টলিংকঃ