পাসপোর্টের ‘খবর’ নেই


ইউএনভি ডেস্ক:

পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া এলাকার ব্যবসায়ী সুজন আহমেদ যাতায়াত কার্যক্রম শুরু হলেই ভারতে চিকিৎসা করাতে যাবেন। তাই নিজের পাসপোর্টটি তিনি তৈরি করে রাখতে চান। গত বৃহস্পতিবার তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নতুন পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু নতুন আবেদন জমা নেওয়া বন্ধ জানিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

শুধু যাত্রাবাড়ী পাসপোর্ট অফিস থেকেই নয়, দেশের কোনো কার্যালয় থেকেই মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বা ই-পাসপোর্টের নতুন আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে না। কবে থেকে আবেদন নেওয়া হবে সে তথ্যও পাচ্ছেন না নতুন পাসপোর্টপ্রত্যাশীরা। শিগগিরই নতুন পাসপোর্ট দেওয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে খবরও নেই পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে। এমন পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন লাখ লাখ নতুন পাসপোর্টপ্রত্যাশী।

করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৩ মার্চ থেকে পাসপোর্টের নতুন আবেদন নেওয়া বন্ধ রয়েছে। যদিও করোনা আতঙ্কের মধ্যেই সম্প্রতি সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোর কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার গতিও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তবে গতকাল রোববার পর্যন্ত পাসপোর্ট অফিসগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। অবশ্য করোনা সংকটের মধ্যেই এমআরপির রি-ইস্যু বা মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন জমা নেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। খুব প্রয়োজনে কিছু কিছু নতুন আবেদন জমাও নেওয়া হয়েছে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কবে থেকে নতুন আবেদন জমা নেওয়া শুরু হবে, সে সিদ্ধান্ত তারা এখনও নেননি। এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনাও পাননি।

তবে লোকজন এ ব্যাপারে প্রতিদিনই পাসপোর্ট অফিসে এসে খোঁজ নিচ্ছেন। ফেসবুকে পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন পেইজ ও গ্রুপগুলোতে প্রতিদিন শত শত মানুষ জানতে চাইছেন, নতুন আবেদন জমা নেওয়া হবে কবে। অনেকে এও বলছেন, রি-ইস্যুর জন্য আবেদন জমা দিয়েও সময়মতো পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছেন না। এমনকি করোনার আগে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে আবেদন করেও এখনও পাসপোর্ট হাতে পাননি কেউ কেউ।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরী রোববার সমকালকে বলেন, নতুন পাসপোর্টের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনকারীর আঙুলের ছাপ ও খুব কাছ থেকে ছবি নিতে হয়। ই-পাসপোর্টের জন্য চোখের মণি ও কয়েকটি আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পাশাপাশি দৈনিক অনেক মানুষের আঙুলের ছাপ বা চোখের মণি নিতে গিয়ে কর্মকর্তাদেরও সেই ঝুঁকিতে পড়তে হয়। এ জন্য নতুন আবেদন জমা নেওয়া বন্ধ রয়েছে।

অবশ্য মহাপরিচালক বলেন, যাতে দ্রুত নতুন আবেদন নেওয়া যায় সেজন্য তিনি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনা করবেন। চাহিদা এবং ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে কার্যক্রমটা দ্রুত চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে সারাদেশে প্রতিদিন ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার পাসপোর্টের জন্য নতুন ও রি-ইস্যু আবেদন জমা পড়ত। এর মধ্যে ঢাকার আগারগাঁওয়ে প্রতিদিন ১৮শ’ থেকে দুই হাজার আবেদন জমা নেওয়া হতো। সাড়ে চার মাসের বেশি সময় ধরে সেই কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বড় ধরনের জটের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন আবেদন জমা নেওয়া শুরু হলে সক্ষমতা অনুযায়ী সেই চাপ সামলানোও কঠিন হয়ে পড়বে।

সাধারণত জরুরি ফি দিয়ে সাত কর্মদিবসের মধ্যে এবং সাধারণ ফি দিয়ে ২১ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু চলমান সময়ে চাপ না থাকলেও রি-ইস্যু আবেদনের বিপরীতে বা আগে জমা নেওয়া আবেদনের বিপরীতে পাসপোর্ট সরবরাহেও কয়েক মাস লেগে যাচ্ছে। এর কারণ জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এমআরপি মেশিনগুলো প্রায় একযুগ আগের।

এসব মেশিনের সক্ষমতাও কমে এসেছে। এ ছাড়া পুরো কার্যক্রম ই-পাসপোর্টে চলে যাওয়ায় নতুন করে এমআরপির বই আমদানিতে ধীরগতি রয়েছে। পুরোনো মেশিন এবং বই সংকটের কারণে সময়মতো এমআরপি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া চাহিদার তুলনায় ই-পাসপোর্টেও পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। এ জন্য ই-পাসপোর্টে আবেদন করেও ছবি, চোখের মণি বা তথ্য নেওয়ার জন্য লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

সংশ্নিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিশেষ ধরনের একটি বদ্ধ কক্ষে এমআরপি প্রিন্ট করা হয়। সেখানে একাধিক বিশেষজ্ঞ দায়িত্ব পালন করলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গ্রুপ আকারে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীও করোনা আক্রান্ত। আবার আক্রান্তদের আশপাশের লোকজনকেও ছুটিতে পাঠাতে হয়েছে। এজন্য সবকিছু দ্রুত করাও সম্ভব হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্টও সরবরাহ করা যাচ্ছে না।


শর্টলিংকঃ